ধূমপান নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন নিয়ে ভাবছে সরকার

41

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ না থাকা এবং আইনি কাঠামোর অভাবে ধূমপায়ীদের কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আর তাই ধূমপানের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতি থেকে বাঁচতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে সেটার কঠোর প্রয়োগের কথা ভাবছে সরকার।
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘তামাকজনিত ব্যাধি ও অকালমৃত্যুর কারণে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে বাংলাদেশ’ শীর্ষক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ৩০ বছর বা এর বেশি বয়সীদের মধ্যে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। এদের মধ্যে ১৫ লাখ মানুষের রোগাক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে তামাক ব্যবহারের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে। ১৫ বছর বা তার কম বয়সী ৪ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি শিশু তামাকজনিত রোগে ভুগছে। এদের ৬১ হাজারেরও বেশি (১৪ শতাংশ) শিশু বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। তামাক ব্যবহার এবং পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বছরে মারা যাচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৭১৮ জন। যা জাতীয় পর্যায়ে সকল মৃত্যুর প্রায় ১৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েল বিং-এর চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণের বিদ্যমান আইনটি সর্বশেষ সংশোধন হয়েছে ২০১৫ সালে। এতোদিনে বদলে গেছে দৃশ্যপট। অনেকেই পাবলিক প্লেসে ধূমপান শুরু করেছে। এটা কমাতে করের হারও বাড়ানো প্রয়োজন। তাই আইন সংশোধন জরুরি। আমরা সংসদের প্রায় ১৫৩ জন সংসদ সদস্য ইতোমধ্যে তামাকের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো বলেই মনে করছি।’
ক্যান্সার সোসাইটি ও ঢাবির গবেষণা প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বছরে ব্যয় বাড়ে ৪ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যক্তিগত ও সরকারি ব্যয়, অক্ষমতা/অসুস্থতার কারণে উৎপাদনশীলতার ক্ষতি এবং অকালমৃত্যুর কারণে উৎপাদনশীলতার ক্ষতিও অন্তর্ভুক্ত।
শিশুদের ক্ষতি বেশি
বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে পরোক্ষ ধূমপানে শিশুরাই যে বেশি ক্ষতির শিকার হয়, তার প্রমাণ দিয়েছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত নিকোটিন অ্যান্ড টোব্যাকো রিসার্চ সাময়িকী। ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার: ঢাকা, বাংলাদেশে একটি জরিপ’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলা হয়, ঢাকাতেই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার ৯৫ শতাংশ শিশু। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৭৯ শিশুর মধ্যে ৪৫৩টি শিশুর লালায় নিকোটিন পাওয়া গেছে।
বিদ্যমান আইনের দুর্বলতা তুলে ধরে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা) জানায়, আইনের মাধ্যমে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করাও জরুরি। এতে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে। পাশাপাশি প্রতিটি বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি তথা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা এবং প্যাকেটবিহীন জর্দা-গুল বিক্রয় নিষিদ্ধ, ই-সিগারেট এবং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টের (এইচটিপি) মতো ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধিসহ তামাকপণ্য মোড়কজাতকরণে বিধিনিষেধ আরোপ করা প্রয়োজন।
আইনের দুর্বলতা স্বীকার করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সংশোধনীর মাধ্যমে আইনটি যুগোপযোগী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ণ্ড জানান, আইনের দুর্বলতার সুযোগে জনসম্মুখে ধূমপায়ীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এতে অধূমপায়ীরাও ক্ষতির শিকার হচ্ছে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে ধূমপানের প্রবণতাও বাড়ছে।