গণহত্যা দিবস

12

আজ ২৫ মার্চ। ’৭১-এর এই দিনের ভয়াল রাতে যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তাঁদের সবার প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। দীর্ঘদিন ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ছিল সর্বস্তরের মানুষের। গত জাতীয় সংসদে প্রস্তাব পাসের মাধ্যমে দাবি পূরণ করেছে সরকার। দিবসটিকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সম্মান জানাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২৫ মার্চ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে রাত ৯টা ১ মিনিটে নিষ্প্রদীপ ও নীরবতা পালন করা হবে। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে প্রচলিত অনুষ্ঠান সূচীতে রদবদল আবশ্যক হয়ে পড়েছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। মার্চকে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস পালনে জাতিসংঘকে প্রস্তাব দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি প্রতিরোধ করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, সর্বোপরি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে ২৫ মার্চের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে জানানোর দায়বদ্ধতা সবার। এ লক্ষ্যে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত সঠিক এবং সময়োপযোগী বলেই আমরা মনে করি। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পূর্বরাত ২৫ মার্চ। এটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের একটি স্মরণীয় দিন। এক ভয়াল ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতার স্মৃতি হিসেবে চিহ্নিত এ রাত। এর পরপরই ঘোষিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী একাত্তরের ২৫ মার্চে পরিকল্পিত পন্থায় নেমেছিল বাঙালি হত্যার মহোৎসবে। নেমেছিল রক্তের স্র্রোতে বাঙালির সব স্বপ্নকে ভাসিয়ে দিতে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাঙালির জীবন উৎসর্গ করার ঐতিহাসিক ঘটনার পথ ধরে এ দেশের মানুষকে পাড়ি দিতে হয় অনেক পথ। এই পথের ধারাবাহিকতায় আসে ’৬৬-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং এসবেরই ধারাবাহিকতায় আসে ১৯৭০ সালের নির্বাচন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে এবং সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু নির্বাচনের এই রায় দেখে চমকে যায় পাকিস্তানের কায়েমি স্বার্থবাদী স্বৈর-সামরিক চক্র। দেশের মানুষ ভোট দিয়েছিল ছয় দফার পক্ষে। সেই ছয় দফা পরিণত হয় এক দফায়। শুরু হয় এক অভূতপূর্ব আন্দোলন, অহিংস অসহযোগ আন্দোলন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্সে (সোহওাওয়ার্দী উদ্যান) উত্তাল জনসমুদ্রে দিলেন এক ঐতিহাসিক ভাষণ। সংগ্রামের পূর্বাপর ইতিহাস তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ওই ভাষণে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার নির্দেশ দিলেন তিনি, নির্দেশ দেন শত্রুর মোকাবেলা করার।