স্বল্প গতির বাহন বন্ধ হউক

20

সড়ক-মহাসড়কে বেপরোয়া যান চলাচলে কত মূল্যবান জীবনের প্রদীপ নিভে যায় তা পরিমাপ করাও কঠিন। সড়কে মৃত্যুর মিছিল কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। তার চেয়েও বেশি বলা সঙ্গত যে, কোন প্রচেষ্টা কিংবা বিন্দুমাত্র উদ্যোগও একেবারে শূন্যের কোঠায়। শুধু চালকের বেপরোয়া গতিকে দুষলে মূল সমস্যাটি বের হয়ে পড়ে তা কিন্তু নয়। কোন ধরনের শৃঙ্খলাবোধের অনুপস্থিতি যা পথচারী, চালক কিংবা যাত্রীসাধারণেরও নৈতিক বোধের চরম স্খলন হিসেবে চিহ্নিত করলে খুব যে ভুল হবে, তা নয়। শীতকালে কুয়াশাজনিত কারণে যান নিয়ন্ত্রণে যে বিপত্তির অবতারণা হয় সেখানে শুধু চালকই মূল হোতা তা বলতে গেলে আরও অনেক কিছুই সামনে চলে আসে। প্রথমত, বড় বড় পথ দুর্ঘটনা রাত্রীকালীন পরিবহনেই বেশি ঘটে থাকে। আর সড়ক নিরাপত্তা বিধি কিংবা ট্রাফিক সঙ্কেত না মানার যে উদ্ধত মনোবৃত্তি, সেখানে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীরও দায় দায়িত্ব কম নয়। তার ওপর আছে অদক্ষ চালক, মেয়াদোত্তীর্ণ ত্রুটিবহুল যানবাহনের নিয়ন্ত্রণহীন গতি ছাড়াও ট্রাফিক পুলিশের অমনোযোগিতা কিংবা দায়িত্বের প্রতি চরম অবহেলাকেও অপরাধের কাতারে দাঁড় করানো যায়। বড় যন্ত্রযানই শুধু নয়, অতি ক্ষুদ্র দুই চাকার ছোট্ট যান ও কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে যে মাত্রায় যানটিকে চালিত করে বিভিন্ন ফাঁক ফোকড়ে, তাও সড়ক দুর্ঘটনাকে লাগামহীন মাত্রায় নিয়ে যেতে সময় নেয় না।
এদিকে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়ে যাওয়ার আতঙ্কে সবাই দিশেহারা। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন সড়ক দুর্ঘটনার ওপর জরিপ চালিয়ে এক প্রতিবেদন বের করেছে। তাতে দেখা যায়, গত বছর (২০২০ সাল) ডিসেম্বর মাসেই সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ৪০২টি। এই বিধ্বংসী যন্ত্রযানের দাপটে প্রাণহানি ঘটে ৪৬৪ জনের। ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় আহত হয় আরও ৫১৩ জন। এখানেও সম্মুখসারিতে মোটরবাইক। ৩২% নিহত হলেন বাইক আরোহী কিংবা চালক। গত বছর পাঁচ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে সড়ক দুর্ঘটনায়। এছাড়াও মহাসড়কে স্বল্পগতির যানচলাচলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা একান্ত আবশ্যক। পর্যায়ক্রমে বৃহত্তর সড়ক মহাসড়কে ডিভাইডার প্রস্তুতও মানুষের প্রাণহানিকে ঠেকাতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নও এক্ষেত্রে অন্যতম বিবেচ্য বিষয়।