সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচি অব্যাহত ॥ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি ও হেনস্তাকারীদের শাস্তির দাবি

11
সচিবালয়ে হেনস্তার শিকার সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নি:শর্ত মুক্তি ও হেনস্তকারীদের শাস্তির দাবিতে সিলেট প্রেসক্লাব আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখছেন প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী।

সিলেট প্রেসক্লাব : দৈনিক প্রথম আলোর জ্যৈষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি ও হেনস্তাকারীদের শাস্তির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে সিলেট প্রেসক্লাব। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ও সহ-সাধারণ সম্পাদক আহমাদ সেলিমের পরিচালনায় এতে সূচনা বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ মো. রেনু।
সভাপতির বক্তব্যে ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, ‘সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক। করোনাকালীন সময়ে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্নীতি নিয়ে একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন যা দেশবাসীর জানা। তাঁর লিখনিতে এ খাতে ব্যাপক অনিয়ম জনসম্মুখে এসেছে। অথচ আজ তাঁকেই জেলে থাকতে হচ্ছে। আর দুর্নীতিবাজ, অপরাধী যারা তারা বাইরে আছে। তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালনে গেলে সচিবালয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যে ভাবে হেনস্তা করা হয়েছে তা উদ্বেগজনক এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি। এর মাধ্যমে বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। আজ বিশ্ব গণমাধ্যমে এ খবর ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে। তাই আমি বলব যারা এমন জঘন্য কাজ করেছে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা হোক একই সাথে রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দেওয়া হোক।
এ সময় বক্তারা আরও বলেন, ‘সাংবাদিকদের কাজই হচ্ছে তথ্য সংগ্রহ করা। তথ্য সংগ্রহ যদি অপরাধ হয় তাহলে রোজিনা

দৈনিক প্রথম আলোর জ্যৈষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র সিলেট আহবায়ক শাখার মানববন্ধন।

ইসলাম একা অপরাধী নয়। সারা দেশের সকল সাংবাদিক অপরাধী। তাই সকল সাংবাদিকদের জেলে নেওয়া হোক। তাহলে আর কেউ দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করবে না।’
বক্তব্য রাখেন ক্ল¬াবের সাবেক সভাপতি ইকরামুল কবির, সহ-সভাপতি এম এ হান্নান ও আবদুল কাদের তাপাদার, সিনিয়র সদস্য আব্দুল মালিক জাকা, সাবেক সহ-সভাপতি আ.ফ.ম. সাঈদ ও মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বদর, সদস্য আব্দুল বাতিন ফয়সল, মো. মুহিবুর রহমান, শেখ আশরাফুল আলম নাসির, আনিস রহমান, মাইদুল ইসলাম রাসেল, শাহ শরীফ উদ্দিন, শাকিলা আক্তার ববি প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মো. আফতাব উদ্দিন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক মারুফ আহমদ, পাঠাগার ও প্রকাশনা সম্পাদক কবির আহমদ, নির্বাহী সদস্য আশকার ইবনে আমিন লস্কর রাব্বী ও আব্দুর রাজ্জাক, সদস্য নাজমুল কবীর পাভেল, মো. দুলাল হোসেন, এম এ মতিন, আবু সাঈদ মো. নোমান, ইউনুছ চৌধুরী, শুয়াইবুল ইসলাম, নৌসাদ আহমেদ চৌধুরী, গোলজার আহমেদ, নিরানন্দ পাল, মো. মারুফ হাসান, মানাউবী সিংহ শুভ, হোসাইন আহমদ সুজাদ, এটিএম তুরাব, শাফী চৌধুরী, দিপক বৈদ্য দিপু, মাধব কর্মকার, সাকিব আহমদ মিঠু, সহযোগী সদস্য এইচ এম শহীদুল ইসলাম। এছাড়াও এসএ টিভির প্রতিনিধি আবু বকর আল আমিন, দৈনিক প্রথম আলোর আলোকচিত্রি আনিস মাহমুদ, ফটো সাংবাদিক মামুন হোসেন ও আজমল আলী প্রমুখ।
সাংবাদিক ইউনিয়ন-(এসইউজে) : দৈনিক প্রথম আলোর জৈষ্ঠ প্রতিবেদক সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারসহ তাকে হেনস্থাকারী দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে সারাদেশে সাংবাদিকদের অবস্থান কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেটে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে সিলেট সাংবাদিক ইউনিয়ন-(এসইউজে)। বুধবার (১৯ মে) বিকেল ৪টায় নগরীর চৌহাট্টাস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।
