রাজনগরের খেয়াঘাটে সিএনজি চালকদের মারামারির জের ধরে সংঘর্ষ ও পুলিশসহ আহত অর্ধশত

9

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের রাজনগরের খেয়াঘাটে সিএনজি চালকদের মারামারির জের ধরে কয়েকটি গ্রামের সংঘর্ষ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে পুলিশসহ অর্ধশত আহত হয়েছেন। এ সময় খেয়াঘাট বাজারের ১২টিরও বেশি দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। রাজনগর থানার পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
শনিবার (২০ মার্চ) সকাল ৯টার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত সংঘর্ষ চলমান ছিল। রাজনগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান খান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা পাল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জিয়াউল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের খেয়াঘাট বাজার এলাকার ইউপি সদস্য লুৎফুর রহমানের দুই ভাতিজা নূর মিয়ার ছেলে কাজল ও দিলাল রাজমিস্ত্রী কাজের জন্য শাহপুর গ্রামে যাচ্ছিলেন। খেয়াঘাট বাজারে এসে কাজে যাওয়ার জন্য বেড়কুড়ি গ্রামের সিএনজি চালকের গাড়িতে ওঠেন তারা। গাড়ি ছাড়তে দেড়ি হওয়ায় তারা অন্যগাড়িতে চলে যেতে চাইলে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। বিষয়টি সমাধানের জন্য খেয়াঘাট বনিক সমিতির সহসম্পাদক মাহমুদ মিয়া, সিএনজি ড্রাইভার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবিদ আহমদ দিপু, দৌলত মিয়া, সুইট মিয়া বসেন। এ সময় লুৎফুর রহমানের অফর ভাতিজা হেলাল মিয়া এসে সমাধান মানেন না এবং বিষযটি তারা পারলে দেখবেন বলে চলে যান। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
পরে উভয় পক্ষের গ্রামের লোকজনও এতে জড়িয়ে পড়েন। এতে বাজারে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। একপক্ষ অপরপক্ষের দোকান ভাংচুর ও লুট করে। জাকির মিয়া ও লুৎফুর মেম্বারের দোকান বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
খবর পেয়ে রাজনগর থানা পুলিশের একটি দল সেখানে যায়। এসময় সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আহমদ বিলালও ঘটনাস্থলে যান গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে সহায়তা করেন।
এদিকে উভয় পক্ষের সংঘর্ষ থামানোর সময় রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসেম, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) দেব দুলাল ধরসহ চার পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পুলিশ ৬৯ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে রাজনগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান খান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা পাল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জিয়াউল হক পরিদর্শন করেন। রাজনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক দুই ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ বিলাল, ফারুক আহমদ, ফতেহপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জামি আহমদসহ বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে।
এদিকে বিষয়টি সামাধানের জন্য উভয়পক্ষ যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না করে সেজন্য উভয় পক্ষ উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা পালের উপস্থিতিতে ১০ জন সদস্যের নাম দিয়েছে। বর্তমানে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন রয়েছে।
রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসেম বলেন, সিএনজি গাড়িতে উঠা নিয়ে দুইজনের বাকবিতন্ডার জেরে উভয়ের গ্রামের লোকজন জড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি সমাধানের প্রক্রিয়া করছেন। প্রয়োজনে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত এবং পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের ৬০ জন সদস্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিপুল পরিমাণ রাবার বুলেট ও ক্যাদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনা নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও সাবেক রাজনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আহমদ বিলালসহ স্থানীয়রা সংঘর্ষ থামাতে ব্যাপক ভূমিকা পালনের চেষ্টা চালান বলে জানা গেছে।