ওসমানীনগরে মৃত্যুর জট খুলছে না তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফাইজার, দাফন সম্পন্ন

23

শিপন আহমদ ওসমানীনগর থেকে :
ওসমানীনগরে তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফাইজার মৃত্যু নিয়ে জট খুলছে না রহস্যের। বুধবার বিকালে ময়না তদন্ত শেষে উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের রঙ্গিয়া গ্রামের মামার বাড়িতে ফাইজার লাশ নিয়ে আসলে বিদ্যালয়ের সহপাটি, শিক্ষক ও স্বজনদের কান্না ও আহাজারিতে এক হৃদয় বিধারক দৃশ্যের সৃষ্টি হতে দেখা যায়।উপস্থিত সবার দাবী এই ছোট শিশুটি কোনো ভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না। এছাড়া তার গায়ে একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। থানা পুলিশ ঘাতকদের ছেড়ে দিয়ে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে স্বাক্ষর নিয়ে অপমৃত্যুর মামলা রুজু করেছে। সার্বিক বিষয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেন খাসদরগাহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনন্দন কুমার দাসসহ উপস্থিত লোকজন।
এ সময় ফাইজা হত্যার সাথে জড়িতদের বিচার চেয়ে খাসদরগাহ বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ সমাবেশ করতে দেখা গেছে স্থানীয়দের। সন্ধ্যায় ফাইজার নানার বাড়িতে লাশের গোসল ও প্রথম জানাযার নামাজের পর রাত সাড়ে ৭টায় উপজেলার ব্রাহ্মণগ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে দশ বছরের শিশু ফাইজার লাশ উদ্ধারের তিন দিন অতিবাহিত হলেও এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা নিয়ে রয়ে গেছে ধূম্রজাল। থানা পুলিশ নিহতের পরিবারের অভিযোগ আমলে না নিয়ে শিশুর মায়ের স্বাক্ষর নিয়ে তড়িগড়ি করে থানায় অপমৃত্যুর মামলা রুজু করেছে অভিযোগ করেছেন মামা আবুল কালামসহ স্বজনরা। তাদের দাবী, পরিকল্পিত ভাবে শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। এটি আত্মহত্যা নয়। তারা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জন্য থানা পুলিশের কাছে করো জুড়ে মিনতি করে কোনো কাজ হয়নি। উল্টো পুলিশ ময়না তদন্তের দোহাই দিয়ে ঘাতকদের ছেড়ে দিয়ে হত্যা মামলার অভিযোগ আড়াল করে ময়না তদন্ত সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই কৌশলে অপমৃত্যুর মামলা রুজু করেছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ওসমানীনগর সার্কেল) রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, সার্বিক বিষয়ে তিনি অবগত রয়েছেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে শিশুটি নিজ থেকে আত্মহত্যা করে মারা গিয়েছে প্রাথমিক তদন্তে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্টে পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা যায়, সোমবার তুরণ মিয়া কাজে থাকাবস্থায় বিকেলে মা লায়লা বেগম মেয়েকে ঘরে রেখে ছোট ছেলেকে নিয়ে বাজারে যান। সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাড়িতে ফিরে বসত ঘরের বাঁশের তীরের সাথে মেয়েকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাৎক্ষণিক লায়লা বেগম চিৎকার শুরু করলে কয়েকজন ছুটে এসে ঘরের লাইট বন্ধ করে ওড়নার গিট্ট খুলে ফাইজার দেহ নামিয়ে আনে। এ সময় শিশুর মা লায়লা বেগম লাইট নিভানোর কারণ জানতে চেয়ে আরও জোরে চিৎকার শুরু করলেও তারা দ্রুত ফাইজাকে নিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে সোমবার রাতে ওসমানীনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ফাইজার তিন চাচাতো ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। মঙ্গলবার এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা রুজু করার পর তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।
ফাইজার মা লায়লা বেগম বলেন,আমার মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করে ঘাতকরা লাশ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখে তারা গা ডাকা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যক্রমে এ সময়েই আমি বাড়িতে এসে পড়ায় ঘাতকরা দ্রুত লাশ নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সার্বিক বিষয়ে থানা পুলিশকে জানানোর পরও পুলিশ রাতে ওসমানী হাসপাতালে আসার প্রয়োজন মনে না করে মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে এসেছিল। থানা পুলিশ হাসপাতালে দেরিতে আসায় ময়ন্ত তদন্ত সম্পন্ন করতে তিন দিন সময় লেগেছে। তবে সোমবার রাতেই থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক আমাদের বাড়িতে গিয়ে আমার ভাসুরদের তিন পুত্রকে আটক করে থানায় নিয়ে আসলেও কিন্তুু মঙ্গলবার আটকৃতদের অভিযুক্ত করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও থানা পুলিশ আমার অভিযোগটি আড়াল করে হুমকির মাধ্যমে আমার স্বাক্ষর নিয়ে তাদের ছেড়ে দিয়ে পারিবারিক কলহের কাল্পনিক ঘটনা বানিয়ে আমার ছোট শিশু ফাইজা আত্মহত্যা করেছে বলে বেড়াচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নেয়া বিবি বলেন, আমি একাধিকবারের জনপ্রতিনিধি হিসাবে এসব বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি খুব কাছ থেকে শিশু ফাইজার লাশটি দেখেছি। আমার দেখামতে তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এমনটি নিশ্চিত হয়েছি।
নিহত ফাইজার লাশের গোসলের কাজে নিয়োজিত থাকা উপজেলা আনছার ভিডিপির সহকারী কমান্ডার তাছলিমা বেগম ও নিকট আত্মীয় আছারুন বিবি বলেন, আমারা লাশের গোসল করানোর সময় একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও মুখমন্ডলসহ শরীরের একাধিক অংশে কামড় ও নকের আঁচর দেখেছি। তার গোপনাঙ্গও ক্ষত বিক্ষত রয়েছে। তাকে যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এটা লাশের গোসলের সময় নিশ্চিত হয়েছি।
ওসমানীনগর থানার ওসির দায়িত্বে থাকা অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মাকসুদুল আমিন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাৎক্ষণিক কয়েক জনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর অপমৃত্যুর মামলা রুজুর পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্টে পাওয়ার পর এ ব্যপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।