সিলেট সাংবাদিক ইউনিয়নের (এসইউজে) আহবায়ক লিয়াকত শাহ ফরিদীর সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক মতিউল বারী চৌধুরীর খুরশেদের পরিচালনায় অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখেন- দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের নিজস্ব প্রতিবেদক শাহ দিদার আলম চৌধুরী নবেল, সিনিয়র সাংবাদিক ও সিটি কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ, যমুনা টেলিভিশনের সিলেট ব্যুরো প্রধান মাহবুবুর রহমান রিপন, দৈনিক একাত্তরের কথা’র নির্বাহী সম্পাদক মঈন উদ্দিন, দৈনিক সমকালের স্টাফ রিপোর্টার ফয়ছল আহমদ বাবলু, সাংবাদিক মোহাম্মদ মহসীন, শফিকুল ইসলাম শফি, নুরুল হক শিপু, ইউসুফ আলী, মোস্তাফিজুর রহমান রোমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক মোহাম্মদ মহসীন, প্রথম আলোর সিলেট ব্যুরো প্রধান উজ্জ্বল মেহেদী, মামুন হাসান, শাব্বীর আহমদ ফয়েজ, সাদিকুর রহমান সাকী, এ এইচ আরিফ, সৈয়দ রাসেল, সুমনকুমার দাশ, আনিস মাহমুদ, সজল ঘোষ, মাইদুল রাসেল, এসএম রফিকুল ইসলাম সুজন, রবি কিরণ সিংহ (মাইস্নাম রাজেশ), শংকর দাস, কাইয়ুম আল রনি, মো. ওলিউর রহমান, আশরাফ চৌধুরী রাজু, মো. শাহীন আহমদ, শেখ মো. লুৎফুর রহমান, মো. সুলতান সুমন, ইয়াহ্ইয়া মারুফ, রাশেদুল হোসেন সোয়েব, মো. একরাম হোসেন, রাহুল তালুকদার পাপ্পু, দিব্য জ্যোতি সী, মিঠু দাস জয়, মামুন হোসেন, ভবরঞ্জন মৈত্র বাপ্পা, আতিকুর রহমান নগরী, মৃণাল কান্তি দাস, মোখলেছুর রহমান, সোহাগ আহমদ প্রমুখ।
অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে এসইউজে’র নেতৃবৃন্দ বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনে গিয়ে সচিবালয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যে ভাবে রোজিনা ইসলাম হেনস্তার শিকার হয়েছেন তা উদ্বেগজনক এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি। এর মাধ্যমে বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তারা অবিলম্বে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে নিঃশর্ত মুক্তি প্রদান ও হেনস্তাকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
সম্পাদক পরিষদ, সিলেট : সচিবালয়ে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে প্রায় ৬ ঘণ্টা হেনস্তার পর দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে থানায় সোপর্দ, মামলা দায়ের, সারারাত থানায় রাখা, আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন, জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সম্পাদক পরিষদ, সিলেট। সেই সঙ্গে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এ কলঙ্কজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বের করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছে আঞ্চলিক দৈনিক সংবাদপত্রের সম্পাদকদের এ সংগঠন।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার সহ তাকে হেনস্তাকারী দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে এসইউজে সিলেট সাংবাদিক ইউনিটের অবস্থান কর্মসূচি।

বুধবার (১৯ মে) এক বিবৃতিতে সম্পাদক পরিষদ সিলেট’র সভাপতি ও দৈনিক সবুজ সিলেট’র সম্পাদক মুজিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক শ্যামল সিলেট’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আব্দুল মুকিত উদ্বেগ প্রকাশ করে এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে সম্পাদক পরিষদ সিলেট’র নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের আওতায় রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ যুগে এ সময়ে একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ আমলের করা আইনে মামলা দায়ের সংশ্লিষ্টদের সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের নেতিবাচক মনোভাব ও অশুভ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্বের চেষ্টার পাশাপাশি আগামী দিনের স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের জন্য হুমকি। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে এ ধরনের হীনচেষ্টা সংবাদপত্রের অস্তিত্বকে হুমকির দিকে ঠেলে দেয় ও পেশাকে চ্যালেঞ্জের দিকে নিয়ে যায়।
