ভিয়েতনামে করোনার নয়া ধরন শনাক্ত

3

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারত ও ব্রিটেনে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনার দুটি পৃথক ধরনের মিশ্রণে ভিয়েতনামে এ রোগের আরও একটি ধরন শনাক্ত হয়েছে। ধরনটি বাতাসের সাহায্যে দ্রুত ছড়াতে পারে। শুধু তাই নয় ধরনটির সংক্রমণ ক্ষমতাও অন্যান্য ধরনের চেয়ে অনেক বেশি। শনিবার ভিয়েতনামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নগুয়েন থানহ লং এ খবর নিশ্চিত করেন।
এদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অতিছোঁয়াচে এ রোগে বিশ্বব্যাপী ১৭ কোটি ২১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ৩৫ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৯ জন। সুস্থ হয়েছে ১৫ কোটি ২০ লাখ ৭০ হাজার ৮৯১ জন। খবর বিবিসি, এপি ও অন্যান্য ওয়েবসাইটের।
ভিয়েতনামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নগুয়েন থানহ লং বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত এক রোগীর জিনোম সিকোয়েন্সিং করে আমরা করোনার নতুন একটি ধরন শনাক্ত করেছি। ধরনটি ভারত ও যুক্তরাজ্যে প্রথম শনাক্ত হওয়ার ধরন দুটির মিশ্রণ। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, এটা মূলত ভারতীয় ধরন এবং এটির যে মিউটেশন হয়েছে তা যুক্তরাজ্যে শনাক্ত নতুন ধরনের মতো। তিনি আরও বলেছেন, ‘ল্যাবরেটরি গবেষণায় আরও দেখা গেছে, বিদ্যমান ধরনের চেয়ে করোনার নতুন ধরনটি আরও দ্রুত সংক্রমণ ছড়াতে পারে এবং তার রূপও দ্রুত বদলাতে পারে। এ কারণেই দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে এখন করোনা সংক্রমণের হার উর্ধমুখী। ভিয়েতনামের আগেই করোনার সাতটি ধরন শনাক্ত হয়েছে। এগুলো হলো বি.১.২২২, বি.১.৬১৯, ডি৬১৪জি, বি.১.১.৭ (ব্রিটেনের ধরন), বি.১.৩৫১, এ.২৩.১ এবং বি.১.৬১৭.২ (ভারতীয় ধরন)। এখন আরও একটি ধরন শনাক্ত হওয়ায় দেশটিতে উদ্বেগ বেড়েছে।
করোনা মোকাবেলায় সফলতার জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। তবে নতুন করে সংক্রমণ উর্ধমুখী হওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে।
করোনার উৎস নিয়ে রাজনীতি নয় : করোনার উৎস খোঁজা নিয়ে রাজনীতি না করার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সম্প্রতি চীনের উহানে ল্যাব পর্যবেক্ষণে ওয়াশিংটনের প্রস্তাব বেজিং নাকচ করে দিলে বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মাইক রায়ান জানান, করোনার উৎস খুঁজে বের করতে আরও গবেষণার প্রয়োজন। জেনেভায় নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, আমি সবাইকে অনুরোধ করব, এ বিষয়ে বিজ্ঞান থেকে রাজনীতিকে দূরে রাখতে। করোনার উৎস খুঁজতে গিয়ে পুরো বিষয়টিকে রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে। পাল্টাপাল্টি দোষারোপ না করে আপনারা যদি চান বিজ্ঞানীরাই বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে, তবে তাদের কাজ করার জন্য একটি নিরপেক্ষ পরিবেশ দেয়ার চেষ্টা করুন। যাতে তারা বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারে, ভাইরাসটির উৎস খুঁজে বের করতে পারেন। এক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে মতামত চাওয়া হবে। এর আগে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ তোলা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানান, এখন পর্যন্ত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দুটি সম্ভাব্য উৎসের কথা বললেও এ বিষয়ে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়নি। ২০১৯ সালের শেষের দিকে চীনের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত হয় কোভিড-১৯।
৭০ শতাংশ পর্যন্ত টিকা দিতে না পারলে মহামারী শেষ হবে না : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপীয় বিষয়ক পরিচালক সতর্ক করে বলেছেন, ৭০ শতাংশ লোককে টিকার আওতায় না আনতে পারলে মহামারীর অবসান ঘটানো যাবে না। ইউরোপে টিকা দেয়ার গতি খুব ধীর হওয়ার প্রেক্ষাপটে শুক্রবার তিনি এ সতর্কতা উচ্চারণ করেন। ডব্লিওএইচও’র ইউরোপ বিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক হ্যান্স ক্লুগ এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ন্যূনতম ৭০ শতাংশ লোককে আমরা টিকা দিতে না পারলে মহামারী শেষ হবে না। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন নিয়ে তার মূল উদ্বেগ। ক্লুগ বলেন, আমরা জেনেছি বি.১৬১৭ (ভারতীয় ধরন) বি.১১৭ (ব্রিটিশ ধরন)-এর চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক। আগের যে কোন ধরনের চেয়ে ভারতীয় ধরন খুব বেশি দ্রুত ছড়িয়েছে। তিনি টিকা দেয়ার গতিকে আরও দ্রুত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ভারতে ৪৫ দিনের মধ্যে সবচেয়ে কম শনাক্ত : ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে কম করোনা শনাক্ত হয়েছে। কমেছে মৃত্যুও। এ সময়ের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৯২১, মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৬১৭ জনের। শনিবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ৪৫ দিনের মধ্যে ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে কম করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে দৈনিক সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা রেকর্ড ৪ লাখ ১৪ হাজার হয়েছিল। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৬৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। একই সময় দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ৩ হাজার ৬৬০ জন। সর্বশেষ এই তথ্য নিয়ে ভারতে করোনায় সংক্রমিত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ কোটি ৭৭ লাখ। ভারতে করোনায় মারা গেছে প্রায় ৩ লাখ ২১ হাজার।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ তারা ১০৮ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করছে। এ জন্য টিকা আমদানির সম্ভাবনা যাচাই করে দেখছে সরকার।