গাজায় ৫২ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
গত দশ দিন ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় আবাসিক এলাকায় দখলদার ইসরাইলের বিমান হামলায় এ পর্যন্ত ৫২ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এছাড়াও সেখানে ইসরাইয়েলের নারকীয় বিমান হামলায় প্রায় সাড়ে চারশো ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানায় আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি। এ হামলা থামানোর কোনো লক্ষণ নেই ইসরায়েলের। ফ্রান্স-মিশর ও জর্ডানের নেয়া যুদ্ধবিরতি উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম।
বুধবার জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্সের (ওসিএইচএ) মুখপাত্র ইয়েন্স লেয়ার্কে বলেছেন, গাজায় জাতিসংঘের পরিচালিত স্কুল রয়েছে ৫৮টি। এতে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি। বিমান হামলায় ১৩২টি ভবন ধ্বংস হয়েছে। এ ছাড়া ৩১৬টি ভবন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি হাসপাতাল ও নয়টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র রয়েছে। এই হামলার কারণে সুপেয় পানির সংকটে পড়েছেন প্রায় আড়াই লাখ গাজাবাসী।
লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ইসরাইল যেভাবে ফিলিস্তিনের আবাসিক এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে, তা যুদ্ধাপরাধের শামিল।
তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ইসরাইয়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, যাতে বেসামরিক নাগরিকদের হতাহত হওয়ার ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া যায়।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, এবারের সংঘাতে এ পর্যন্ত ২২০ জন ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে। এর মধ্যে শিশু কমপক্ষে ৬১টি আর নারী ৩৬ জন। আহত হয়েছেন দেড় হাজার ফিলিস্তিনি।
অন্যদিকে ইসরাইলের পক্ষে প্রাণহানি ১২ জনের। এর মধ্যে শিশু দুটি। এবারের এই সংঘাতকে বলা হচ্ছে ২০১৪ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত বলা হচ্ছে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম জানায়, বুধবার সকালেও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ বলছে, তারা হামাসের ব্যবহৃত একটি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে গাযা থেকে রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে এবং হামাস বলছে যে তারা দক্ষিণের একটি বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। হামাস বলছে এই ঘাঁটি লক্ষ্য করে এটি তাদের দ্বিতীয় হামলা। তারা হামলা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
এই সহিংসতার মধ্যেই যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে তবে এখনও পর্যন্ত তাতে খুব সামান্যই অগ্রগতি হয়েছে মন্তব্য বিবিসির। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে বিবিসিকে বলা হয়েছে তাদের সামরিক অভিযান ‘পুরো দমে চলবে। যুদ্ধবিরতির বিষয় আলোচনায় নেই।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, সহিংসতা বন্ধের আহবান জানিয়ে ফ্রান্স, মিশর এবং জর্ডান একসাথে হয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব পেশ করেছে। তবে এটি শুধুই খসড়া।
ফ্রান্স বলছে, মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহর মধ্যে এক ভিডিও সম্মেলনে প্রস্তাবের এই খসড়াটি তৈরি করা হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়ে একটি যৌথ বিবৃতি দেওয়ার উদ্যোগে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েলের দীর্ঘ দিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। তারা বলছে, এই বিবৃতি উত্তেজনা প্রশমনে সহায়তা করবে না।
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার রকেট ছুড়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলার জবাবে ইসরাইয়েলের হামলায় প্রায় ১৩০ জন হামাস যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে দাবি আইডিএফের। এ ছাড়া অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য নিহত হয়েছেন ৩০ জন।