কমলগঞ্জে মণিপুরী সম্প্রদায়ের মহারাসলীলা আজ

7

পিন্টু দেবনাথ কমলগঞ্জ থেকে :
দুটি পাতা একটি কুঁড়ি প্রকৃতির অপার লীলাভূমি সমৃদ্ধময় মুণিপরীদের ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণের মহারাসলীলা আজ সোমবার (৩০ নভেম্বর) মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরের অনুষ্ঠিত হবে। সিলেটের ক্ষুদ্র্র নৃ-তাত্ত্বিক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্যতম বিশ্বনন্দিত সাংস্কৃতিক ধারক মণিপুরী সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব হচ্ছে মহারাসলীলা। ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। দুপুর থেকে রাখাল নৃত্যের মূর্চনায় শুরু হবে রাসোৎসব। করোনাকালীন সময়ে গোটা বিশ্ব স্তব্ধ হয়ে আছে। তাই এমন সময়েও যেন রাসের সৌন্দর্য মানুষকে মোহিত করে সেই চেষ্টায় মন্ডপে মন্ডপে সব কারুকাজ প্রস্তুত রয়েছে। তবে বৈশি^ক মহামারী করোনা পরিস্থিতির কারণে ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব এবার সীমিত পরিসরে করা হবে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য্যরে মধ্য দিয়ে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মহারাস বলতে প্রেস রসকে বুঝানো হয়েছে। বস্তুত রস শব্দ থেকেই রাস শব্দের উৎপত্তি। রস আস্বাদনের রাধাকৃষ্ণের লীলানুকরণে নৃত্য ও গীতের মাধ্যমে যে উৎসব উৎযাপন করা হয় তাই রাসোৎসব।
এবছর কমলগঞ্জের মাধবপুর জোড়া মন্ডপে পূর্ণ হচ্ছে ১৭৮তম রাস উৎসব। মাধবপুরের রাসমেলার আয়োজক হচ্ছে মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘ। মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়। উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড়া মন্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। তুমুল হৈচৈ, আনন্দ উৎসাহ ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খ ধ্বনীর মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মের অবতার পুরুষ শ্রী কৃষ্ণ ও তার সখি রাধার লীলাকে ঘিরে এই একটি দিন বছরের আর সব দিন থেকে ভিন্ন আমেজ নিয়ে আসে কমলগঞ্জবাসীর জন জীবনে।
অন্যদিকে ১৯৮৬ সাল থেকে কমলগঞ্জের আদমপুরে মণিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায় আয়োজন করছে পৃথক রাসমেলার। আদমপুরে পাশাপাশি দুটি স্থানে হবে রাস উৎসব। আদমপুর জোড়া মন্ডপ ও মণিপুরী কালচারেল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে। এখানেও থাকবে যথারীতি রাখাল নৃত্য ও রাসলীলা। তবে মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া ও মণিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায় আলাদা স্থানে আয়োজন করলেও উৎসবের অন্ত:স্রোত, রসের কথা, আনন্দ-প্রার্থনা সবই একই। উৎসবের ভেতরের কথা হচ্ছে বিশ্বশান্তি, সম্প্রীতি ও সত্যসুন্দর মানবপ্রেম।
মাধবপুর ও আদমপুরে রাসমেলার আয়োজকরা জানিয়েছেন, মহারাসলীলাল মূল উপস্থাপনা শুরু হবে দুপুর থেকে ‘গোষ্ঠলীলা বা রাখালনৃত্য’ দিয়ে। গোষ্ঠলীলায় রাখাল সাজে কৃষ্ণের বালকবেলাকে উপস্থাপন করা হবে। এতে থাকবে কৃষ্ণের সখ্য ও বাৎসল্য রসের বিবরণ। গোধূলি পর্যন্ত চলবে রাখালনৃত্য। রাত ১১টা থেকে পরিবেশিত হবে মধুর রসের নৃত্য বা শ্রীশ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলানুসরণ। এই রাসনৃত্য ভোর (ব্রাহ্ম মুহূর্ত) পর্যন্ত চলবে। এই রাসনৃত্যে গোপিনীদের সাথে কৃষ্ণের মধুরলীলাই কথা, গানে ও সুরে ফুটিয়ে তুলবেন শিল্পীরা।
মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ ও আদমপুর মহারাস উদযাপন কমিটির অন্যতম নেতা ইবুংহাল সিংহ শ্যামল বলেন, বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সীমিত পরিসরে ধর্মীয় বিধানমতেই রাসলীলা অনুষ্ঠিত হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক ও কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আরিফুর রহমান বলেন, রাসোৎসবে নিরাপত্তার জন্য দুই জায়গাতেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে নিরাপত্তায় পুলিশের তিন স্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবে এবছর করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে মণিপুরী রাসলীলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলার অনুমতি দেয়া হয়নি। লোকসমাগম সীমিত করা হবে।