পাশবিক নির্যাতনের শাস্তি দ্রুত প্রয়োগ হউক

11

নারী ও কোমলমতি শিশুর ওপর অকথ্য নির্যাতন-নিপীড়ন বর্তমান সময়ের এক পাশবিক উন্মত্ততা। আইন-আদালত, শাস্তি, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ কোন কিছুতেই এমন জঘন্য অপকর্মকে থামানো যাচ্ছে না। সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান কার্যকর হওয়ার পরও এমন নৃশংস অত্যাচার বন্ধের বিন্দুমাত্র আলামত পাওয়া যাচ্ছে না। বরং তা আরও ভয়াবহ আকারে বেড়ে যাওয়ার চিত্র দৃশ্যমান হচ্ছে। নারী ও শিশু ঘরে-বাইরে কোথাও আজ নিরাপদ নয়। নিরাপত্তাহীনতার বেষ্টনীর আবর্তে পড়ে যাওয়া শিশু-কিশোরীরা সব সময় উদ্বিগ্ন আর উৎকণ্ঠায় জীবনের মূল্যবান দিনগুলো কাটাতে থাকে। যখন কোন শিশুকন্যা আর উদীয়মান কিশোরীর জীবন গড়ার উদ্দীপ্ত প্রত্যয়ে শিক্ষা জীবনকে আলিঙ্গন করার কথা, সেখানে তাদের হরেক রকম বিপর্যয় আর সম্ভ্রহানিতার ব্যাপারগুলো হরহামেশাই ঘটে যাচ্ছে। বিব্রতকর অবস্থায় অসহায় পিতা-মাতাও। ধর্ষণের শিকার নারীর নিপীড়নের চিত্র সবাইকে উদ্বিগ্ন করলেও অভিযোগকারীরা মামলা করতেও ভয় পায়। অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মামলা নিতেও আপত্তি জানায়। কারণ দুর্বৃত্তায়নের খলনায়করা স্থানীয় মস্তান কিংবা এত বেশি প্রভাবশালী, যারা অপরাজনীতির ছত্রছায়ায় তৈরি হওয়া এক জঘন্য অপরাধী চক্র। এমনকি চার্জশীট দেয়ার পরও আটককৃত অভিযুক্তরা জামিনে ছাড়া পেয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে দাপট দেখিয়ে বেড়ায়। এর পরও যারা আইনী যাঁতাকল থেকে বেরুতে পারে না তাদের বিচারিক কার্যক্রমও দীর্ঘসূত্রতার জালে আটকা পড়ে। শেষমেশ রায় বেরোনোর পর কার্যকর হওয়া সেও এক লম্বা সময়ের ব্যাপার। রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করা থেকে শুরু করে বৈধ কার্যক্রমকে আরও জটিলতায় ফেলে দেয়া- সেটাও প্রচলিত অব্যবস্থাপনার এক কঠিনতম প্রক্রিয়া।
সঙ্গত কারণে শুধু শারীরিক নির্যাতন নয়, খুন করার অপরাধেও তারা অভিযুক্ত হয়। এমন অমানবিক, মধ্যযুগীয় বর্বরতা করেও কাদের মদদে তারা শাস্তি থেকে অব্যাহতি পেয়ে যায় তাও বিবেচনার দাবি রাখে। অপহরণ, ধর্ষণ আর হত্যার মতো পাশবিক নিমর্মতা চালানোর বিচারে যাদের মৃত্যুদণ্ড প্রদান করল আদালত, তা কতদিনে কার্যকর হবে, কত সময় গড়াবে তা বলা মুশকিল।
দোষীরা এই শাস্তি কবে নাগাদ ভোগ করবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। ফলে অত্যাচার, নিপীড়নও থেমে যাওয়ার কথা নয়। সঙ্গত কারণে থামেওনি। বরং আরও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার সবাই দিশেহারা, উৎকণ্ঠিত। তাই শুধু সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নয়, ন্যূনতম কার্যদিবসে বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পাদন করাও সময়ের দাবি। স্বল্প সময়ে বিচারিক ব্যবস্থা তার গতি ফিরে পেলে আইনও তার নিজস্ব নিয়মে এগিয়ে যাবে।