শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হউক

19

এবার এইচএসসির ফল প্রকাশ হয়েছে এক বিরূপ পরিস্থিতিতে। করোনা মহামারীর শুরু থেকেই বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের পর এত দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকেনি আগে। এতে একদিকে যেমন শ্রেণীকক্ষে নিয়মিত পাঠদান ব্যাহত হয়েছে, অন্যদিকে এইচএসসিসহ নিয়মিত পরীক্ষাগুলোও অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। ২০২০ সালের উচ্চ মাধ্যমিকের প্রকাশিত ফলে সবাইকে পাস দেখানো হয়েছে। ফেল করেনি কেউ। কেননা পরীক্ষাই তো হতে পারেনি করোনার কারণে। ফল নির্ধারিত হয়েছে শিক্ষার্থীদের জেএসসি-জেডিসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে। এর ফলে সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ পেয়েছেন অনেক বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী, যা ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব রেকর্ড। এই পদ্ধতিতে মেধার যথাযথ মূল্যায়ন হয়েছে কিনা সে প্রশ্ন উঠবেই। উঠেছেও। যেমন জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েও এইচএসসিতে পাননি ৩৯৬ জন। আবার জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ না পেয়েও এবার পেয়েছেন ১৭ হাজার শিক্ষার্থী। এর সুষ্ঠু মীমাংসা হবে নিশ্চয়ই। অন্যদিকে রয়েছে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির সমস্যা, নানা মত ও জটিলতা। আসনের চেয়ে উত্তীর্ণের সংখ্যাও বেশি। অতঃপর যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবেন না, তাদের গতি কি হবে? সর্বোপরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলাও অনিশ্চিত। ফেব্রুয়ারির পর মার্চে খুলে দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। অবশ্য এসবের জন্য শিক্ষার্থীরা দায়ী নয়। সুতরাং ফলের জন্য তাদের সমালোচনা করা সমীচীন হবে না।
কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বের প্রায় সব দেশের জাতীয় অর্থনীতির সমূহ ক্ষতি করলেও সম্ভবত সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাব্যবস্থা। সত্যি বলতে কি, জাতীয় অর্থনীতির ক্ষয়ক্ষতি দুদিন আগে-পরে হলেও কমবেশি পুষিয়ে নেয়া যাবে। হয়ত বা কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করে মানিয়ে নেয়াও সম্ভব। কিন্তু শিক্ষার ক্ষেত্রে এমনটি বলা চলে না। করোনাক্রান্ত বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বিশেষ করে সব শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে ঝরে গেছে একটি বছর। শিক্ষা মন্ত্রী চাইছে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিরাপদ রাখতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে। প্রশ্ন হলো, এভাবে আর কতদিন? করোনার টিকার প্রথম ডোজ জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে প্রদান শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপের টিকা দেয়া হবে প্রথম সারির করোনাযোদ্ধা স্বাস্থ্যকর্মী ডাক্তার-নার্স-সাংবাদিক-ভিআইপি শ্রেণীর কর্মকর্তাদের। দেশের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের করোনার টিকার আওতায় আনতে অনেক সময় লাগবে। ততদিন পর্যন্ত শিক্ষার কি হবেÑ একেবারে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত? রেডিও-টেলিভিশন ইন্টারনেটসহ ডিজিটাল মাধ্যমে সীমিত পরিসরে কিছু শিক্ষাদানের চেষ্টা এবং পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব হলেও এর সুবিধা সর্বত্র সম্প্রসারিত করা যায়নি সঙ্গত কারণেই। অটোপ্রমোশন কিংবা অতীতের ফলের ভিত্তিতে রেজাল্ট দেয়াও সমাধান নয়। লটারিতে ভর্তিও নয়। উন্নত বিশ্ব এক্ষেত্রে কিছু সফল হলেও সর্বাংশে হয়নি। সুতরাং স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং ইউনিসেফের গাইড লাইন অনুযায়ী আগামীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে খুলে দেয়া যায় সেই পরিকল্পনা এবং যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে এখন থেকেই।