তামাবিলে বিজিবি-বিএসএফ‘র রিজিয়ন সেক্টর পর্যায়ে বৈঠক ॥ সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে দু’দেশ একমত

11

কে.এম লিমন গোয়াইনঘাট থেকে :
সীমান্তে হত্যা চোরাচালন, অবৈধ অনু-প্রবেশ বন্ধ করতে উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী একমত হয়েছেন। গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিল সীমান্ত সম্মলেন কেন্দ্রে বিজিবি-বিএসএফ রিজিয়ন সেক্টর পর্যায়ে বৈঠকে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে এবং অবৈধ পথে ভারতীয় গরু-মহিষ পাচারসহ সকল প্রকার চোরাচালান রোধে উভয় সীমান্ত বাহিনী একমত হন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তামাবিল বিজিবি‘র সীমান্ত সম্মলেন কেন্দ্রে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)‘র সরাইল রিজিয়ন কমান্ড-এর লে: কর্ণেল আব্দুল কাদির মো: আশরাফ বাংলাদেশের ১০ সদস্য প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)‘র পক্ষে ১০ সদস্য প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মেঘালয় ফ্রন্টিয়ার ৩০-এর নোডাল অফিসার ডি,কে নায়েল। বৈঠকে সিলেট ৪৮ বিজিবির পরিচালক লে: কর্ণেল আহমেদ ইউসুফ জামিলসহ উভয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ অংশ গ্রহণ করেন। বৈঠকে সীমান্তে উভয় দেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা বা আহত অথবা মারধরের ঘটনা শূন্যের কোঠায় এবং ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তবর্তী এলাকায় যৌথ টহল বৃদ্ধি, জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি আরও বেগবান করা সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উভয় বাহিনীর সম্মত হয়েছেন।
ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে যৌথ টহল পরিচালনাসহ সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ এবং সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের মাঝে আন্তর্জাতিক সীমানা আইনের বিধি-বিধান সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সীমান্তে আক্রমণ অথবা হামলার ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে উভয় পক্ষই কাজ করবেন। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান এবং মানব পাচার বন্ধে এক সঙ্গে কাজ করতে উভয় বাহিনী একমত পোষণ করেন। সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের গুলি, হত্যা ও আহত করা, সীমান্তের অপর প্রান্ত থেকে বাংলাদেশে ফেনসিডিল, গাঁজা, মদ, ইয়াবা, ভায়াগ্রা অথবা সেনেগ্রা ট্যাবলেটসহ মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের চোরাচালান, অস্ত্র, গোলা-বারুদ ও বিস্ফোরক দ্রব্য পাচার বন্ধের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বৈঠক শেষ বিকেল ৫টায় তামাবিল চেকপোষ্ট এলাকায় বিজিবি‘র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বিজিবি-বিএসএফ‘র বৈঠকে আলোচনার বিভিন্ন বিষয়ে অবগত করেন।
বাংলাদেশি নাগরিকদের ধরে নিয়ে যাওয়া অথবা আটক রাখা, অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম অথবা বাংলাদেশে জোরপূর্বক অনুপ্রবেশ করানো, মানসিক ভারসাম্যহীন ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশ-ইন, সীমান্তের ১৫০গজের মধ্যে উন্নয়নমূলক নির্মাণ কাজ, উভয় দেশের সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণ, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে যৌথ ভাবে কাজ করার আহবান জানানো হয়। সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিজিবি ও বিএসএফ-এর যৌথ কার্যক্রম সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বজায় রাখার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
মানব পাচার ও অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হন। যার যার দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী মানবপাচারে ক্ষতিগ্রস্তদের যত দ্রুত সম্ভব তাদের উদ্ধার ও পুনর্বাসনের সুবিধার্থে সহায়তা করতেও সম্মত হয়েছেন। উভয় পক্ষই আন্তর্জাতিক সীমানায় কাঁটাতারের বেড়া কেটে অপসারণ করা অথবা বেড়ার ক্ষয়ক্ষতি রোধে যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে এবং নিয়মিত যৌথ টহল পরিচালনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছেন। উভয় পক্ষই অবৈধভাবে সীমানা অতিক্রম অথবা সীমানা লঙ্ঘন করা থেকে সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে বিরত রাখতে উভয় বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সীমান্তের অলঙ্ঘনীয়তা বজায় রাখার ব্যাপারে আশ্বাস দেন। উভয় পক্ষই পূর্ব অনুমোদন ছাড়া ১৫০ গজের মধ্যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ না করার বিষয়ে একমত হয়েছেন।