ভোতা অস্ত্রের আঘাতে রায়হানের মৃত্যু, দ্বিতীয় দফার ময়না তদন্ত রিপোর্ট হস্তান্তর

16

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশী নির্যাতনে মৃত্যুবরণকারী রায়হান উদ্দিন আহমদের (৩৩) দ্বিতীয় দফার ময়না তদন্ত রিপোর্ট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করেছে সিলেট ওসমানী মেডিক্যালের ফরেনসিক বিভাগ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রিপোর্টটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মুহিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. শামসুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিহত রায়হানের প্রথম দফা ময়না তদেন্তর রিপোর্টের সাথে দ্বিতীয় দফার রিপোর্টটির মিল রয়েছে। ভোতা অস্ত্রের আঘাতের কারণেই রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই সিলেটের পুলিশ পরিদর্শক মুহিদুল ইসলাম বলেন, ওসমনী মেডিক্যাল থেকে রায়হানের দ্বিতীয় দফা ময়না তদন্ত রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। এই রিপোর্টটি প্রাথমিক রিপোর্ট।
এরআগে পুনরায় ময়না তদন্তের জন্য রায়হানের লাশ কবর থেকে উত্তোলনের আবেদন করেছিলেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল বাতেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতেই রায়হান আহমদের লাশ কবর থেকে তোলার অনুমতি দেন জেলা প্রশাসক। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে বর্তমানে এই মামলাটির তদন্ত করেছে পিবিআই। এর আগে বৃহস্পতিবার ১৫ অক্টোবর সিলেট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সজিব আহমেদের উপস্থিতিতে আখালিয়া নবাবী মসজিদ কবরস্থান থেকে তোলা হয় রায়হানের লাশ।
সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ অক্টোবর প্রথম ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পিবিআই এর কাছে হস্তান্তর করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। ওই প্রতিবেদনে রায়হানের দেহে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় বলে ওঠে আসে। একই সাথে তার মৃত্যু অতিরিক্ত আঘাতে দেহের অভ্যন্তরে রগ ফেটে রক্তক্ষরণের কারণে হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ১১ অক্টোবর ভোরে পুলিশের নির্যাতনে রায়হান উদ্দিন আহমদ নিহত হওয়ার অভিযোগ তুলেন তার স্বজনরা। নিহত ওই যুবক নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের পুত্র। এ ঘটনায় দিবাগত রাতে নিহত রায়হানের স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে পিবিআই। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন রায়হান। তবে নিহতের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পুলিশ ধরে নিয়ে নির্যাতন করে রায়হানকে হত্যা করেছে। পরিবারের অভিযোগে ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতাও পায় তদন্ত কমিটি। এরপর বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। অন্য তিনজন হলেন, কনস্টেবল হারুনুর রশীদ, কনস্টেবল তৌওহিদ মিয়া, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস। একই সাথে তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রত্যাহারকৃত পুলিশ সদস্যরা হল, এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী, কনস্টেবল সজিব হোসেন। এদিকে ঘটনার পর ১৩ অক্টোবর থেকে লাপাত্তা হয়ে যায় বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া। এরপর থেকে এখনও লাপাত্তা রয়েছেন ঘটনার মুল অভিযুক্ত এ পুলিশ কর্মকর্তা। এ ঘটনায় তাকে পালাতে সহায়তা ও তথ্য গোপনের অভিযোগে ওই ফাঁড়ি টু-আইস এসআই হাসান আহমদকেও সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। আর কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে ওই মামলা গ্রেফতার দেখিয়ে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পিবিআই।