গতি ফিরছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারে

9

কাজিরবাজার ডেস্ক :
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচারকাজ চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
২০১০ সালের মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস) ট্রাইব্যুনাল (অভ্যন্তরীণ আদালত) গঠন করা হয়। এর চেয়ারম্যান হন বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম। তিন সদস্যের এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি আমির হোসেন ও বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার।
মহামারির সময়ে ট্রাইব্যুনালের বিচারে গতি ছিল ধীর। এখন আবার গতি ফিরে আসছে। মোটামুটি নিয়মিত মামলায় আসামি আসছে, সাক্ষী হচ্ছে। এছাড়া জাজমেন্টও হলো একটা। যে সকল মামলা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে এগুলো চলবে। নতুন মামলা আসলে সেসব বিষয়ে শুনানি হবে। মূলত এক কথায় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম আবারও আগের মতোই চলবে।
ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর বিচার চললেও ২০১৩ সাল থেকে রায় ঘোষণার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে মোট ৪২টি মামলার রায় আসে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও ৩৫টি মামলা বিচারাধীন। ইতোমধ্যে ৭৮টি মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে।
এদিকে ৯টি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা হয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। আরও দুটি মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
ট্রাইব্যুনালের এক দশক পূর্ণ ২৫ মার্চ : গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতির কারণে যেমন এজলাস বসেনি, তেমনি প্রসিকিউটররা ও তদন্ত সংস্থা ধীরে কাজ করেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আবার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বলা যেতে পারে অনেকটাই সচল হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার এক দশক পূর্ণ হচ্ছে আগামী ২৫ মার্চ। এই ১০ বছরে ট্রাইব্যুনাল থেকে মোট ৪২টি মামলার রায় এসেছে।
এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ১০৪ জন। যার মধ্যে ৭০ জনেরই মৃত্যুদণ্ডের সাজা হয়। বাকিদের যাবজ্জীবন ও আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া গত ১০ বছরে মারা যান ২০ সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
রায়হীন এক বছর : মহামারি শুরুর আগে ট্রাইব্যুনালের এক বিচারক অসুস্থতাজনিত কারণে চিকিৎসার জন্য ছুটিতে বিদেশ ছিলেন। তিনি এখন দেশে এসেছেন। মহামারি এবং বিচারক না থাকায় গত বছর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলার রায় দিতে পারেননি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউটর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে গড়ে প্রতি বছর ছয়টি রায় এসেছে। ২০২০ সালে এসে কোনো মামলায় রায় দেয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের অন্যতম প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, ‘সারা বিশ্বে একই সমস্যা। মহামারির সময় ট্রাইব্যুনালের বিচারে গতি ছিল ধীর। এখন আবার গতি ফিরে আসছে। মোটামুটি নিয়মিত মামলায় আসামি আসছে, সাক্ষী হচ্ছে। এছাড়া জাজমেন্টও হলো একটা। যে সব মামলা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে এগুলো চলবে। নতুন মামলা এলে সেসব বিষয়ে শুনানি হবে। মূলত এক কথায় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম আবারও আগের মতোই চলবে।’
ট্রাইব্যুনালের অন্যতম প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত ণ্ডবলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে মামলার স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটেছিল। একটি রায় ঘোষণার জন্য থাকলেও সেটি দিতে পারেননি ট্রাইব্যুনাল। কারণ ট্রাইব্যুনালের বেশ কয়েকজন প্রসিকিউটর ও তাদের পরিবারের সদস্য কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছিলেন। ট্রাইব্যুনালের বহু কর্মীও আক্রান্ত হয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। সম্প্রতি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের এক মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে যাচ্ছে।’
জ্যেষ্ঠ প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত ণ্ডআরও বলেন, ‘গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতির কারণে যেমন এজলাস বসেনি, তেমনি প্রসিকিউটররা ও তদন্ত সংস্থা ধীরে ধীরে কাজ করেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আবার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বলা যেতে পারে অনেকটাই সচল হয়েছে। আশা করছি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরও রায় হয়ে যেতে পরে।’
তিনি বলেন, ‘আব্দুল হান্নান, পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তাসহ আরও বেশকিছু মামলায় আর্গুমেন্ট (যুক্তিতর্ক) শেষ পর্যায়ে। এসব মামলায় রায় ঘোষণা করা হতে পারে।’