বাঘা বাঘা নেতাদের রেখে প্রার্থী মনোনয়নে শেখ হাসিনার চমক

17

কাজিরবাজার ডেস্ক :
শূন্য হওয়া ঢাকা, সিলেট ও কুমিল্লার তিনটি সংসদীয় আসনে প্রার্থী মনোনয়নে রীতিমতো চমক দিলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিন আসনে বাঘা বাঘা বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের পরিবর্তে তৃণমূলের মাঠের তিন পরীক্ষিত নেতাকে বেছে নিয়ে করেছেন নৌকার প্রার্থী। শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় শূন্য এই তিন আসনে ৯৪ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে দলীয় একক প্রার্থিতা চূড়ান্ত করে তা ঘোষণা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের সংসদীয় বোর্ডের সভা থেকে রাজধানীতে আসলামুল হক আসলামের মৃত্যুতে শূন্য ঢাকা-১৪ আসনে নৌকার প্রার্থী করা হয়েছে আগা খান মিন্টুকে। তিনি মিরপুর শাহআলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি। সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু’র মৃত্যুতে শূন্য কুমিল্লা-৫ আসনের বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসেম খান এবং মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে শূন্য সিলেট-৩ আসনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান।
বৈঠক সূত্র জানায়, সংসদীয় বোর্ডের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমগুলোকে সক্রিয় করে সারাদেশে তৃণমূলে সংগঠনের গতিশীলতা বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী করে গড়ে তোলার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে ফরিদপুর আওয়ামী লীগে সৃষ্ট গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণেরও নির্দেশ দেন তিনি। সংগঠনের তৃণমূলে গতিশীলতা বাড়াতে ও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের লক্ষ্য দ্রুতই দলের সাংগঠনিক টিমগুলো গঠনের কাজ শুরু করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সূত্রটি আরও জানায়, নৌকার প্রার্থী প্রসঙ্গে সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে বলা হয়, ঢাকা মহানগরের ঢাকা-১৪ আসনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে ঢাকায় আদিবাসিন্দা প্রয়োজন। এছাড়া দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকে মূল্যায়নের জন্যই আগা খান মিন্টুকে বেছে নেয়া হয়েছে। আর কুমিল্লা-৫ আসনে বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসেম খান উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু দলেরই একটি গ্রুপ তাকে হারিয়ে দিয়েছে বলে কেন্দ্রের কাছে তথ্য রয়েছে। সেজন্যই দলের এই ত্যাগী নেতাকে কুমিল্লা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমু এমপি, তোফায়েল আহমেদ এমপি, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, কাজী জাফরউল্লাহ, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি, লেঃ কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাম এমপি।
বৈঠক শেষে দলের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা-১৪ আসনে আগা খান মিন্টু, সিলেট-৩ আসনে হাবিবুর রহমান এবং কুমিল্লা-৫ আসনে আবুল হাসেম খানকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রদান করা হয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবার দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে সাক্ষাতকার নেয়া হয়নি। এর পরিবর্তে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আবেদন, জীবন বৃত্তান্ত, মাঠ জরিপ রিপোর্ট ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করে দলের ওই তিন তৃণমূল নেতাকে নৌকা প্রতীক নিয়ে উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই এই তিনটি আসনে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৫ জুন মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিন। আগামী ২৮ জুলাই এই তিনটি আসনে উপ-নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, এই তিন আসনের জন্য মোট ৯৪ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। ঢাকা-১৪ আসনে তিনবারের সংসদ সদস্য আসলামুল হকের আসনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন তার স্ত্রীসহ ৩৪ জন। তার মধ্যে শাহআলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আগা খান মিন্টুকে বেছে নিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সিলেট-৩ আসনেও প্রয়াত মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর স্ত্রীসহ ২৫ জন দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে শিকে ছিঁড়েছে আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির সদস্য হাবিবুর রহমানের। অন্যদিকে সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুর স্ত্রীসহ ৩৫ জন কুমিল্লা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। তাদের মধ্যে বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসেম খান পেলেন ভোটের ছাড়পত্র।
‘সাংগঠনিক টিম’ গঠনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ॥ সংগঠনের তৃণমূলে গতিশীলতা বাড়াতে ও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের লক্ষ্যে জেলা/মহানগর/উপজেলা ও থানা/ পৌর শাখার নেতাদের সমন্বয়ে ‘সাংগঠনিক টিম’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের এই নির্দেশনার কথা জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১০ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের সকল শাখায় সংগঠনের গতিশীলতা বৃদ্ধি এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমকে আরও জোরদার করতে সারাদেশে সাংগঠনিক টিম গঠনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন। প্রথম নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সংগঠনে সারাদেশের সকল জেলা/মহানগর শাখার অধীন উপজেলা/থানা/পৌর শাখা আওয়ামী লীগের গতিশীলতা বৃদ্ধি এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে জেলা/মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাংগঠনিক টিম গঠন করতে হবে। উক্ত সাংগঠনিক টিম সংশ্লিষ্ট জেলা/মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা/থানা/পৌর শাখার বিদ্যমান সাংগঠনিক সমস্যাসমূহ দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
দ্বিতীয় নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সকল উপজেলা/থানা/পৌর শাখার অধীনে ইউনিয়ন/ওয়ার্ড/ইউনিট আওয়ামী লীগের গতিশীলতা বৃদ্ধি এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে উপজেলা/থানা/পৌর আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাংগঠনিক টিম করবেন। উক্ত সাংগঠনিক টিম সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা/পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিয়ন/ওয়ার্ড/ইউনিট শাখার বিদ্যমান সাংগঠনিক সমস্যাসমূহ দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এই সাংগঠনিক নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে।