নারিকেলের জোড়া ২শ’ টাকা ॥ পৌষ সংক্রান্তিতে নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন

18

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে সিলেট নগরীর নিত্যপ্রয়োজনী পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। পৌষ সংক্রান্তির এই সুযোগে পিঠা তৈরীর দ্রব্যের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তারা সিন্ডিকেট করে এসব পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন বলে কেউ কেউ এ দাম বাড়ার কারণ হিসেবে মনে করছেন। নিত্যপ্রয়োজনী দ্রব্যের দাম এভাবে বাড়ার কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেরা এখন দিশেহারা। এমন চিত্র বর্তমান নগরীর বাজারগুলোতে।
গতকাল সোমবার দুপুরে নগরীর প্রধান প্রধান বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে একেক দোকানে একেক দাম। তাছাড়া পাইকারী ও খুচরা বাজারে নিত্যপণ্যে দ্রব্যের দামের পার্থক্য রয়েছে। কালিঘাটে যে নারিকেলের জোড়া ১৭০ টাকা থেকে ১৭৫ টাকা এর কয়েক গজ দুরে বন্দরবাজারে এক জোড়া নারিকেলের দাম ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আখালিয়া থেকে শংকর রায় নামের এক ব্যক্তি পৌষ সংক্রান্তি বাজার করতে সাড়ে ৪ হাজার টাকা নিয়ে কালিঘাটে আসেন। প্রথমে তিনি পৌষ সংক্রান্তির উপকরণ কিনতে একটি দোকানে প্রবেশ করেন। তিনি জানালেন, নারিকেল, খেজুরের পাঠালী গুঁড়, মচড়া গুঁড়, চিনি-চা পাতা, সরিষার তেল, সোয়াবিন তেল, কিসমিস, পেঁয়াজ, রসুন ও গরম মসলাসহ হত্যাদি কিনতে ১৭শ’ ৬০ টাকা খরচ হয়েছে তার। এর মধ্যে দোকানীর কাছে কথাবার্তা বলে এই টাকা থেকে মাত্র ১০ টাকা দোকানীকে কম দেন তিনি।
পরে তিনি এক বস্তা চাউল কিনতে বন্দরবাজারে যান। সেখানে গার্ডেন বাজার স্টোর থেকে পাইজন ৫০ কেজির এক বস্তা চাউল দরাকষাকষি করে ২৫০০ টাকা দরে ক্রয় করেন। দোকানী তাকে চাউলের বস্তায় কিছু কম না রেখে তাকে একটি চকলেট দিলেন। পরে তিনি দেখেন তার কাছে গাড়ী ভাড়ার টাকা নেই। এক পর্যায়ে তিনি কালিঘাটের ছুমাইয়া ষ্টোরের জিনিসপত্র ক্রয় করা সেই দোকানে গেলেন। সেখানে গিয়ে জিনিসপত্র ক্রয় করা সেই বস্তার মুখ খোলে এক জোড়া নারিকেল ১৭০ টাকা ও আধা কেজি চা পাতা ১৭০ টাকার পণ্যে ফেরত দিয়ে টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। তিনি বলেন, কি বলবো ভাই এই হলো বর্তমান বাজারের অবস্থা।
শিবগঞ্জ থেকে বাজার করতে আসা নেপাল কর্মকারের সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি জানালেন, প্রতিবছর যেখানে সংক্রান্তি উপলক্ষে ১০ হাজার টাকার খরচ হতো এবার পৌষ সংক্রান্তি ২০ হাজার টাকা লাগছে। তিনি জানান, যে যেভাবে পারছে নিত্যপণ্যে দ্রব্য সেইভাবে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। নিয়মিত প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি বাজার মনিটরিং সেলের টিম থাকতো তাহলে ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের বাজারের এতো আগুন লাগাতো না।
পৌষ সংক্রান্তি বাজার করতে বন্দরবাজারে আসা এক শিক্ষিকা জানালেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। যদি প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হতো তাহলে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকতো।
সোমবার নগরীর কালিঘাট ও বন্দরবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মিনিকেট চাউল ৫৮ টাকা, মালা প্রতি কেজি ৫৬ টাকা, মালা নতুন ৫০ টাকা, চিনিরগুড়া ১০০ টাকা, জিরাসিদ্ধ প্রতি কেজি ৬২ টাকা কাজল লতা প্রতি কেজি ৬২ টাকা, মালা প্রতি কেজি ৫৪ টাকা দরে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে দেশে নতুন চাল আমদানী করা হলেও বাজারে চাউলের দাম এখন পর্যন্ত কমে আসেনি গতকাল পর্যন্ত।
নগরীর কালিঘাট ছুমাইয়া ষ্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী মো: আব্দুল গফুর (মনা) জানালেন, বর্তমানে ১ লিটার খোলা ভূট্টা সরিষার (বোতল দিয়ে) তেল ১৩০ টাকা, সোয়াবিন ব্রেন্ড বুঝে ১০০ টাকা থেকে ১১৫ টাকা পর্যন্ত প্রতি লিটার। এছাড়া জিরা প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, ১নং খেজুর গুড় প্রতি কেজি ১৭০ টাকা, মচড়া গুড় ১৮০ টাকা, গরম মসলা, দারুচিনি, লং, এলাচ, গুল মরিচ দাম বেড়েই চলেছে। শুকনা মরিচ ২২০ টাকা, তেজি শুকনা মচির প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, নারিকেল প্রতি জোড়া ১৭০ টাকা আর বন্দরবাজারের ২০০ টাকা। লাল ডাল প্রতি কেজি ৭৫ টাকা, চানার ডাল প্রতি কেজি ৪৩ টাকা, হলুদ শুকনা কেজি ১৮০ টাকা, পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজি প্রতি, রসুন ১১০ টাকা, আটা প্রতি কেজি ৩২ টাকা, ময়দা ৩৫ টাকা, কিসমিস প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, ১নং চা-পাতা প্রতি কেজি ৩৪০ টাকা, প্যাকেটজাত গুড়া দুধ ব্রেন্ড বুঝে দাম, পাঁচপুরণ ৩২০ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ৭০ টাকা ও লবণ প্রতি কেজি ব্রেন্ড বুঝে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তি কেন জানতে চাউলে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস, দুর্যোগ ও পরিবহনের কারণে এবার জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। আর তিলু-বাতাসার দাম কেজি প্রতি ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে গত ৭ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার নগরী চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়।