দুর্দিনে প্রাণী সম্পদ খাত

13

করোনাভাইরাসের ছোবলে পড়ে পোশাক ও চামড়া শিল্পসহ ছোট-বড় শিল্পকারখানাই শুধু বিপর্যস্ত হয়নি, বরং সমূহ বিপদে পড়েছে কৃষিখাত। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে সার্বিকভাবে কৃষি ও কৃষিপণ্যÑ ধান-পাটের চাষাবাদসহ বোরো মৌসুমে কৃষি শ্রমিকের সঙ্কট, মৌসুমী ফুল-ফল চাষী ও ব্যবসায়ী, মৎস্য চাষ ও জেলে সম্প্রদায়, কামার, কুমার, তাঁতি সম্প্রদায়, সর্বোপরি পোল্ট্রি, ডেইরি ও প্রাণী সম্পদ খাত। সারাদেশ গত দু’বছর কার্যত লকডাউনে থাকায় এবং মুজিব শতবর্ষ, স্বাধীনতা দিবস, বাংলা নববর্ষসহ জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো পালন ব্যাহত ও বিঘিœত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রায় সবারই পথে বসার উপক্রম ঘটেছে। তবে এ মুহূর্তে সর্বাধিক বিপদে আছে পোল্ট্রি ও গবাদিপশু খামার শিল্প। ডিম ও দুধের বাজারজাতকরণের সমস্যার কারণে এই দুটি খাতে প্রায় ধস নেমে এসেছে। মুরগির বাচ্চা বিক্রি না হওয়ায় ছানাগুলো জ্যান্ত ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। ডিমের ক্রেতা নেই বললেই চলে। আর খামারিরা দুধ বিক্রি করতে না পারায় দুধ ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছে। সরকার অবশ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর জন্য মাত্র ৪ শতাংশ সুদে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে, যার তদারকিতে থাকবে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত পাঁচটি প্রণোদনা প্যাকেজের বাইরে পরিচালিত হবে এ তহবিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে গঠিত তহবিল থেকে মাত্র ১ শতাংশ সুদ হারে টাকা পাবে ব্যাংকগুলো, যাতে তারা কৃষি খাত, পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্পে প্রণোদনা দিতে পারে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে। তবে এ ঋণ বণ্টন নিয়ে যেন কোন অবস্থাতেই কোনরকম দুর্নীতি, অনিয়ম না হয় এবং প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে এই ঋণ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে ব্যাংকগুলোকে।
দেশ হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু পালনে প্রায় স্বনির্ভর হয়ে উঠেছে। মাথাপিছু দুধ-ডিম, মাংস-মাছ তথা প্রোটিনের ঘাটতিও কমছে ক্রমশ। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে গুঁড়া দুধ আমদানি করতে হয়। তরল দুধ, গবাদিপশু, ডিম ও মুরগির বাচ্চা আমদানি করে অনেক সময় মেটাতে হয় স্থানীয় চাহিদা। দুধের চাহিদা মেটানোর প্রাপ্যতাও সীমিত, দামও বেশি। পশুখাদ্যের দামও অত্যধিক ও ভেজালমিশ্রিত। সুতরাং বিকাশমান এ দুটি খাতে সর্বতোভাবে প্রণোদনা দিতে হবে। স্বল্প সুদে ঋণ এর জন্য সহায়ক হতে পারে।
এমতাবস্থায় বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল সরকারের কাছে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান সুবিধাগুলো যেমনÑ অগ্রিম কর, অগ্রিম আয়কর, কর ও শুল্ক, ভ্যাট স্থগিত রাখাসহ ফিডের কাঁচামাল আমদানির সুবিধা প্রদানের দাবি জানিয়েছে। মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো বিবেচনা করবে বলেই প্রত্যাশা। সামনেই আসছে পবিত্র ঈদুল আযহা, পশু কোরবানির উৎসব। সেক্ষেত্রে প্রাণী সম্পদ উন্নয়নের দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।