তারা বলেন, এ নজিরবিহীন ঘটনা বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে প্রায় ৬ ঘণ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কক্ষে জিম্মি করে রাখা, তাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করার ঘটনা শুধু দুঃখজনক নয়, এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কোন আইনে একজন সাংবাদিককে এভাবে আটকে রাখা হলো? নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তা বের করতে হবে। ব্যবস্থা নিতে হবে দোষীদের বিরুদ্ধে।
বিবৃতিতে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়।
নারী সাংবাদিক : সচিবালয়ে হেনস্তার শিকার দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন সিলেটের নারী সাংবাদিকরা। এ সময় তারা হেনস্তাকারী স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বুধবার (১৯ মে) সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র, সিলেট আহবায়ক কমিটির আয়োজনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সরকার একদিকে তথ্যের অবাধ ব্যবহার ও প্রাপ্তির জন্য তথ্য অধিকার আইন করছে। সুশাসন নিশ্চিতের জন্য শুদ্ধাচার কৌশল অবলম্বন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুর্নীতি করতে ছাড় দিয়ে রেখেছে। আর তাদের দুর্নীতি যখনই সাংবাদিকরা প্রকাশ করেন তখন তাদের হেনস্তা করতো উঠে পড়ে লাগেন আমলারা। মামলা, হামলা, চুরির অপবাদ পর্যন্ত দিতে দ্বিধাবোধ করেন না তারা।
বক্তারা বলেন, দেশ আজ উল্টো পথে পরিচালিত হচ্ছে। তা না হলে যেখানে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি হওয়ার কথা সেখানে আজ যিনি দুর্নীতি জনগণের সামনে প্রকাশ করছেন তার শাস্তি হচ্ছে। এসব চিত্র দেখার পরও সরকারের নিশ্চুপ ভূমিকা সুশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
মানববন্ধনে বক্তারা রোজিনা ইসলামকে নির্যাতনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে রোজিনা ইসলামকে নির্যাতনকারীসহ স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিচারের দাবি জানান। সেইসাথে রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন জিটিভির সিলেট প্রতিনিধি ও বাংলাদেশে নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সিলেট শাখার আহবায়ক বিলকিস আক্তার সুমি, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিকা ইসলাম, চ্যানেল আই ও সবুজ সিলেটের সিলেট প্রতিনিধি সুবর্না হামিদ, সিলেট টুডে টুয়েন্টিফোরের নিজস্ব প্রতিবেদক শাকিলা ববি, দৈনিক সিলেট মিররে নিজস্ব প্রতিবেদক বুশরা নূর, দৈনিক সুদিনের সহ সম্পাদক ফাতেমা সুলতানা অন্যা, নিউইয়র্ক মেইলের স্টাফ রিপোর্টার অমিতা সিনহা প্রমুখ।
এই মানববন্ধনে একাত্মতা পূষন করেন সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ রেনু, সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত শাহ ফরিদি, সাংবাদিক ফয়সল আহমেদ বাবলু, সাংবাদিক শেখ নাসির, সাংবাদিক সাদিকুর রহমান সাকি, সাংবাদিক ইউসুফ আলী, সুলতান সুমন, আজমল আলী, মিঠু দাশ জয়, মোস্তাফিজুর রহমান, রাহেল আহমেদ, মোজোম্মেল হোসেন, আশরাফ চৌধুরী রাজু, শফিকুল ইসলাম, শফি আহমদ প্রমুখ।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব : দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কক্ষে আটকে রেখে হেনস্তা, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত এবং রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য সরানোর মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ‘শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব’।
শাবি প্রেসক্লাবের সভাপতি জুবায়ের মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আল রাজী এক যৌথ বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ জানান।
