মেয়ার্সের মায়াবী ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের হার

5

স্পোর্টস ডেস্ক :
একে একে অন্য সতীর্থরা আউট হয়ে ফিরতে থাকলেও কাইল মেয়ার্স খেলে গেলেন শেষ পর্যন্ত। আর নিজের অভিষেক টেস্টে মায়াবী ব্যাটিংয়ে রেকর্ড গড়া জয় উপহার দিলেন দলকে। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান মেয়ার্সের অপ্রতিরোধ্য ডাবল সেঞ্চুরির উপর ভর করে ৩ উইকেটে জয় তুলে নেয় সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এটা ক্যারিবীয়দের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতা ম্যাচ। আর টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার তালিকায় এর অবস্থান পাঁচ নম্বরে। এ জয়ের ফলে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল সফরকারীরা।
অথচ চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিনেও ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রণেই। কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভুলের কারণে পঞ্চম দিনটা নিজেদের করে নিতে পারেননি টাইগাররা। দিনের প্রথম দুই সেশনে উইন্ডিজের একটি উইকেটও ফেলতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। সেই সঙ্গে ক্যাচ ছাড়ার ঘটনাও ঘটেছে অহরহ। টাইগারদের এই ভুলগুলোকে পুঁজি করে নেন মায়ার্স-বোনাররা।
৩৯৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি সফরকারীদের। দলীয় ৩৯ রানে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার জন ক্যাম্পবেল। আউট হওয়ার পূর্বে করেন ২৩ রান। আরেক ওপেনার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ফেরেন ২০ রানে। দ্বিতীয় উইকেটে ব্যাট করতে আসা শেইন মসেলি আউট হন ১২ রানে। প্রথম তিন উইকেটই নেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
মাত্র ৫৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়া উইন্ডিজের পক্ষে মাঠে শক্তভাবে অবস্থান নেন কাইল মেয়ার্স এবং এনক্রমা বোনার। অভিষিক্ত এই দুই ব্যাটসম্যান ২১৬ রানের জুটি গড়ে রেকর্ডে নাম লেখান। টেস্ট ইতিহাসের দুই অভিষিক্ত ক্রিকেটারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি এটি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সর্বোচ্চ। আর চতুর্থ ইনিংসে দুই অভিষিক্ত ক্রিকেটারের সেরা জুটি এটিই। ২৪৫ বলে খেলে ৮৬ রান করা বোনারকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তাইজুল। পরের উইকেটে ব্যাট করতে নামা জার্মেইন ব্ল্যাকউড আউট হন ৯ রানে।
এ সময় জয়ের স্বপ্নই দেখছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু স্বপ্ন যেন স্বপ্নই থেকে গেল। ষষ্ঠ উইকেটে জশুয়া ডা সিলভাকে নিয়ে ১০০ রানের পার্টনারশিপ গড়লে জয়ের ভিত তৈরি হয়ে যায়। আর এরই মধ্যে অভিষেক ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেন মেয়ার্স। অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরি করা ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান এখন তিনি। তবে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে আর কেউই ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারেননি।
দলীয় ৩৯২ রানে ফেরেন সিলভা। তিনি করেন ২০ রান। পরের উইকেটে খেলতে আসা কেমার রোচ আউট হন শূন্যরানেই। এরপর রাখেম কর্নওয়ালকে সঙ্গে নিয়ে জয় তুলে নেন মেয়ার্স। ২১০ রানে মেয়ার্স এবং কর্নওয়াল ০ রানে অপরাজিত থাকেন।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় ম্যাচটি। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৪৩০ রান করে অলআউট হয়েছিল। মেহেদী হাসান মিরাজ করেছিলেন ১০৩ রান।
পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাট করতে নেমে ২৫৯ রান করে অলআউট হয়। সফরকারী দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। বল হাতে মিরাজ ৪টি উইকেট নিয়েছিলেন।
এরপর বাংলাদেশ নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ২২৩ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। প্রথম ইনিংস শেষে বাংলাদেশ ১৭১ রানের লিডে ছিল। তাই জয়ের জন্য ক্যারিবীয়দের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ৩৯৫ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৪৩০ (১৫০.২ ওভার)
(সাদমান ৫৯, তামিম ৯, শান্ত ২৫, মুমিনুল ২৬, মুশফিক ৩৮, সাকিব ৬৮, লিটন ৩৮, মিরাজ ১০৩, তাইজুল ১৮, নাঈম ২৪, মোস্তাফিজ ৩; রোচ ১/৬০, গ্যাব্রিয়েল ১/৬৯, কর্নওয়াল ২/১১৪, মেয়ার্স ০/১৬, ওয়ারিকান ৪/১৩৩, ক্রেইগ ০/১৩, বোনার ১/১৬)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ২৫৯ (৯৬.১ ওভার)
(ক্রেইগ ৭৬, ক্যাম্পবেল ৩, মোসেলে ২, বোনার ১৭, মেয়ার্স ৪০, ব্লাকউড ৬৮, জশুয়া ৪২, কর্নওয়াল ২, রোচ ০, ওয়ারিকান ৪, গ্যাব্রিয়েল ০*; মোস্তাফিজ ২/৪৬, সাকিব ০/১৬, মিরাজ ৪/৫৮, তাইজুল ২/৮৪, নাঈম হাসান ২/৫৪)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ২২৩/৮ডি (৬৭.৫ ওভার)
(সাদমান ৫, তামিম ০, শান্ত ০, মুমিনুল ১১৫, মুশফিক ১৮, লিটন ৬৯, মিরাজ ৭, তাইজুল ৩, নাঈম হাসান ১*; রোচ ০/১৭, কর্নওয়াল ৩/৮১, গ্যাব্রিয়েল ২/৩৭, ওয়ারিকান ৩/৫৭, বোনার ০/১৩, ক্রেইগ ০/৭, মেয়ার্স ০/১১)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস: ৩৯৫/৭(১২৭.৩ ওভার) (ব্র্যাথওয়েট ২০, ক্যাম্পবেল ২৩, মসেলি ১২, বোনার ৮৬, মেয়ার্স ২১০*, ব্ল্যাকউড ৯, সিলভা ২০, রোচ ০, কর্নওয়াল ০*; মোস্তাফিজ ৭০/১, তাইজুল ২/৯১, মিরাজ ৪/১১৩, নাঈম ১/১০৫)