৪ দিন পর কবর থেকে রায়হানের লাশ উত্তোলন, মেডিকেল বোর্ড গঠন ॥ অতিরিক্ত আঘাতেই রায়হানের মৃত্যু হয়েছে- ফরেনসিক বিভাগ

18
বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে নিহত রায়হান আহমদের পুন:ময়নাতদন্তের জন্য আখালিয়া নবাবী মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থান থেকে সকালে মরদেহ উত্তোলন করা হয়। ছবি- মামুন হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার
নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে মৃত্যুবরণকারী রায়হান উদ্দিন আহমদের লাশ ৪দিন পর কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। পুনরায় ময়না তদন্ত করা হয়েছে। সেজন্যে গঠন করা হয়েছে আলাদা মেডিকেল বোর্ড। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় নগরীর আখালিয়া এলাকার নবাবী মসজিদের পঞ্চায়েতের কবরস্থান থেকে রায়হানের লাশ উত্তোলন করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর একটি দল।
এর আগের ময়না তদন্তে নির্যাতন ও শরীরে অতিরিক্ত আঘাতের ফলেই রায়হানের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়ে ছিল ফরেনসিক বিভাগ।
কবর থেকে লাশ উত্তোলনের সময় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সজিব আহমেদ ও মেজবাহ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। লাশ উত্তোলনের পর তা পুনরায় ময়না তদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, রায়হান হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, পিবিআইর পরিদর্শক মাহিদুল হাসান ও ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান।
পিবিআইর তদন্ত কর্মকর্তা মাহিদুল হাসান জানান, পুনরায় ময়না তদন্তের জন্য রায়হানের লাশ কবর থেকে উত্তোলনের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর লাশটি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খালেদুজ্জামান বলেন, হেফাজতে মৃত্যু আইনে মামলা হলে নিহত ব্যক্তির ময়না তদন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্টেটের উপস্থিতিতে করার বিধান রয়েছে। কিন্ত ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি ছাড়াই ময়না তদন্ত করে রায়হানকে কবর দেওয়া হয়। এ কারণে পুনরায় ময়না তদন্তের জন্য লাশ কবর থেকে উত্তোলনের আবেদন করেছিলেন মামলার পূর্ববর্তী তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল বাতেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার রায়হান আহমদের লাশ কবর থেকে তোলার অনুমতি দেন জেলা প্রশাসক। এদিকে, রায়হান আহমদের লাশ পুনরায় ময়না তদন্তের জন্য ৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শামসুল ইসলামকে প্রধান করে এ মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- প্রভাষক ডা. দেবেস পোদ্দার ও প্রভাষক ডা. আবদুল্লাহ আল হেলাল। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নিহত রায়হানের প্রথম ময়না তদন্তের ফরেনসিক প্রতিবেদন তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাতে হস্তান্তর করে এসএমপি। গত মঙ্গলবার রায়হান উদ্দিন আহমদের মারা যাওয়ার ঘটনায় স্ত্রীর দায়ের করা হত্যা মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তরের নির্দেশ দেয় পুলিশের সদর দপ্তর। এদিন রাতেই মামলার নথি আনুষ্ঠানিকভাবে পিবিআইতে হস্তান্তর করে মহানগর পুলিশ। পরদিন বুধবার দুপুরে পিবিআইয়ের একটি দল নগরী বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে মারা যাওয়া রায়হান উদ্দিন আহমদের মৃত্যু হওয়া হত্যা মামলার তদন্তে নামে।
এদিকে নির্যাতন ও শরীরে অতিরিক্ত আঘাতের ফলেই রায়হান আহমদের মৃত্যু হয়েছে এমনটি জানিয়েছেন সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম। গতকাল বৃহস্পতিবার রায়হানের দ্বিতীয় ময়না তদন্ত শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। ডা. শামসুল ইসলাম বলেন, রায়হানের শরীরে অনেকগুলো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাকে প্রচন্ড মারধর করা হয়েছে। এসব কারণেই তার মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলা যাবে।