লাউয়াছড়ায় ১৮ প্রজাতির নতুন প্রাণীর সন্ধান, পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য

49

কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রায় ৬ বছর ধরে চলা দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও উভচর শ্রেণির প্রাণী পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ১১টি প্রজাতির প্রাণীর অস্তিত্ব বাংলাদেশে নতুন। অন্যদিকে আগে ছিল এমন ২৩ প্রজাতির সরীসৃপ ও উভচর প্রাণী পাওয়া যায়নি। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের উভচর ও সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর ওপর এক গবেষণায় এ তথ্য জানা যায়।
২০১১ সাল থেকে শুরু হওয়া ২০১৭ পর্যন্ত ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স এর উদ্যোগে, ক্যারিনাম ও বাংলাদেশ বন-বিভাগের সহযোগিতায় এই গবেষণাটি চালানো হয়।
গবেষণা দল ও বন-বিভাগ সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ডেলটা স্টেট ইউনিভার্সিটির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ড. এ এইছ এম আলি রেজা তার পি এইচ ডি গবেষণায় ২০১০ সালে লাউয়াছড়ায় ৪৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ১৫ প্রজাতির উভচর প্রাণীর সন্ধান পান। নতুন গবেষণায় ৫১ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ২০ প্রজাতির উভচর প্রাণী শনাক্ত করা হয়। সর্বশেষ গবেষণামতে এই জাতীয় উদ্যানে সর্বমোট ৭১ প্রজাতির উভচর ও সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর সন্ধান মিলেছে। বাংলাদেশে নতুন প্রাপ্ত ১১ টি সরীসৃপ ও উভচর প্রাণীর বাংলা নামকরণ প্রক্রিয়াধীন আছে।
গবেষক দলের প্রধান বন্যপ্রাণী গবেষক শাহারিয়ার রহমান সিজার জানান, আগের গবেষণায় ২৩ প্রজাতির যেগুলো লাউয়াছড়ায় আছে বলে ভাবা হত সেগুলো আমাদের গবেষণাতে ধরা পড়েনি। সেগুলো ভুলভাবে শনাক্ত করা হয়েছে ধরে নিয়ে আমরা তা লিস্ট থেকে বাদ দিয়েছি। যেহেতু আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছি তাই যা পেয়েছি তাই শুধু অ্যাড করেছি।
তিনি জানান, এই গবেষণা কাজের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও তার আশপাশের এলাকার উভচর ও সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন করা। ২০১১ সালে বাংলাদেশ পাইথন প্রজেক্টের অধীনে এই বনে অজগর সাপের ওপর গবেষণা কাজ শুরু হলে, গবেষকদলের সামনে উঠে আসতে থাকে এই উদ্যানের জীববৈচিত্র্যের নানা ক্ষেত্র।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পরিচালিত আগের যে গবেষণা কাজ ছিল সেগুলোর ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল যার কারণে অনেক প্রজাতির ভুলভাবে নির্ধারণ করা হয়েছিল। উভচর শ্রেণির প্রাণীদের মধ্যে ১৯ প্রজাতির ব্যাঙ এবং মাত্র ১ প্রজাতির সিসিলিয়ান জাতীয় প্রাণী পাওয়া গেছে। সরীসৃপ শ্রেণির মধ্যে পাওয়া গেছে ২ প্রজাতির কচ্ছপ, ১৪ প্রজাতির টিকটিকি জাতীয় (২ প্রজাতির গুইসাপ সহ) এবং ৩৫ প্রজাতির সাপ- যার মধ্যে রয়েছে মাত্র ৬ প্রজাতির বিষাক্ত সাপ। এই প্রজাতি গুলির মধ্যে রাজ গোখরা, অজগর ও পাহাড়ি হলুদ কচ্ছপ।
গবেষক দল জানায়, বনের মধ্যে যে প্রতিবেশগত সংকট সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রাণীদের আবাসস্থল নষ্ট হয়েছে তাতে আগামী ১০/১৫ বছরে বেশ কিছু প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বনে পানির সংকট আছে। পাহাড়ি যে ছড়া আছে তার ওপর অপরিকল্পিত কালভার্ট এবং আশপাশের চা বাগানে যে কীটনাশক দেওয়া হচ্ছে তা বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকিতে ফেলবে। বনে গাছের সংখ্যা কমে যাওয়াও প্রাকৃতিক পানির উৎস কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
এ বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমরা গবেষণাপত্রটি পেয়েছি। পর্যবেক্ষণ করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বন্যপ্রাণীর জন্য সমস্যাগুলো সমাধানের ব্যাপারে আমাদের আন্তরিকতা এবং দায়িত্ববোধ থাকবে।