তাহিরপুরে বাংলা কয়লা নিয়ে বিপাকে যাদুকাটা নদীর ৫ হাজার শ্রমিক

30
তাহিরপুরের যাদুকাটা নদী থেকে উত্তোলনকৃত বাংলা কয়লা।

বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
যাদুকাটা নদীতে নৌ পরিবহন বন্ধ, পরিবহন সুবিধা না থাকায় বিক্রি হচ্ছে না কয়লা। কয়লা বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে ৫ সহস্রাধিক বাংলা কয়লা উত্তোলনকারী শ্রমিক।
জেলার উত্তর পশ্চিমে মেঘালয় সীমান্ত উপজেলা তাহিরপুর। উপজেলার ৩ টি শুল্ক স্টেশন ও একটি বালু মহাল রয়েছে। শুল্ক স্টেশন ও বালু মহালে বিভিন্ন কাজ কর্মে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন লক্ষাধিক শ্রমিক। গত মার্চ মাসে করোনার প্রভাবে বন্ধ হয়ে পরে ৩ টি শুল্ক স্টেশন । কর্মহীন হয়ে পরেন অনেক শ্রমিক। সেই সাথে চলতি অর্থ বছরে যাদুকাটা নদীর বালু পাথর মহালটি সরকারীভবে ইজারা না দেয়ায় সেটিও বন্ধ আছে। ফলে সব মিলিয়ে লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মহীন। বর্তমানে যাদুকাটা নদীতে বালু পাথর উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ। বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে অনেক শ্রমিক পাহাড়ী নদী যাদুকাটার তলদেশের বালু সরিয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বাংলা কয়লা উত্তোলন করছেন। প্রতি বস্তা বাংলা কয়লার দাম ক্ষেত্র ভেদে ৩’শ ৫০ থেকে ৫’শ টাকা। ৫ সহস্রাধিকেরও বেশী শ্রমিক এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন যাদুকাটা নদীতে।
সম্প্রতি যাদুকাটা নদীতে রাতের আঁধারে নদীর তীর কেটে বালু বিক্রি করার হিড়িক পরে। নদীর তীর কেটে বালু চুরি বন্ধে জেলা প্রশাসন সুনামগঞ্জ গত ১৩ অক্টোবর থেকে যাদুকাটা নদীতে নৌ পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারী করে। নদীতে পরিবহন নিষেধাজ্ঞা থাকায় শ্রমিকরা কয়লা উত্তোলন করে জমাকৃত করলেও ব্যবসায়ীরা কয়লা না কেনায় শ্রমিকরা কয়লা বিক্রি করতে পারছেন না।
সরজমিন যদুকাটা নদীর তীর ঘুরে দেখা যায়, নদীর মানিগাঁও, বড়গুফ টিলা, আনন্দ গ্রাম, লাউড়ের গড় এলাকায় ১০ হাজার মেট্রিক টন বাংলা কয়লা জমাকৃত আছে।
যাদুকাটা নদীতে কয়লা উত্তোলনকারী উপেজলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাঁও গ্রামের রইছ উদ্দিন, তিনি বলেন, নদীতে বালু পাথরের কোন কাজ না থাকায় আমরা কয়লা কুড়িয়ে কোন রকম জীবন যাপন করছি। বর্তমানে এই পথও বন্ধ।
একই ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী আনন্দ গ্রামের কয়লা কুড়ানো শ্রমিক হাজেরা বেগম, তিনি বলেন, শুনছি বালু চোরদের কারণে নদীতে নৌকা চলাচল বন্ধ আছে। বন্ধ থাকায় আমরা কয়লা বিক্রি করতে পারছি না। কয়লা বিক্রি করতে না পারায় আমরাও অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি বলেও তিনি জানান।
যাদুকাটা বাংলা কয়লা শ্রমিক সমবায় সমিতির সদস্য ঘাঘটিয়া গ্রামের মাওলানা আবু সাঈদ বলেন,যাদুকাটা নদীতে সকল ধরনরে পরিবহনে সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকায় কোন ব্যবসায়ী বাংলা কয়লা কিনতে আসছেন না। নদী থেকে উত্তোলনকৃত বাংলা কয়লা বিক্রি না করতে না পেরে শ্রমিকরা বিপাকে পড়েছেন।
উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন বলেন, যাদুকাটা নদীতে ৫/৭ হাজার শ্রমিক বাংলা কয়লা উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কয়লা বিক্রি না করতে পারায় তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদ্মাসন সিংহ বলেন, যাদুকাটা নদীতে পণ্য পরিবহন বন্ধ আছে। বাংলা কয়লা উত্তোলনকারী শ্রমিকদের অনেকেই তাদের কয়লা বিক্রি না করতে পারার বিষয়টি জানিয়েছেন। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবো।