জার্মানির জালে স্পেনের ৬ গোল

6

স্পোর্টস ডেস্ক :
একের পর এক গোল ঢুকছে জালে, আর সেটা অসহায় হয়ে দেখছে গোলরক্ষক- এমনকি হিটলারকেও কখনো জার্মানির এমন অসহায় আত্মসমর্পণ দেখতে হয়নি। উয়েফা নেশন্স লীগের ম্যাচে স্পেনের কাছে ৬-০ গোলে হেরেছে জার্মানি। ১৯৩১ সালের পর এটাই তাদের সবচেয়ে বড় পরাজয়। আর প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে এমন হার তাদের কখনো দেখতে হয়নি।
ইউক্রেনের মাঠে হার, সুইজারল্যান্ডের মাঠে ড্র; দুই অ্যাওয়ে ম্যাচে হোঁচটের পর স্পেনের জয়ের বিকল্প ছিল না। খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে স্বমহিমায় জ্বলে উঠল দল। পরিকল্পিত আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলা ২০১০ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হয়ে ম্যানচেস্টার সিটির তরুণ উইঙ্গার ফেররান তোরেসের দারুণ হ্যাটট্রিকে জার্মানিকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে দারুণ এক রাত উদযাপন করেছে আসরে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা লুইস এনরিকের দল।
মঙ্গলবার রাতে সেভিয়ায় অনুষ্ঠিত ‘এ’ লীগের ৪ নম্বর গ্রুপের ম্যাচটি ড্র করতে পারলেই শেষ চারে যাওয়া নিশ্চিত করে ফেলত জার্মানি। অথচ তারা বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়।
১৭ মিনিটে কাঙ্ক্ষিত গোল পেয়ে যায় স্পেন। দূরের পোস্টে ফাবিয়ান রুইসের নেয়া কর্নারে লাফিয়ে কোনাকুনি হেডে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন জুভেন্টাস স্ট্রাইকার মোরাতা। ৩৩ মিনিটে নিজের হ্যাটট্রিকের প্রথম গোলটি করেন ফেররান তোরেস। বাম পাশ দিয়ে উঠে আসা হোসে গায়ার কাছ থেকে বল পান রুইজ। তিনি সামনে বাড়িয়ে দেন ফেররানের উদ্দেশ্যে, যিনি সহজেই গোলরক্ষক ন্যুয়্যারকে পরাস্ত করেন। ৩৮ মিনিটে রুইজের আরেকটা কর্নার থেকে গোল করেন রদ্রি। ৩-০ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে স্পেন।
বিরতির পর ৫৫ মিনিটে জার্মানির ঘুরে দাঁড়ানোর আশা বলতে গেলে শেষ হয়ে যায়। পাল্টা আক্রমণে হোসে গায়ার পাস ডি-বক্সে ফাঁকায় পেয়ে অনায়াসে নিজের দ্বিতীয় ও দলের চতুর্থ গোলট করেন তোরেস। ১৬ মিনিট পর ফাবিয়ান রুইজের পাস পেয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন ফেররান তোরেস। ম্যাচ শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে বাঁ প্রান্ত থেকে হোসে গায়ার পাস নিয়ে জার্মানির কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকে দেন মিকেল ওয়ারসাবাল। ৬-০ গোলে জিতে মাঠ ছাড়ে স্প্যানিশরা।
এই পরাজয়কে ২০১৪ সালে জার্মানির কাছে ব্রাজিলের ৭-১ গোলে হারের সঙ্গে তুলনা করেছেন জোয়াকিম লো। জার্মানির কোচের ভাষ্য, আমরা বেশি সাহসী হতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুই কাজ করেনি। ১-০ গোলে পিছিয়ে যাওয়ার পরেই আমরা সব পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছি। আমরা পজিশন, জায়গা সব ছেড়ে দিয়েছি। কোনো রকমের শৃঙ্খলা, কোনো সমন্বয় কিছুই ছিল না। সবকিছুই ভুল হয়েছে। এটা ছিল অনেক, অনেক অন্ধকার একটা রাত। ২০১৪ সালে ব্রাজিলের সবকিছু যেমন আমাদের বিপক্ষে ভেঙে পড়েছিল কালও তেমন হয়েছে। আশা করবো একটা শুধু একটা ম্যাচ, এখন আমাদের এই ম্যাচে কী কী ভুল হয়েছে সেটা দেখতে হবে।
এমনিতেই কাল চোটের জন্য ছিলেন না কিমিখ, করোনা ভাইরাসের জন্য ছিলেন না হ্যাভার্টজ। কিন্তু পরীক্ষিত অনেককেই রেখেছিলেন লো। তবে প্রশ্ন উঠেছে গত বছর জাতীয় দল থেকে মুলার, বোয়াটেং, হামেলসদের বিদায় করে দেয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল কি না। লো একরকম বলেই দিয়েছেন, এই তিন জনের জার্মান ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
২০১৮ সালে বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায়ের পর এমন চাপে পড়েছিলেন লো। শেষ পর্যন্ত সে যাত্রা চাকুরি টিকে যায় তার। দুই বছরের মধ্যে লক্ষণীয় কোনো উন্নতি ঘটাতে পারেননি দলের, এবার স্পেনের কাছে ছয় গোল খেয়ে বিপর্যয়ের ষোলকলাই পুর্ণ হলো। সামনে আরও অনেক কঠিন সময় যে লোয়ের জন্য অপেক্ষা করছে, তা বুঝতে আর বাকি নেই।
ছয় ম্যাচে তিন জয় ও দুই ড্রয়ে ১১ পয়েন্ট নিয়ে পরের পর্বে পা রাখলো স্পেন। দুই জয় ও তিন ড্রয়ে জার্মানির পয়েন্ট ৯। এক ম্যাচ করে কম খেলা ইউক্রেন ও সুইজারল্যান্ডের পয়েন্ট যথাক্রম ৬ ও ৩।