সিয়াম সাধনার মাস

6

কাজিরবাজার ডেস্ক
প্রিয় পাঠক, মাহে রমজানের মুবারকবাদ! দেখতে দেখতে আমরা বরকতময় মাসের অর্ধেক পার হয়ে এসেছি। আলহামদুলিল্লাহ! মুসল্লিদের মাঝে পরিবর্তনও কম হয়নি। গতকাল আল কোরানের ভূমিকা সূরা ফাতিহা নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেছিলাম। বস্তুত সূরা ফাতিহা একটি পবিত্র প্রার্থনার সমষ্টি; আল কোরান এর বাস্তব উত্তর। আল্লাহর পথে বান্দার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সেতু বন্ধন হলো এ সূরা। বান্দা তার মনিবের শেখানো দোয়ার বদৌলতে মুনাজাত করার সুযোগ পেয়েছে এই সূরার মাধ্যমে। এ যেন সরকারীভাবে দেয়া দরখাস্তের ফর্মে দস্তখত করার মতোই সুযোগ।
হযরত আবু হুরায়রা (রাদি:) হতে বর্ণিত আছে, আমি মহানবীকে (স.) এ কথা বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ বলেছেন : নামাজ আমার ও আমার বান্দার মাঝে আধাআধি ভাগ করা হয়েছে, আর আমার বান্দা আমার কাছে যা চাইল, তা-ই তার জন্য রইল। যখন বান্দা বলে: ‘আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আ’লামীন’ তখন আল্লাহ বলেন: ‘হামিদানী আবদী’ অর্থাৎ আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল। যখন বান্দা বলে: ‘আরাহমানির রাহীম।’ তখন আল্লাহ বলেন: আছনা আলাইয়া আবদী- আমার বান্দা আমার গুণ গাইল। যখন বান্দা উচ্চারণ করে: ‘মালিকী ইয়াওমিদ দীন’। তখন আল্লাহ বলেন: মাজ্জাদানী আবদী- আমার বান্দা আমার গৌরব বর্ণনা করল। আর যখন বান্দা পড়ে ‘ইয়্যাকা-না’বুদু ওইয়্যাকা-নাস্তাঈন’। তখন জবাবে আল্লাহ বলেন: এই বিষয়টা আমার ও আমার বান্দার মাঝেই রইল, আর আমার বান্দার জন্য তা-ই, যা সে চাইবে। যখন বান্দা পাঠ করে: ‘ইহ্দিনাস সিরাত্বল মুস্তাকীমÍ-ওয়ালাদ্ দোয়াল্লীন।’ তখন আল্লাহ উত্তর দেন: হাজা লি আবদী ওয়া লিআবদী মা-সা আলা। এ আমার ও আমার বান্দার মাঝে সংরক্ষিত আর আমার বান্দার জন্য বরাদ্দ থাকবে যা সে প্রার্থনা করছেÑ (হাদিসে কুদসি)।
তাহলে বোঝা গেল, এ সূরা তামাম জাহানের মালিকের সঙ্গে দীনহীন বান্দার গোপন আরজ, কথোপকথন। মনমুকুরে ঈমানের দীপ্ত শিখা জারি থাকলে মু’মিনের পক্ষে মহামহীম আল্লাহর প্রতিধ্বনি অনুভব হওয়ারই কথা। দুনিয়ার বাদশাহ্র সঙ্গে অসহায় মানুষের কথাবার্তাগুলোতে গোপনই থাকল। এখানে কোন বাদশাহর সঙ্গে সাধারণ ফরিয়াদীর সত্যিকারের আবেদন-নিবেদনের চিত্র ফুটে উঠেছে।
কোন দরখাস্তের শুরুতে থাকে গুণগান, প্রশংসা। এর পরই খুশী হয়ে বাদশাহ জানতে চাইলেন: কে তুমি? বান্দা সবিনয় আরজ করল, একমাত্র আপনারই দাস, আপনারই সাহায্যপ্রার্থী। এরপর আল্লাহ বলেন: তুমি আমার কাছে কি চাও? বান্দা বলে: ‘সঠিক পথের সন্ধান দিন’। আল্লাহ জানতে চাইলেন: কোন্ পথটা তুমি ঠিক মনে করো? সে পথ আমি চিনি না, শুধু এতটুকু বলতে পারি ঐ পথে চালাও, যে পথে তোমার নেয়ামত অবারিত; কোন সময় গজবে পড়ার শঙ্কা থাকবে না।
তখন আল্লাহ বলেন: যদি সত্যিই তুমি চাও সঠিক পথের সন্ধান, তাহলে এই নাও আল্ কোরান। এর শিক্ষা দুনিয়ায় তোমাকে বিপদমুক্ত রাখবে আর আখিরাতে নিয়ামতের ভাগি করবে। উল্লেখ্য, এ সূরায় ‘সিরাতুল মুস্তাকীম’ বা ‘সহজ সরল পথ’ পাওয়ার জন্য প্রার্থনা শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। আসলে এ এক বড় নেয়ামত। কায়েমনোবাক্যে আল্লাহর দরবারে তা না চাইলে পাওয়া যায় না। আল্লাহ মানুষকে দুনিয়ার সব প্রয়োজনীয় জিনিস না চাইলেও দিয়ে থাকেন কিন্তু হিদায়াত বা দ্বীনের সহজ পথ কারো ওপর চাপিয়ে দেন না, কোন অনিচ্ছুক জাতি হিদায়াত পায় না। হিদায়াত শ্রেষ্ঠতম দান, তা অপাত্রে আল্লাহ দান করেন না। এর জন্য খাঁটি মনে প্রভুর দ্বারে ধর্ণা দিতে হয়।
সূরা ফাতিহার ফজিলত: ফজরের নামাজের পর প্রত্যহ বিসমিল্লাহ মিলিয়ে এই সূরা ৪১ বার পড়লে স্বাস্থ্য অটুট থাকে, কোন রোগব্যাধি আক্রমণ করতে পারে না। কোন নেক উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য হযরত আলী (রাদি:) এ সূরা পাঞ্জেগানা নামাজের পর একশতবার পড়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। তা ছাড়া চর্মরোগ, দন্তশূল, নির্যাতনের অবস্থায় কিংবা অভাব-অনটনের সময় এটি পাঠ করলে যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়।
বিসমিল্লাহ্র সঙ্গে মিলিয়ে সূরা ফাতিহা পড়ে প্লেগ ও কলেরা রোগীর শরীরে ফুঁক দিলে আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ সবের পূর্ব শর্তই হলো পূর্ণ ঈমান ও ভক্তি এবং প্রয়োজনে দোয়ার সঙ্গে দাওয়া বা ঔষধের প্রয়োগ। আল্লাহই সবকিছুর সর্বশেষ আশ্রয়স্থল।
আমরা ইবাদতে রিয়াজতে এ সূরা পড়ার সময় সর্বোচ্চ খুলুসিয়াত প্রদর্শণ করতে পারলেই কেবল আমাদের দোয়া-মুনাজাত কবুল হতে পারে। শুধু নিয়তির দোষ দিয়ে লাভ কি? ক’জনইবা আমাদের মধ্যে বিশুদ্ধ মন ও চিন্তাশক্তির অধিকারী হতে পেরেছে?