যৌথ বিবৃতিতে শাবি প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। এ সময় সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তাকে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ তাঁকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। পরে ঢাকার শাহবাগ থানায় ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধিতে চুরির অভিযোগে এবং ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি সরানো ও অনুমতি না নিয়ে ছবি তোলার অভিযোগে মামলা করা হয়।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে রোজিনা ইসলামের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি রয়েছে। সম্প্রতি রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন নিয়োগ, টিকা নিয়ে অব্যবস্থাপনা এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি নিয়ে অসংখ্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। সেই আক্রোশ থেকেই তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত এবং আটক করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। এই ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে চরম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে বলেও আমরা মনে করি।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, অবিলম্বে রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দিতে হবে। পাশাপাশি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারণী মহলের কাছে আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ।
দক্ষিণ সুরমা প্রেসক্লাব : দৈনিক প্রথম আলো’র জ্যৈষ্ঠ প্রতিবেদক, কারান্তরীণ রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি ও দায়ী দুুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে দক্ষিণ সুরমা প্রেসক্লাব।
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে আটকে রেখে হেনস্তা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়ে দক্ষিণ সুরমা প্রেসক্লাব সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মুসিক ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম ইমরান যৌথ বিবৃতি দেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনেস্তার পর উল্টো তাকে ফাঁসানোর ঘটনা একটা গণতান্ত্রিক দেশের জন্য খুুবই লজ্জাস্কর। রাষ্ট্রের অতন্দ্রপ্রহরী মুুক্তগণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্তরায়।
বিবৃতিতে সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম’র দ্রুত নিঃশর্ত মুুক্তি ও সাজানো মামলা থেকে অব্যাহতির দাবী জানান তারা।
সুজন : বিশিষ্ট সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্ত ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে সুনামগঞ্জে মানববন্ধন করেছে সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম জেলা কমিটি।
বুধবার দুপুর ১২ টায় সুনামগঞ্জ শহরের আলফাত স্কয়ারে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘তথ্য অধিকার আইন’ প্রণয়নের পরেও ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’ নামের বৃাটশ আমলের কালাকানুনটি কিভাবে বহাল আছে? আমাদের প্রশ্ন জাগে, আমাদের দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আচরণ কি স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার মূল দলিল সংবিধানে বর্ণিত নাগরিকদের ‘মৌলিক অধিকার’, বর্তমান সরকার প্রণীত ‘তথ্য অধিকার আইন’ ও ‘জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল’-এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ? আমরা সরকারকে বিষয়গুলো ভেবে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি।
আমরা মনে করি, রোজিনা ইসলামের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। এই ঘটনাকে স্বাধীন ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি বলেই আমরা মনে করি। একজন নারী সাংবাদিকের ওপর স্বাস্থ্য বিভাগের এহেন আচরণ যেমন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই, ঘটনার সাথে জড়িতদের যথোপযুক্ত বিচার দাবি করছি। এবং রোজিনা ইসলামের মুক্তি দাবি করছি।