নগরীর ২৫টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, ৬টি ভবন ১০ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ

20
ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি এড়াতে নগরীর সকল ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট আগামী ১০ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিচ্ছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

স্টাফ রিপোর্টার :
পরপর দু’দিন দফায় দফায় সিলেটে ভূমিকম্পন অনুভূত হওয়ায় নগরীর বাড়ী-ঘর, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, মার্কেট ও বিপণীবিতানসহ ২৫টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে সিলেট সিটি কপোরেশন কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি গতকাল রবিবার সিলেট নগরীর ৬টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও মার্কেট ১০ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভূমিকম্পের ডেঞ্জারজোন হিসেবে পরিচিত সিলেটে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবনগুলো। বড় ধরণের ভূমিকম্প হলে এসকল ভবন ভেঙ্গে পড়ে ব্যাপক প্রাণহানীর আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বারবার নোটিশ দেয়ার পরও মালিকরা ভবনগুলো ভাঙছেন না।
নানা অজুহাতে তারা ভবনগুলো ভাঙ্গা থেকে বিরত রয়েছেন। সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে নগরীতে এরকম ২৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করেছে। যার মধ্যে সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন ভবনও রয়েছে। ২০১৯ সালে সার্ভে করে নগরীর ২৩টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর বাইরে গত শনিবার ভূমিকম্পে নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় হেলে পড়া আরো দুটি ভবনকে নতুন করে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, ২০১৯ সালে নগরীর ২৩টি বহুতল ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ভবনগুলো হচ্ছে- জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উত্তর পাশের কালেক্টরেট ভবন-৩, জেলরোডস্থ সমবায়

ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি এড়াতে নগরীর সকল ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো আগামী ১০ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিচ্ছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

ব্যাংক ভবন, একই এলাকায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাবেক কার্যালয় ভবন, সুরমা মার্কেট, বন্দরবাজারস্থ সিটি সুপার মার্কেট, জিন্দাবাজারের মিতালী ম্যানশন, দরগাগেইটের হোটেল আজমীর, বন্দরবাজারের মধুবন সুপার মার্কেট, টিলাগড় কালাশীলের মান্নান ভিউ, শেখঘাট শুভেচ্ছা-২২৬ নম্বর ভবন, যতরপুরের নবপুষ্প ২৬/এ বাসা, চৌকিদেখির ৫১/৩ সরকার ভবন, জিন্দাবাজারের রাজাম্যানশন, পুরানলেনের ৪/এ কিবরিয়া লজ, খারপাড়ার মিতালী-৭৪, মির্জাজাঙ্গাল মেঘনা এ-৩৯/২, পাঠানটুলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর বাগবাড়ির একতা ৩৭৭/৭ ওয়ারিছ মঞ্জিল, একই এলাকার একতা ৩৭৭/৮ হোসেইন মঞ্জিল, একতা-৩৭৭/৯ শাহনাজ রিয়াজ ভিলা, বনকলাপাড়া নূরানী-১৪, ধোপাদিঘীর দক্ষিণ পাড়ের পৌরবিপণী মার্কেট ও ধোপাদীঘিরপারের পৌর শপিং সেন্টার। এর মধ্যে পুরানলেনের ৪/এ কিবরিয়া লজটি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়ে মেরামত করা হয়েছে।
এদিকে, নগরীর ৬টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও মার্কেট আগামী ১০ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি এড়াতে এই নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়াও একই সময়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অন্যান্য ভবনের বাসিন্দাদেরও অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়েছে।
গতকাল রবিবার বিকেল ৩ টায় সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নগরীর কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটে গিয়ে নির্দেশনা দিয়ে আসেন। এসময় তার সাথে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যরা ছিলেন। গত শনিবার ও গতকাল রবিবার কয়েক দফায় নগরীতে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে সিলেটে আগামী এক সপ্তাহ বড় ধরণের ভূমিকম্পের শংকা রয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী প্রস্তুতি হিসেবে অভিযানে নেমে সিলেট সিটি কর্পোরেশন।
ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট পরিদর্শন করে ব্যবসায়ীদের আগামী ১০ দিন মার্কেট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানান মেয়র আরিফ। এসময় তিনি জানান, নগরীতে দফায় দফায় ভূমিকম্পের কারণে সিলেটে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এসব ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি এড়াতে ঝুুঁকিপূর্ণ সকল মার্কেট অন্তত ১০ দিন বন্ধ রাখতে হবে।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, নগরীর জিন্দাবাজারস্থ মিতালী ম্যানশন, রাজা ম্যানশন ও বন্দরবাজারের সিটি সুপার এবং মধুবন সুপার মার্কেট আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে চিহ্নিত। এভাবে নগরীর সকল ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ও ভবনের কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্টদের আগামী ১০ দিন বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হবে। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ বাসাবাড়ির বাসিন্দাদেরও আগামী ১০ দিন অন্যত্র থাকতে হবে।
মেয়রের নির্দেশনার পর এই বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে বৈঠকে বসেছেন মার্কেটগুলোর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা।