জলবায়ুর ঝুঁকি

7

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে ক্রমেই বেশি করে গলছে মেরু অঞ্চলের বরফ। বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। বাংলাদেশের উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলে তার প্রভাব ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। স্বাভাবিক জোয়ারেও তলিয়ে যাচ্ছে অনেক এলাকা। অন্যদিকে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বাড়ছে খরাপ্রবণতা। বন্যা-ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের পরিমাণ ও তীব্রতা দুটিই বাড়ছে। এসব কারণে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি। ২০১৮ সালে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের তিন-চতুর্থাংশ বা প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক নিচে নেমে যাবে। অথচ প্যারিস চুক্তি সম্পাদনের পাঁচ বছর পরও চুক্তির লক্ষ্য অর্জনের ধারেকাছে পৌঁছাতে পারেনি বিশ্ব। এই অবস্থায় শনিবার প্যারিস চুক্তির পঞ্চম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত দেশগুলোকে দ্রুত তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণের আহ্বান জানিয়েছেন। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) বর্তমান প্রেসিডেন্ট শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ‘মিডনাইট সারভাইভাল ডেডলাইন ফর দ্য ক্লাইমেট’ চালুর কথা তুলে ধরে প্রতিটি দেশকে ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতের মধ্যে বর্ধিত প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করার আহ্বান জানান।
২০৫০ সাল খুব একটা দূরে নয়। আর ১৩ কোটি মানুষের জীবনযাত্রার মান তখনই নিচে নামবে, এমনও নয়। এই প্রক্রিয়া চলমান। বহু মানুষ পরিবেশগত উদ্বাস্তু হয়ে পড়বে। ভূগর্ভে নোনাপানির আগ্রাসন এরই মধ্যে দেশের মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত চলে এসেছে। এটি আরো বাড়বে। বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে কৃষিতে। জনস্বাস্থ্যের ওপরও জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাব পড়বে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক তহবিল খুব কমই পাওয়া গেছে। বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিবছর জলবায়ু পরিবর্তন সংবেদনশীল প্রকল্পের জন্য ২০০ কোটি ডলার ও অভিযোজন ব্যবস্থার জন্য ৩০০ কোটি ডলার ব্যয় করছি।’ এর আগে ১০০ বছরমেয়াদি বদ্বীপ পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে।
আমরা জানি, যত উচ্চাভিলাষী উদ্যোগই নেওয়া হোক না কেন, উন্নত দেশগুলো এগিয়ে না এলে সেগুলো খুব একটা সফল হবে না। আমরা আশা করি, প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী তাপমাত্রার বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে বিশ্বনেতারা একযোগে কাজ করবেন। জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে থাকা দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক তহবিলের জোগান নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি তাদের বিশ্বমানের প্রযুক্তি আর গবেষণালব্ধ জ্ঞান হস্তান্তর করতে হবে।