ছাতকস্থ লাফার্জ হোলসিম’র বিরুদ্ধে সড়ক ও নৌ-পথ অবরোধের হুমকি, খোলাবাজারে ক্রাশিং চুনাপাথর বিক্রি

43
ছাতকে লাফার্জ হোলসিম কর্তৃক খোলা বাজারে ক্রাসিং চুনাপাথর বিক্রির প্রতিবাদে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন পরিষদের আহবায়ক আহমদ শাখাওয়াত সেলিম চৌধুরী।

আতিকুর রহমান মাহমুদ ছাতক থেকে :
খোলাবাজারে ক্রাশিং চুনাপাথর বিক্রির প্রতিবাদে ছাতকস্থ লাফার্জ হোলসিম’র বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে চুনাপাথর ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা। তারা লাফার্জ পণ্য পরিবহন না করার জন্য সড়ক ও নৌ- পথ অবরোধ করার হুমকি দিয়েছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সর্বস্তরের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা লাফার্জ হোলসিম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ হুমকি দিয়েছেন। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রতিষ্ঠাকালীন চুক্তি লঙ্ঘন করে লাফার্জ বৃহত্তর ছাতকের ব্যবসায়ী-শ্রমিকদের রুটি-রোজিতে হাত বাড়িয়েছে। লাফার্জ কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে চুনাপাথর ক্রাশিং করে খোলাবাজারে বিক্রির ফলে ছাতক, কোম্পানীগঞ্জ ও দোয়ারাবাজার এলাকার কয়েক শ’ ব্যবসায়ী ও লক্ষাধিক শ্রমিক পথে বসার উপক্রম হয়েছে। লাফার্জ কর্তৃপক্ষ ক্রাশিং চুনাপাথর খোলাবাজরে বিক্রি প্রক্রিয়া বন্ধ না করলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের পাশাপাশি উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করা হবে। তারা আরো বলেন, ছাতকের সুরমা নদীর তীরে ক্লিংকার ও সিমেন্ট উৎপাদন ও বিপণন করার চুক্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয় লাফার্জ সিমেন্ট কারখানা।
উৎপাদমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান হওয়ায় জন্মলগ্ন থেকেই অপেক্ষাকৃত কম রাজস্ব দিয়ে এবং ন্যূনতম পরিবহন খরচে চুনাপাথর আমদানী করতে পারছে লাফার্জ। পক্ষান্তরে বাণিজ্যিকভাবে আমদানীর কারণে উচ্চ হারে সরকারকে ভ্যাট এবং অধিক পরিবহন খরচ দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। যে কারনে লাফার্জ খোলা বাজারে বর্তমান রেটের চেয় কম মূল্যে ক্রাশিং চুনা পাথর বিক্রি করার অশুভ সুযোগ নিচ্ছে লাফার্জ। কোভিট-১৯ নিয়ে যখন বিশ্ববাসী স্তব্ধ, তখন লাফার্জ হোলসিম অধিক মুনাফার জন্য খোলাবাজারে ক্রাশিং চুনাপাথর বিক্রির ষড়যন্ত্র শুরু করে। লাফার্জ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিতর্কের সৃষ্টি করা এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি মাটি সংগ্রহের কারণে এখানের ফসলী জমি ধ্বংস গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমানে ছাতকের ঐতিহ্যবাহী পাথর ও চুনাপাথর ব্যবসাকে ধ্বংস করে এখানের ব্যবসায়ীদের পথে বসাতে লাফার্জ কর্তৃপক্ষ একের পর এক দুঃসাহসিক ষড়যন্ত্র শুরু করে। ঐতিহ্যবাহী চুনাপাথর ব্যবসা রক্ষায় খোলাবাজারে ক্রাশিং চুনা পাথর বিক্রির পরিকল্পনা বন্ধ রাখতে এখানের ব্যবসায়ী সংগঠন ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে লাফার্জ কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। কয়েকটি বৈঠকেও লাফার্জ কর্তৃপক্ষ খোলাবাজারে পাথর বিক্রি করবে না বলে আশ্বস্ত করেও এখানের ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতারণা করেছে তারা। এখানের মানুষকে প্রতারিত করতে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই লাফার্জ একের পর এক নাম পরিবর্তন করে ধাঁ ধাঁয় ফেলে রেখেছে। এলাকার ফসলী জমির মাটি গ্রাস করে ধ্বংস করে দিচ্ছে এখানের আমন জমি। বিদেশী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সব কিছুই সহ্য করেছে এখানের মানুষ। বর্তমানে এখানের ঐতিহ্য পাথর ও চুনা পাথর ব্যবসা ধ্বংস করতে এবং এখানের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের রুটি-রোজিতে ভাগ বসাতে ক্রাশিং চুনাপাথর বিক্রি করছে লাফার্জ কর্তৃপক্ষ। এখানের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের মতামত উপেক্ষা করে চুক্তিবিরোধী কার্যক্রম চালাচ্ছে লাফার্জ। লাফার্জের এহেন অবৈধ কার্যক্রম এখানের মানুষ আর বরদাস্ত করবে না। ব্যবসায়ীরা বলেন, ক্রাশিং চুনাপাথর খোলাবাজারে বিক্রি বন্ধ না করলে লাফার্জের বিরুদ্ধে শিল্প আইনে ও পরিবেশ ধ্বংসের কারণে উচ্চ আদালতে পৃথক মামলা দায়ের করা হবে। পাশাপাশি লাফার্জ পণ্য বয়কটসহ পরিবহন বন্ধে সড়ক ও নৌ-পথ অবরোধ করে রাখা হবে।
ব্যবসায়ীদের বক্তব্যের সাথে সর্বস্তরের ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ একাত্মতা ঘোষণা করেন। ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের আহবায়ক ও ছাতক লাইষ্টোন ইম্পোর্টার্স এন্ড সাপ্লায়ার্স গ্রুপের প্রেসিডেন্ট, সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাষ্ট্রিজের পরিচালক ও এফবিসিসিআই’র ভূমি মন্ত্রণালয় কমিটির চেয়ারম্যান আহমদ শাখায়াত সেলিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং ছাতক পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারী আবুল হাসান ও ব্যবসায়ী মুহাম্মদ ইয়ামিন শাহরিয়ারের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মত বিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলকাছ আলী, প্রবীন রাজনীতিবিদ আব্দুল ওদুদ, সৈয়দ আহমদ, ফজলু মিয়া চৌধুরী, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হেকিম, দেওয়ান আব্দুল খালিক রাজা, অদুদ আলম, সাইফুল ইসলাম, কাজী আনোয়ার মিয়া আনু, সাবেক চেয়ারম্যান এড. সুফী আলম সুহেল, ভোলাগঞ্জের চুনাপাথর ব্যবসায়ী শাহব উদ্দিন, মজিবুর রহমান মিন্টু, ব্যবসায়ী হাজী আবুল হায়াত, পৌর কাউন্সিলর ইরাজ মিয়া, ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল আজাদ, হাজী নুরু মিয়া তালুকদার, মাও. আকিক হোসাইন, আব্দুল হাই আজাদ, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মুক্তার হোসেন, আক্তার হোসেন, ফখর উদ্দিন স্বপন, সামছুর রহমান বাবুল, ট্রাক মালিক সমিতির সম্পাদক আবির আহমদ অভি, নৌ পরিবহন সমবায় সমিতির সভাপতি নজরুল চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধ সন্তান কমান্ডের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, উপজেলা ঠিকাদার ইউনিয়নের সভাপতি আইনুল হক, লেবার সর্দার সমবায় সমিতির সভাপতি তজম্মুল আলী, শ্রমিক নেতা কারা মিয়া প্রমুখ।
এ সময় প্রাক্তন অধ্যাপক ও ব্যবসায়ী হরিদাস রায়, ব্যবসায়ী মহন্ত কুমার রায়, ছাতক লাইষ্টোন ইম্পোর্টার্স এন্ড সাপ্লায়ার্স গ্রুপের সেক্রেটারী অরুন দাস, ছাতক পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি সেক্রেটারী সামছু মিয়া, ব্যবসায় হাজী নিজাম উদ্দিন, এনামুল হক ইদন, পৌর কাউন্সিল হাজী ছালেক মিয়া, সাজিদমুল হক, সাবেক কাউন্সিরর ধন মিয়া, ব্যবসায়ী হাজী আলী আজগর সোহাগ, কামাল আহমদ চৌধুরী, হাজী সুজন মিয়া, সালেহ আহমদ, হাজী আমির আলীসহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।