ছেলের মৃত্যুর ১২ ঘন্টা পর মায়ের মৃত্যু

11

রাজনগর থেকে সংবাদদাতা :
জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন সোহেল বকস (৩২)। প্রথমদিকে পাত্তা না দিলেও হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এরপর চিকিৎসা নিতে গেলে দেখা যায় কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে তার। রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর খবরে রাজনগর উপজেলায় যেন শোকের ছায়া নেমে আসে। তবে মায়ের কাছে পুত্রশোকটা যে আরো গভীর ছিল তার প্রমাণ দিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন তার মা। ছেলের মৃত্যুর ১২ ঘন্টা না যেতেই পুত্রশোকে স্ট্রোক করে মারা যান তার মা দোলবাহার বেগম (৬২)। একটি দাফন শেষ করে একই পরিবারের জন্য আরেকটি কবর খুঁড়তে হয়েছে এলাকাবাসীকে। হৃদয়বিদারক এই ঘটনা ঘটেছে রাজনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাঠানটুলা গ্রামে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রমজান মাসের শেষের দিকে জ্বর-সর্দি, ডায়রিয়া সহ নানা উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও সোহেল বকস (৩২) অবহেলায় চিকিৎসা নেননি। মে মাসের মাঝামাঝি তার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ভর্তি করা হয় মৌলভীবাজারের একটি হাসপাতালে। কোভিড টেস্টে তার পজেটিভ আসে। তবে এরই মধ্যে ফুসফুসের ৮০-৮৫ ভাগ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায়। পরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় সিলেটে। সেখানে চিকিৎসার পর কোভিড টেস্টে তার নেগেটিভ আসে। এর দুয়েকদিনের মধ্যে পরিবারের অন্য সদস্যদের কোভিড টেস্ট করালে তার বাবা, মা, ভাই ও ভাবীর করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। গত শনিবার তার বাবা, মা, ভাই ও ভাবীর করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসায় হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনা হয়। কিন্তু যত সময় যাচ্ছিল তত সংকাটাপন্ন হচ্ছিল সোহেল বকসের অবস্থা। তাকে রাখা হয় লাইফ সাপোর্টে। রবিবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে সিলেট উইমেনস মেডিকেল কলেজের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সকল শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরলে উপজেলা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। সন্ধ্যা ৬ টার দিকে জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। সোহেল বকস রাজনগর বাজারের বকস মোটরসের স্বত্ত্বাধিকারী ছিলেন।
এদিকে পুত্রশোকে রাত পৌনে ৯ টার দিকে স্ট্রোক করে সোহেল বকসের মা দোলবাহার বেগম মারা গেছেন। একটি শোক সইবার আগেই আরেকটি শোকে পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ১২ ঘন্টার কম ব্যবধানে একই পরিবারের দুইজনের মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজনগর উপজেলায়। রাত ৩ টার দিকে যানাজা শেষে তাকেও পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সোহেল বকসের চাচাতো ভাই মুস্তাকিম বকস শিমুল বলেন, চাচাতো ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে পুরো পরিবার শোকস্তব্ধ হয়েছিলেন। সন্ধ্যায় চাচাতো ভাইয়ের দাফন শেষ হওয়ার কিছুক্ষন পর আমার চাচী স্ট্রোক করেন। তাকে হাসপাতালে নেয়ার মতো আমরা সুযোগ পাইনি। একজনের শোক কাটিয়ে উঠার আগেই আরেকজনের মৃত্যু শোক সইতে হচ্ছে পরিবারকে।