সীমান্তবর্তী আট জেলা লকডাউনের সুপারিশ ॥ পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত- জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী

22

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী আট জেলা লকডাউনের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটি। তবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, সংক্রমণ পরিস্থিতি বুঝে সুপারিশ করা জেলাগুলোতে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জেলাগুলোর ওপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে জানিয়েছেন তিনি।
আশঙ্কাজনক হারে সংক্রমণ বাড়ার কারণে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির লকডাউনের সুপারিশ করা সীমান্তর্বর্তী জেলাগুলো হলো: চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও খুলনা। সব জেলাই রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। জেলাগুলোর সঙ্গে ভারতের রয়েছে দীর্ঘ অরক্ষিত সীমান্ত। দুই বিভাগেই গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের ঘটনা ঘটেছে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর ওপর আমরা বিশেষ নজর রেখেছি, যদি সেখানে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, ওই জায়গাগুলোতে চলাফেরার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারব। বিষয়গুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আপাতত স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি বুঝে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। ইতোমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থানীয়ভাবে লকডাউন দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতের বিষয়টির আশঙ্কা থেকেই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সেটা আমরা করছি। সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলায় স্থানীয়ভাবে বিধিনিষেধ দেয়ার বিষয়ে প্রস্তাব এসেছে, আমরা সেটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি। সেই বিষয়ে আমরা হয়ত জানাব, কী করা যেতে পারে।
রবিবারের স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার সকাল আটটা থেকে রবিবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় রাজশাহী বিভাগে ৩৩৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এটি গত দেড় বছরে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। এ নিয়ে বিভাগে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩৫ হাজার ১৭৫। এর আগে ২৮ মে বিভাগে সর্বোচ্চ ২৭৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে করোনার নতুন ‘হটস্পট’ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ১৬১ জন। এ ছাড়া রাজশাহীতে ৮২ জন, নওগাঁয় ৪, নাটোরে ২৩, জয়পুরহাটে ২১, বগুড়ায় ২২, সিরাজগঞ্জে ৩ ও পাবনায় ২১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
খুলনা বিভাগে সংক্রমণ বাড়ল : খুলনা বিভাগে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় ২৩২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরে এটাই একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। এর আগে গত ১৯ এপ্রিল ২২০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। নতুন ২৩২ জন নিয়ে বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও ৩৪ হাজার ছাড়াল। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন পাঁচজন। আগের দুদিনও পাঁচজন করে মারা গেছেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ১০ জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে মোট ৩৪ হাজার ৮৫ জন, মারা গেছেন ৬৩৮ জন। এর মধ্যে গত ৩০ দিনে ২ হাজার ৯২৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে মারা গেছেন করোনায় সংক্রমিত ৬৬ জন।
২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত ব্যক্তির মধ্যে খুলনা জেলার ৫৩ জন (নগরেই ৪১ জন)। এ ছাড়া বাগেরহাটের ৭৮, যশোরের ৫৭, সাতক্ষীরায় ২৪, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গায় ১ জন করে, ঝিনাইদহের ৫ জন ও কুষ্টিয়ার ১৩ জন রয়েছেন। এই সময় মাগুরা ও নড়াইলে কোন করোনা রোগী শনাক্তের তথ্য নেই।
২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে যশোরের দুজন এবং কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে একজন করে রয়েছেন। বিভাগে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ৬৩৮ জনের মধ্যে খুলনা জেলার ১৭২ জন (নগরেই ১৩৬ জন), কুষ্টিয়ার ১১১, যশোরের ৮০, চুয়াডাঙ্গার ৬১, ঝিনাইদহের ৫৫, সাতক্ষীরার ৪৬, বাগেরহাটের ৪১, নড়াইলের ২৬, মাগুরার ২৩ এবং মেহেরপুরের ২৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির সদস্য জামিল ফয়সাল বলেন, শনিবার বৈঠক করে ভারতের সীমান্তবর্তী আট জেলায় যেখানে সংক্রমণ বেশি সেসব এলাকায় লকডাউনের সুপারিশ করা হয়েছে। আমাদের চিন্তার মধ্যে ঢাকা এখন নেই। ঢাকা মোটামুটি করোনা নিয়ন্ত্রণে। এখন সিলেট, কক্সবাজার, ফেনী আমাদের টার্গেটে রয়েছে। সংক্রমণ পর্যবেক্ষণে এগুলোতেও পর্যায়ক্রমে লকডাউন করা হবে।
উল্লেখ্য, করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ২৪ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউন ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন, যা এখনও চলছে। বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়ানো করোনাভাইরাসের ভারতে উদ্ভূত ধরনটি বাংলাদেশেও মিলেছে।
করোনাভাইরাসের এ ধরনটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয়া হয়েছে বি.১.৬১৭। মিউটেশনের কারণে এর তিনটি ‘সাবটাইপ’ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া গেছে বি.১.৬১৭.২ ধরনটি।
ভারতে প্রথম এ মিউট্যান্ট শনাক্ত হয়েছিল বলে একে ভারতীয় ধরন বলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অন্তত ৪৪টি দেশে করোনাভাইরাসের এই ধরনটি ছড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে চিহ্নিত করেছে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ (ভিওসি) হিসেবে।
ভারত থেকে আসা তিন বাংলাদেশীর দেহে করোনাভাইরাসের এই ধরন শনাক্তের কথা গত ৮ মে প্রথম জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ পর্যন্ত ২৩ জনের শরীরে করোনার ভারতীয় ধরন পাওয়া গেছে।