সিলেট জেলা বিএনপির একাংশের সংবাদ সম্মেলন ॥ সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কার্যক্রম স্থগিত করে শক্তিশালী কাউন্সিল করার দাবি

8
নগরীর একটি হোটেলের কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন সিলেট জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য এডভোকেট মো: আশিক উদ্দিন (আশুক)।

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট জেলা বিএনপিতে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একপেশে কার্যক্রম স্থগিত করে অবিলম্বে সুন্দর ও শক্তিশালী কাউন্সিল করার আহ্বান জানিয়েছেন আহবায়ক কমিটিতে থাকা নয়জন সদস্য। তারা বলছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জেলা বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্তরা পরস্পর বিরোধী ও হঠকারী কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যার কারণে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির পথ অবরূদ্ধ করে চক্রান্তকারীচক্র দলকে কুক্ষিগত করেও রেখেছে। এতে করে দলের অভ্যন্তরে কোন্দল সৃষ্টিও হচ্ছে।
সোমবার নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন তারা। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিলেট জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য এডভোকেট আশিক উদ্দিন।
তিনি বলেন, সিলেট জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠনের প্রায় প্রায় ১ বছর পার হয়েছে। এরপরেও এ কমিটির আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার কার্যকর সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি। উল্টো তিনি নিরপেক্ষতার পরিবর্তে সাবেক সভাপতি আবুল কাহের শামীম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের নির্দেশনা অনুসারেই একপেশে ভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন। এ কারণে জেলা বিএনপির সকল কার্যক্রমে শিথিলতা নেমে এসেছে।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে তিনি গত ২৭ ফেব্র“য়ারি ২১ সদস্যের একপেশে উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়। তখন প্রতিবাদের মুখে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল এসব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে দেন। এরপর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া সাংগঠনিক অচলাবস্থা নিরসনে প্রতিটি উপজেলা কমিটিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে আমাদের পক্ষের ৬ জন নতুন সদস্যের তালিকা দেয়ার নির্দেশ দেন। কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলনও তালিকা চাইলে আমরা তা সরবরাহ করি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, সাবেক সভাপতি ও সম্পাদক চক্রান্ত করে মিলন ও বর্তমান আহবায়ককে ব্যবহার করে আমাদের ৬ জনের নাম না দিয়ে আবারও নিজের পক্ষের লোকজনের নাম ঘোষণা করেন। এতে জেলা বিএনপি মহাসংকটের মুখে পড়েছে।’
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘সাবেক সভাপতি ও সম্পাদক আহবায়ক কমিটির অধিকাংশ সদস্যকে না জানিয়ে একতরফাভাবে বিভিন্ন সমন্বয় কমিটি গঠন করে উপজেলায় বিতরণ করেছেন। এছাড়া আগামী কাউন্সিলে নিজেদের গ্র“পকে বিজয়ী করাতে তারা উপজেলাগুলোতে নিজেদের পক্ষের লোকদের নিয়ে ঘরে বসে ইউনিয়ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ইউনিট কমিটি ঘোষণা হলেও তারা ওই তালিকা থেকে নিজেদের অপছন্দের নেতাদের নাম কেটে কেটে নিজেদের গ্র“পের লোকজনের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছেন। যা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকেও তারা জানিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সিলেট জেলা বিএনপি সাংগঠনিক কাঠামো একেবারে ভেঙে পড়েছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বিভাগীয় নেতৃবৃন্দের উদাসীনতায় সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন থেকে আসা ব্যক্তিরা শীর্ষ পদে বসে এসব কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের স্বার্থের প্রতি তাদের আন্তুরিকতাও আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। এ অচলাবস্থা নিরসন না হলে আগামী কাউন্সিল হবে কি না, এ নিয়ে সন্দেহও রয়েছে।’
সুযোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির পথ অবরুদ্ধ করে চক্রান্তকারীরা আজ দলকে কুক্ষিগত করে রেখেছে উল্লেখ করে এডভোকেট আশিক উদ্দিন বলেন, কোন্দল সৃষ্টিকারীর মাধ্যমে এমন পরিস্থিতি থেকে সিলেট জেলা বিএনপিকে বাঁচাতে এখন প্রয়োজন কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ। কারণ জেলা আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদারকে পকেটে পুরে আবুল কাহের শামীম গংদের কার্যক্রম দলটাকে মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নিজেদের সুবিধামতো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। একটি শক্তিশালী কাউন্সিলের জন্য এসব কার্যক্রম কঠিন অন্তরায়। তাই তিনি এসব ব্যাপারে দ্রুত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- সিলেট জেলা বিএনপি আহবায়ক কমিটির সদস্য কাইয়ুম চৌধুরী, আব্দুল মান্না, এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, আহমেদুর রহমান চৌধুরী, নাজিম উদ্দিন লস্কর, ইশতিয়াক সিদ্দিকী, এডভোকেট হাসান আহমদ পাটোয়ারী রিপন, মাহবুবুল হক চৌধুরী প্রমুখ।