সুনামগঞ্জের হাওরে বাঁধের কাজে ধীরগতি, শঙ্কায় কৃষক

5

সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
হাওর অধ্যুষিত জেলা সুনামগঞ্জ। হাওর প্রধান জেলা হওয়ায় এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজ ও মৎস্য আহরণ করে চলে। যার জন্য প্রতিবছর হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে কিন্তু শঙ্কা কাটেনি এ জেলার কৃষকদের।
ধীরগতিতে কাজ ও অনিয়মের মাধ্যমে বাঁধের কাজ সমাপ্ত করার অভিযোগ তুলেছেন হাওর আন্দোলনের নেতারা। দ্বিতীয় মেয়াদে হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ হবে কি না সেটা নিয়ে শঙ্কায় হাওরের কৃষকরা। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি হাওরে বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে ৮২ শতাংশ বললেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে হাওরের ফসলরক্ষায় সুনামগঞ্জে ৬১৯ কিলোমিটার বাঁধের কাজ হচ্ছে, যার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ৮১১ টি পিআইসি গঠন করে। যার মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩৩টি, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৪১টি, ধর্মপাশা উপজেলায় ১৭০টি, তাহিরপুর উপজেলায় ৮৩টি, জামালগঞ্জ উপজেলায় ৪৪টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ৬৩টি, দিরাই উপজেলায় ১২০টি, শাল্লা উপজেলায় ১৫৬টি, জগন্নাথপুর উপজেলায় ৩৬টি, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ৪৭টি ও ছাতক উপজেলায় ১৮টি পিআইসি গঠন করা হয়।
এ অর্থ বছরে সংশোধিত কাবিটা নীতিমালা ২০১৭ অনুযায়ী সুনামগঞ্জে ডুবন্ত বাঁধের ভাঙন বন্ধকরণ ও মেরামতের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১৩৩ কোটি টাকা, যার এখন পর্যন্ত সরকার দিয়েছে ৬৬ কোটি।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড মনগড়া বাঁধের কাজের অগ্রগতির যে তথ্য দিচ্ছে তা হাওর বাঁচাও আন্দোলন প্রত্যাখান করছে। বাস্তবে দুইদফা সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ হয়নি এখনো অধিকাংশ বাঁধে মাটির কাজই শেষ হয়নি, তাহলে আগাম বন্যা হলে এর দায়ভার পানি উন্নয়ন বোর্ডকেই নিতে হবে। বাঁধের কাজ মাত্র ৪৫ শতাংশ শেষ হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওর ও মাতিয়ান হাওরের বেশ কয়েকটি হাওর ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ বাঁধে শেষ হয়নি মাটি ফেলার কাজ, যার মধ্যে অন্যতম উপজেলার মাতিয়ান হাওরের দক্ষিণ বড়দল ইউপির পিআইসি নং ৭৩। ০.৩৫৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ লাখ ২৭ হাজার ১১৩ টাকা।
তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরে ৪, ৫, ৭, ৮, ৯ ও ২০ নম্বর পিআইসি ও মাতিয়ান হাওরের ৭২, ৭৪, ৭৫ নং পিআইসির কাজ পরিদর্শন করলে দেখা যায় মাটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকলেও শেষ হয়নি দুর্মুজ, ঘাস লাগানো দুর্মুজ বাঁশের আড়, ঘাস দেয়ার কাজ।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, এমন দুর্বল ও ধীর গতিতে বাঁধ তৈরি করলে আগাম বন্যায় এ সব বাঁধ ঠিকবে না।
ইউএনও পদ্মাসন সিংহ বলেন, তাহিরপুরে কয়েকটা বাঁধের কাজ ধীরগতিতে হচ্ছে আমরা তাদের সর্তক করে দিয়েছি এবং কাজ শেষ করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছি। এছাড়া বাঁধের অনিয়ম ঠেকাতে নজরধারী অব্যাহত রয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, আমাদের এখন পর্যন্ত বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে ৮২ শতাংশ। হাওরাঞ্চলে ঝুঁকিপূর্ণ যে বাঁধগুলো যেটাকে আমরা ক্লোজার বলি সেগুলোর কাজ যতটুকু উচ্চতায় তৈরি করা প্রয়োজন সেগুলোর কাজ শেষ হয়েছে। এ বছর হাওরে পানি দেরিতে নেমেছে সেজন্য কিছুটা কাজ বিলম্বে শুরু হয়েছে তবে এখন পর্যন্ত ৬১০টি বাঁধে মাটি ফেলার কাজ শেষ হয়েছে কয়েকটি জায়গায় অনিয়ম হয়েছে সেগুলোতে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি আরো জানান, এ বছর যে পয়েন্টগুলোতে সুনামগঞ্জে হাওরে পানি ডুকে এরকম ২২৫টি পয়েন্ট রয়েছে সেই পয়েন্টগুলো বিপদমুক্ত করে ফেলেছি সুতরাং আগাম বন্যা হলেও হাওরের কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না বা ফসলহানী ঘটার আশঙ্কা নেই।