অনলাইনের বাজারে ডাকঘর পিছিয়ে থাকলে চলবে না – প্রধানমন্ত্রী

15
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে ডাক ভবন, আগারগাঁ প্রান্তে ডাক অধিদপ্তরের নবনির্মিত সদর দপ্তর ‘ডাক ভবন’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্মারক ডাকটিকিটের অবমুক্ত করেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে ডাকঘর সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। এখন অনলাইন বাজারে কেনাবেচা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কাজেই ডাকঘর পিছিয়ে থাকলে চলবে না। ডাক বিভাগকে এ ব্যাপারে আরও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ ডাক বিভাগের জন্য এটাও একটা বড় ব্যবসা। ভবিষ্যতে ডাকের মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য, ফলমূলসহ বিভিন্ন পচনশীল পণ্যও পাঠানো যাবে। এ ধরনের পণ্য পরিবহন সেবা দিতে কুলিং চেম্বার বিশিষ্ট গাড়ি ও গুদামঘরসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নবনির্মিত হারিয়ে যেতে বসা ডাকবাক্সের আদলে ১৪ তলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন ‘ডাক ভবন’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ডাক অধিদফতরের নবনির্মিত সদর দফতর ডাক ভবনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
এ উপলক্ষে একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করা হয়, অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিশেষ ডাকটিকেটটি অবমুক্ত করেন। আগারগাঁও প্রান্তে অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আফজাল হোসেন বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য একে এম রহমতুল্লাহসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস। পিএমও সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়াসহ গণভবন এবং পিএমও’র উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আধুনিকায়নের মাধ্যমে ডাক সেবা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডাকের সেবাটাকে একেবারে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। সেই ব্যবস্থাটা এখনই নিতে হবে। নবনির্মিত ডাক ভবন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রেখেই উন্নতমানের এই ভবন হয়েছে, যাতে গ্রাহক সেবা বৃদ্ধি পায়। আর আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার যাতে হয় সেই ব্যবস্থা নিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘আসলে লেটার বক্স (ডাক বাক্স) সবাই ভুলে যাচ্ছে। এখন তো সবাই হয় এসএমএস করে বা ই-মেইল করে বা মেসেজ পাঠায়। চিঠি লেখাতো এখন অনেকটাই নাই। সেটা যেন মানুষ ভুলে না যায়, এই বিল্ডিংটা দেখে সেটা মনে হবে, নাহ একটা লেটার বক্স আছে। দৃষ্টিনন্দন এই লেটার বক্স সদৃশ্য ভবন দেখলে চিঠি পাঠানোর কথা মনে পড়বে।’ ভবনে চিঠিপত্র ঝুলছে, চিঠি যাচ্ছে-আসছে-এমন কিছু চিত্র যোগ করার জন্যও সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
ভবিষ্যতে ডাকের মাধ্যমে পচনশীল খাদ্য পাঠানোর উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পচনশীল জিনিস অর্থাৎ খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু ফলমূল, তরি-তরকারি এগুলোও যেন ডাকের মাধ্যমে পাঠানো যায়। আমি মনে করি এখানে রান্না করে আরেক জায়গায় খাবার পাঠাবো বা কোন আত্মীয়ের কাছে পাঠাবো- সেটাও যেন পাঠাতে পারি। এজন্য কুলিং সিস্টেমটা দরকার। সেই ধরনের টেমপারেচার বা ফ্রিজিং সিস্টেম করে দেয়া, যাতে সেখানে জিনিসটা নষ্ট হবে না এবং যার হাতে যাবে তার কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা।
