শিববাড়ীতে মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে কিশোর খুন

8

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী জৈনপুর এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে এক কিশোর নির্মমভাবে খুন হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে জহিরুল ইসলাম (১৬) নামে ওই কিশোর সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। নিহত জহিরুল ইসলাম সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা থানার সিরাই গ্রামের নজরুল মিয়ার পুত্র। বর্তমানে সে পরিবার নিয়ে কদমতলী জেসমিন ভিলায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছিল। সে পেশায় একজন রং মিস্ত্রি।
এদিকে গতকাল ময়না তদন্ত শেষে নিহত কিশোরের লাশটি হাসপাতালের হিমাগারে রেখেছে মোগলাবাজার থানা পুলিশ। গত ২৬ অক্টোবর সোমবার সন্ধ্যা রাতে শিববাড়ী মোড় সংলগ্ন রেলগেইটের ২শ’ মিটার দক্ষিণে রেল লাইনের উপর এ ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয়, পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন আগে জৈনপুর হাওরের বাড়ী এলাকার কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ফখরুল, নিহত জহিরুল ইসলামকে তার সাথে খুচরা মাদক ব্যবসায় জড়িত হতে অনুরোধ করে। তখন নিহত জহিরুল ইসলাম ফখরুলকে জানায় আমি এই ব্যবসা করব কেন, আমি রং মিস্ত্রির কাজ করি। আমি এইসব করতে পারব না। পরবর্তীতে এই ঘটনাটি নিহত জহিরুল ইসলাম তার পিতা-মাতাকে জানায়। তখন নিহত জহিরুল ইসলামের পিতা-মাতা জহিরকে এই ব্যবসা করতে নিষেধ করেন। কিশোর জহিরুল ইসলাম এই কথাটি জনৈক ব্যক্তির সাথে আলাপ করলে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ফখরুল ইসলাম জানতে পেরে জহিরুলে উপর ক্ষেপে যায়। গত ২৬ অক্টোবর সোমবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে জহিরুল বাসা থেকে পূজার অনুষ্ঠান দেখতে বের হলে শিববাড়ী এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী ফখরুলের সাথে দেখা হয়। এসময় ফখরুল ও তার ৪/৫ জন সহযোগী নিয়ে ফখরুলের মাদক ব্যবসার কথা অন্যকে জানানোর জের ধরে জহিরুলের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ফখরুল তার সঙ্গী সাথীদের নিয়ে জহিরকে জৈনপুর হাওর বাড়ী এলাকায় নির্জন স্থানে নিয়ে জহিরুলের শরীরে ইট, পাথর দিয়ে আঘাত করে মারাত্মক ভাবে জখমপ্রাপ্ত করে শিববাড়ী মোড় সংলগ্ন রেলগেইটের ২শ’ মিটার দক্ষিণে রেল লাইনের উপর ফেলে দেয়। এ সময় পথচারীদের আনাগোনা টের পেয়ে ফখরুল ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়। তখন স্থানীয় লোকজন ও পথচারীরা ঘটনাটি আঁচ করতে পেরে তারা শিববাড়ী মন্দিরের টহলরহ পুলিশ সদস্যদের ঘটনাটি জানায়। এক পর্যায়ে টহলরত পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় জহিরুল ইসলামকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করে। এদিকে, গতকাল বুধবার দুপুরে মোগলবাজার পুলিশের সার্বিক সহযোগিতায় সিলেট রেলওয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তমাখা ইট ও জহিরুল ইসলামের পরিহিত একজোড়া স্যান্ডল উদ্ধার ও মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করেছে।
তবে নিহতের ভাই দীন ইসলামের অভিযোগ, গত সোমবার সন্ধ্যায় জৈনপুর এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে জহিরুল ইসলামকে আহত করা হয়। মাদক ব্যবসায়ী রাজী না হওয়ায় এই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ তার। মারধরের পর হামলাকারীরা পালিয়ে গেলে স্থানীয়রা জহিরুলকতে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেন বলে জানিয়েছেন দীন ইসলাম।
এ ব্যাপারে মোগলাবাজার থানার ওসি (তদন্ত) মো: ফরিদ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাটি আমাদের থানা এলাকায় কিন্তু রেলের উপর হওয়ায় নিহত জহিরুল ইসলামের ঘটনাটি সিলেট রেলওয়ে থানা পুলিশের আওতায় পড়ে। গতকাল ঘটনাস্থলে রক্তমাখা ইট ও জহিরুল ইসলামের পরিহিত একজোড়া স্যান্ডল স্থানীয় লোকজন দেখতে পেয়ে মোগলাবাজার থানা পুলিশকে খবর দেয়। পরে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সিলেট রেলওয়ে পুলিশকে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে এসে রক্তমাখা ইট ও জহিরুল ইসলামের পরিহিত একজোড়া স্যান্ডল উদ্ধার ও জব্ধ করে। তিনি বলেন, গতকাল নিহত জহিরুলের লাশ ময়না তদন্ত শেষে ওসমানী হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়েছে।
সিলেট রেলওয়ে থানার ওসি আব্দুস সত্তার বলেন, নিহত জহিরুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ নিয়ে আসলে বিষয়টির আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, গতকাল মোগলাবাজার থানা পুলিশ নিহতের লাশ ময়না তদন্ত শেষে লাশটি হাসপাতালের হিমাগারে রেখেছে বলে জানান তিনি।