শিশু দিবাযত্ন

14

‘শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র’ উন্নত সমতাভিত্তিক দেশের এক অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে অর্ধাংশ নারী যদি উন্নয়নের অবধারিত কর্মধারায় সংযুক্ত থাকে তাহলে গৃহের কোমলমতি শিশুটির সার্বিক যত্নে যে সঙ্কট দেখা দেয় তা ক্ষুদ্র এই প্রজন্মের নিত্য জীবন বিপন্ন করে দিতে পারে। শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রটি আধুনিক এবং উন্নত প্রযুক্তির সমাজ ব্যবস্থার এক অনন্য পরিচর্যা কেন্দ্র। সমৃদ্ধির নিরবচ্ছিন্ন ধারায় গৃহী নারীরাও আর ক্ষুদ্র পারিবারিক আলয়ে আটকে থাকে না। বৃহত্তর সামাজিক আঙ্গিনায় হরেকরকম কর্মযোগে সম্পৃক্ত হওয়াও সময়ের অনিবার্য দাবি। ফলে কোলের কিংবা বেড়ে ওঠা শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আসে এক ধরনের বিপন্নতা। আগে একান্নবর্তী পরিবারে পেশায় নিযুক্ত নারীরা তাদের সন্তানদের ঘরে রেখে আসতে কোন ধরনের অস্বস্তিতে পড়তে হয়নি। বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যরা এই শিশুদের দেখভাল করতে বিশেষ যত্নবানও হতেন। কিন্তু যৌথ পরিবারের ভাঙ্গন আর একক পারিবারিক আলয় আধুনিক ও শিল্প সমৃদ্ধ দেশের এক অনিবার্যতা। নতুন শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি প্রবৃদ্ধির আর একটি সময়োপযোগী অভিযোজন। ফলে এক সময় কিছুটা পিছিয়ে পড়া নারী সমাজ উন্নয়নের প্রতিহত গতিধারায় নিরবচ্ছিন্ন হতে আর পেছন ফিরে তাকাতেও হয়নি। সঙ্গত কারণে একক পরিবারের ক্ষুদ্র আঙ্গিনাটিতে ঘরে সন্তানকে রেখে আসা তাও এক নিরাপত্তাহীনতার দুর্ভোগ। শুধু গৃহপরিচারিকার তত্ত্বাবধানে একা বাসায় রেখে আসা অনেক মায়ের জন্য উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার বিষয়। চাকরিজীবী মায়ের সমস্যাগুলো চিহ্নিত হতে থাকলেও প্রতিকারের উপায় সেভাবে ছিলও না। আমাদের মতো ক্ষুদ্র উন্নয়নশীল বাংলাদেশে তো নয়ই। কিন্তু বর্তমানে সময়ের অন্য আরও নিরাপদ ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে ‘শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র’।
কর্মজীবী মায়েরা তাদের সরকারী প্রাতিষ্ঠানিক সময়কে আমলে নিয়ে কাছে ধারেই শিশুটির পরিচর্যার ভার দিয়ে আসেন দিবাযত্ন কেন্দ্রে। শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রও এর থেকে আলাদা কোন বিষয় নয়। তবে বাংলাদেশে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র সীমিত আকারে গড়ে উঠলেও সেখানেও কঠিন অপশক্তি তার কূটকৌশল চালাতে ক্ষান্ত হয় না। সেখানে দরকার হয় আইনানুগ বিধি এবং গর্হিত অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। ৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন, ২০২১’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন। শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে অব্যবস্থাপনা হলে ১০ বছরের জেল-জরিমানা করার নির্দেশ এসেছে। শিশু সুরক্ষার এই স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানটিতেও ত্রুটি-বিচ্যুতি, গাফিলতি এবং হরেকরকম সঙ্কট মাথাচাড়া দেয়, যা পুরো কাঠামোর ওপর বিপন্নতার প্রভাব তৈরি করতে সময় নেয় না। নতুন এই আইন যথার্থভাবে কার্যকর হলে কেন্দ্রটি খুলতে সরকারের অনুমোদন গ্রহণ এবং সনদপত্র বাঞ্ছনীয়ই শুধু নয়, বাধ্যতামূলকও হবে।