তিনি বলেন, সেই ধরনের গাড়ি কিনে এই ডাকের মাধ্যমে মানুষ যেন সেবা পায় সে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। এখানে শুধু গাড়ি কিনলে হবে না, এখানে চেম্বার দরকার, সেজন্য ডাকঘরগুলোতে কুলিং সিস্টেমযুক্ত চেম্বার যাতে তৈরি হয় তার ব্যবস্থা, অর্থাৎ ওয়্যার হাউস নির্মাণ হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রত্যেকটা উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ রকম সেন্টার থাকবে। সেখান থেকে যারা নিয়ে যাবে, নিয়ে যাওয়ার জন্য ওই কুলিং সিস্টেম। এখন তো যথেষ্ট পোর্টেবল বক্স পাওয়া যায়, কাজেই পৌঁছে দিতে পারবে। সেভাবেই ডাকের সেবাটা একেবারে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। সেই ব্যবস্থাটাও এখন নিতে হবে। ধাপে ধাপে আমরা এগোচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ডাক বাছাই তরান্বিতকরণ ও পচনশীল দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য কুলিং চেম্বারের সুবিধা সম্বলিত ওয়্যারহাউস যুক্ত ১৪টি অত্যাধুনিক মেইল প্রসেসিং ও লজিস্টিক সার্ভিস সেন্টার নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ হচ্ছে। এটাকে প্রথমে আমরা জেলা ও বিভাগীয় শহরে করে দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য থাকবে, ডাক বিভাগকে আমরা বলব আপনারা এ রকম প্রজেক্ট নেবেন একেবারে উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অর্থাৎ ডাকঘর যেখানে যেখানে আছে সেখানে এই ব্যবস্থাটা থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলা ও বিভাগীয় সদরে আধুনিক মেইল প্রসেসিং, কুলিং সুবিধাযুক্ত স্টোরেজ, ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এবং গ্রাহকবান্ধব ৩৮টি মডেল ডাকঘর নির্মাণ কাজে সরকার হাত দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাইবো সারা বাংলাদেশে এটা করে দিতে। তাহলে মানুষ বিশেষ করে ঘরে বসে অনেকে কাজ করে পয়সা উপার্জন করতে পারবে। মানুষের কর্মসংস্থান যেমন হবে, মানুষ সেবাটাও পাবে। সেই ব্যবস্থাটা আমাদের করতে হবে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমরা চুক্তি করছি। ইউনিভার্সেল পোস্টাল ইউনিয়নের রূপরেখার আওতায় দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ডাক বিভাগের মাধ্যমে বহুমুখী সেবা দিতে হবে। ডাক সিস্টেম এটা শুধু ডিজিটালাইজড করা না, আরও সেবা মানুষকে যেন দিতে পারে সে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা ১১৮টি মেইল গাড়ি সংযোজন করেছি। তাছাড়া গাড়ি চালানোর জন্য নারী-পুরুষ তাদের ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। এখন বিশেষ করে করোনাভাইরাসের পর আপনারা জানেন এখন বেশিরভাগই অনলাইন সেবা চলছে, ক্রয়-বিক্রয় চলছে। যেহেতু অনলাইন সেলিং জনপ্রিয়তা লাভ করছে, কাজেই ডাকঘর পিছিয়ে থাকলে চলবে না। ডাক বিভাগকে এই ব্যাপারে আরও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
ডাকঘরে কর্মরত ডাক কর্মীদের সম্মানী ভাতা বাড়ানো প্রসঙ্গে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, গ্রামীণ ডাকঘরে কর্মরত ডাক কর্মীদের সম্মানী ভাতা বাড়িয়েছি। ২০১৩ সালে এক্সটা ডিপার্টমেন্টাল সাব পোস্টমাস্টার, এক্সটা ডিপার্টমেন্টাল এজেন্ট, এক্সটা ডিপার্টমেন্টাল ডেলিভারি এজেন্ট ও এক্সটা ডিপার্টমেন্টাল মেইল ক্যারিয়ারদের নির্ধারিত মাসিক ভাতা ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ৬৫০ টাকা, ১ হাজার ২৬০ টাকা, ১ হাজার ২৩০ টাকা এবং ১ হাজার ১৮০ টাকা। যা পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে ২০১৮ সালে মাসিক ভাতা নির্ধারণ করে দিয়েছি যথাক্রমে ৫ হাজার ৮৪১ টাকা, ৪ হাজার ৪৬০ টাকা, ৪ হাজার ৩৫৪ টাকা এবং ৪ হাজার ১৭৭ টাকা।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা ঠিক যে, বর্তমান যুগে এ টাকাটা যথেষ্ট না। এই ক্ষেত্রে আমার মনে হয় ডাক বিভাগও কিছু ব্যবস্থা নিতে পারে। যারা কাজ করছে তাদের কোন ধরনের ইনসেনটিভ, ডাক বিভাগ যে লাভ করবে সেটার ছোট একটা অংশ ব্যবস্থা করতে পারে। সেটা মনে হয় ভাল হয়। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যেটুকু করার দরকার সেটা তো করবই এবং আমরা করে যাচ্ছি। পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এমনভাবে সবকিছু ডিজিটালে রূপান্তর করছি যেখানে আমাদের সামাজিক উদ্যোক্তা এবং প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত নতুনভাবে কাজের সুযোগ হচ্ছে এবং মানুষ অনেক ধরনের সেবা সেখান থেকে নিতে পারছে। ডিজিটাল সেন্টার থেকে যেমন সেবা নিচ্ছে, তেমনি ডাকঘর ডিজিটাল সেন্টার থেকেও তারা সেবা নিতে পারে। ডাক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন অসুবিধা দূর করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।