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সুজন-সুশানের জন্য নাগরিক সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট হোসেন তওফিক চৌধুরী, উপদেষ্টা অধ্যক্ষ সৈয়দ মহিবুল ইসলাম সিনিয়র সহ সভাপতি আলী হায়দার, সহ সভাপতি শাহিনা চৌধুরী রুবি, সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফজলুল করিম সাঈদ, সম্মানীত সদস্য মাইদুল ইসলাম খান মামুন, খলিল রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল হাসান আতাহার, অর্থ সম্পাদক ফারুক মিয়া, দপ্তর সম্পাদক শহীদ নুর আহমেদ, সদর উপজেলা সভাপতি প্রভাষক ফারুক রশিদ, পৌর কমিটির সভাপতি মোস্তাক আহমদ, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, পৌর কমিটির সহসভাপতি প্রেমানন্দ বিশ্বাস প্রমুখ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দৈনিক হাওরাঞ্চলের কথার সম্পাদক মাহতাব উদ্দিন তালুকদার, সিনিয়র সাংবাদিক বিন্দু তালুকদার, শিক্ষক নেতা উস্তার আলী, সাংবাদিক আব্দুস শহীদ প্রমুখ।
কমলগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ : দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে টানা পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ রাখা, শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করে গ্রেফতারে ক্ষোভ, ঘৃণা ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ।
এ উপলক্ষে বুধবার ১৯ মে দুপুরে কমলগঞ্জ উপজেলা চৌমুহনী চত্বরে এক প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
প্রথম আলো কমলগঞ্জ প্রতিনিধি মুজিবুর রহমান রঞ্জু এর সভাপতিত্বে ও দৈনিক মানবজমিন কমলগঞ্জ প্রতিনিধি সাজিদুর রহমান সাজুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন একুশে টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার মানিক শিকদার, মাসুমা লিসা, কবি শহীদ সাগ্নিক, কমলগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি বিশ্বজিৎ রায়, কমলগঞ্জ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নুরুল মোহাইমিন মিল্টন, কমলগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহিন আহমেদ, কমলগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল এস পলাশ, সাপ্তাহিক কমলগঞ্জ সংবাদ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন প্রমুখ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ প্রেসক্লাব, কমলগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি, কমলগঞ্জ সাংবাদিক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বক্তরা অবিলম্বে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তি ও শারিরীকভাবে হেনেস্তাকারীদের শাস্তির দাবী জানান।
মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনা ইসলামকে হেনন্তা, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে মৌলভীবাজার জেলার কর্মরত সাংবাদকর্মীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
বুধবার ১৯ মে দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব ও ইলেকট্রনিক জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (ইমজা) এর যৌথ উদ্যোগে প্রেসক্লাব সম্মুখে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেসক্লাব সভাপতি এম এ সালামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পান্না দত্তের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবদুল হামিদ মাহবুব, দৈনিক বাংলার দিন পত্রিকার সম্পাদক বকশি ইকবাল আহমদ, ইমজার সাধারণ সম্পাদক বকশি মিছবাউর রহমান, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার এস এম উমেদ আলী, প্রথম আলো নিজেস্ব প্রতিবেদক আকমল হোসেন নিপু, সাংবাদিক সরোয়ার আহমদ, সমকাল প্রতিনিধি নুরুল ইসলাম, সাংবাদিক নুরুল ইসলাম সেফুল, দেশ টিভি প্রতিনিধি সালেহ এলাহি কুটি প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, সচিবালয়ে রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও ন্যাক্কারজনক ঘটনারজন্য তারা তীব্র প্রতিবাদ জানান। সচিবালয়ে ভেতরে যে ঘটনা ঘটেছে তা মাঠ পর্যায়ের গণমাধ্যমের ওপর ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। এটি মুক্ত সাংবাদিকতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ।
সমাবেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সাংবাদিকতার কন্ঠ রোধ করে এমন সকল কালো আইন বাতিলের দাবী জানান এবং অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার পূর্বক রোজিনা ইসলামকে মুক্তিসহ ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির দাবী জানান। বিজ্ঞপ্তি