রশিদপুরে লন্ডন এক্সপ্রেস ও এনা বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৮, আহত ১৫

144

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার রশিদপুরে লন্ডন এক্সপ্রেস ও এনা পরিবহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৮ জন নিহত ও অনন্ত ১৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঘটনাস্থলেই গাড়ির চালক ও হেলপারসহ ৫ জন নিহত হন আর বাকী ৩ জন ওসমানী হাসপাতালের জরুরী বিভাগে মৃত্যুবরণ করেন। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হচ্ছেন, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সালমান খান (২৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের নুরুল আমিন (৫০), সাগর (১৯), ওসমানীনগরের মঞ্জুর আহমদ মঞ্জু (৩৫), একই উপজেলার জাহাঙ্গির হোসেন (৩০), ডা. ইমরান খান রুমেল (৪৮), নগরীর আখালিয়ার শাহ কামাল (৪৫) ও ছাতকের রহিমা বেগম (৩৫) । এদের মধ্যে মঞ্জু এনা পরিবহনের চালক ও জাহাঙ্গির তার সহযোগি। নুরুল আমিন লন্ডন এক্সপ্রেসের সুপারভাইজার আর ডা. ইমরান নগরীর মিরবক্্রটুলার উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রভাষক। আহতদেরকে ওসমানী হাসপাতাল ও নগরীর বিভিন্ন হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়ে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনার শিকার এনা বাসে ৮ যাত্রী ছিলেন। এছাড়া চালক-সুপারভাইজার মোট আরোহী ছিলেন ১১ জন এবং লন্ডন এক্সপ্রেসে চালক-সুপারভাইজার মিলে ৩ জন আর যাত্রী ছিলেন ২৮ জনসহ মোট ৩১ জন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী লন্ডন এক্সপ্রেস (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৩১৭৬) গাড়িটি দ্রুত গতিতে রশিদপুর ব্রিজ পার হয়েই বিপরীত দিক থেকে আসা এনা পরিবহন (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৭৩১১) গাড়ির উপর উঠে যায়। এসময় প্রচণ্ড গতিতে এনা বাসের সঙ্গে লন্ডন এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ ঘটে। এতে ২টি বাস দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলে ৫ জন নিহত হন। আর ওসমানীতে মারা যান আরো ৩ জন। স্থানীয় লোকজন গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে আহত ও নিহতদের উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে। লন্ডন এক্সপ্রেস গাড়িটি দ্রুত গতিতে ভুল সাইটে চলে আসার কারণে এ ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে এমনটাই জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এদিকে, দুর্ঘটনার পরপরই সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। রশিদপুরের দুদিকে প্রায় ৩ কিলোমিটার জুড়ে সব ধরণের যানবাহন আটকা পড়ে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযান শেষে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।
লন্ডন এক্সপ্রেসের বেঁচে যাওয়া এক যাত্রী জানান, ঢাকা থেকে আসার পথে বার বার গাড়ির চালক অন্য গাড়িকে বেপরোয়া গতিতে ওভারটেক করছিলেন। কয়েকবার আমরা সতর্ক করার পরও চালক আমাদের কথা শুনেননি। যে কারণে এমন মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিলেটের উপ পরিচালক কোবাদ আলী সরকার বলেন, গাড়ি সব সময় রাস্তায় বাঁ পাশ দিয়ে চলার কথা। কিন্তু দুর্ঘটনা কবলিত লন্ডন এক্সপ্রেস বাঁ পাশ ছেড়ে ডান পাশে চলে যায়। ডান পাশে গিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা এনা বাসকে ধাক্কা দেয়। তিনি বলেন, শুক্রবার সকালে খুব বেশি কুয়াশা ছিলো না। ধারণা করছি, ব্রিজ ক্রস করতে গিয়ে লন্ডন এক্সপ্রেসের চালক স্ট্রিয়ারিংয়ের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এতে বাসটি ভুল ট্র্যাকে চলে যায়। একারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। তবে দুর্ঘটনার আসল কারণ পরবর্তীতে তদন্তে জানা যাবে।
দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, সকালে কুয়াশা তেমন একটা ছিলো না। গাড়ির অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে লন্ডন এক্সপ্রেস দ্রুত গতিতে ওভারটেক করে এনা গাড়ির সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খায়। অথবা লন্ডন এক্সপ্রেসের চালক ঘুমিয়েও থাকতে পারেন। বিষয়টি পরে তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে। তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় হতাহতদের সিলেট ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দক্ষিণ সুরমা থানার একদল পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজ করেছে। আর পুলিশের পক্ষ থেকে এ ঘটনার আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওসি।
এদিকে, ভয়াবহ দুর্ঘটনায় নিহত ডা. ইমরান খান রুমেলের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বাদ আসর হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার মসজিদে নামাজের জানাযা শেষে মানিক পীর (রহ.) কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।