সাইবার প্রতারক চক্রের প্রধান সহযোগী সহ গ্রেফতার, চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান

46
র‌্যাবের অভিযানে আটক সাইবার প্রতারক চক্রের দুই সদস্য।

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর চৌকিদেখী ও সুনামগঞ্জে গতকাল বৃহস্পতিবার পৃথক অভিযান চালিয়ে সাইবার প্রতারকচক্রের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৯’র সদস্যার। সিলেটে গড়ে উঠা এই চক্রটি প্রবাসী, বিত্তশালী ও সমাজে প্রতিষ্ঠিতদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে প্রতারণার মাধ্যমে ইতোমধ্যে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। তীক্ষ্ম নজরদারি আর গভীর তদন্তের মাধ্যমে অবশেষে এ চক্রের প্রধানসহ ২ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৯। এ দুজনের সহযোগী আরেক প্রতারককে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে- সাইবার প্রতারক চক্রের প্রধান মো: মামুন মিয়া (২০) ও তার অন্যতম সহযোগী আফজাল হোসেন রিমন (২০)। মামুন সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার থানার মান্নারগাঁও গ্রামের মো: মিরাশ আলীর পুত্র। সে বর্তমানে নগরীর চৌকিদেখি ১নং রোডের ২৩/১ নং বাসার ৪র্থ তলার বাসিন্দা। মামুনের সহযোগী রিমন একই থানার গোপালপুর গ্রামের বশির উদ্দিনের পুত্র। এছাড়া এ চক্রের আরেক প্রতারক জাবের আহম্মেদকে (২৯) এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি র‌্যাব। তবে তাকে ধরতে অভিযান চলছে। জাবের দোয়ারাবাজার থানার বসরপুর গ্রামের মো: তফসির উদ্দিনের পুত্র।
এদিকে প্রতারকচক্রের ২ সদস্য গ্রেফতার ও তাদের প্রতারণার বিষয়ে সিলেট শহরতলির মুরাদপুরস্থ র‌্যাব-৯ কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ৮ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন র‌্যাব-৯ অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু মুসা মো. শরীফুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে একটি সাইবার প্রতারকচক্র ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকের মাধ্যমে প্রবাসী, দেশের বিত্তশালী ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে বিভিন্ন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিতো। সে টাকাগুলো জমা হতো প্রতারকচক্রের সদস্যদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে। প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে এ বিষয়ে তদন্তে নামে র‌্যাব-৯। তীক্ষ্ম নজরদারী আর গভীর তদন্তের পর অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় বিকাশের টাকা উত্তোলনের সূত্র ধরে র‌্যাবের একটি দল নগরীর চৌকিদেখিতে অভিযান চালিয়ে সাইবার প্রতারকচক্রের প্রধান মামুন মিয়াকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেয়া তথ্যমতে দুপুর ১১টায় সুনামগঞ্জ থেকে মামুনের অন্যতম সহযোগী আফজাল হােসেন রিমনকে গ্রেফতার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৯ অধিনায়ক জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামুন জানায়- বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেটে এবং ইউটিউব থেকে হ্যাকিং বিষয়ক ভিডিও দেখে সে হ্যাকিং শিখে। একপর্যায়ে মামুন হাকিংয়ে দক্ষ হয়ে উঠে এবং একের পর এক প্রবাসী, বিত্তশালী ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে থাকে। হ্যাক করার পর ওই অ্যাকাউন্টের ফ্রেন্ড লিস্ট পর্যবেক্ষণ করে আইডি’র মূল মালিকের আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুর কাছে অতি প্রয়োজন দেখিয়ে, আকস্মিক কোনো সমস্যা অথবা কোনো দরিদ্র লোকের চিকিৎসার কথা বলে টাকা চাইতো এবং বিকাশের মাধ্যমে সে টাকা নিয়ে আসতো। পরে সে টাকা মামুন তার দুই সহযোগী রিমন ও জাবেরের মাধ্যমে সিলেট এবং সুনামগঞ্জের বিভিন্ন বিকাশ পয়েন্ট থেকে উত্তোলন করতো। র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, প্রাথমকি জিজ্ঞাসাবাকে মামুন বলেছে, এক সময় হ্যাকিং করা তাদের নেশা ও এর মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ পেশা হয়ে দাঁড়ায়। এভাবে অর্থ কামিয়ে উন্নত জীবনযাপন করা এবং অল্প সময়ে ধনী হওয়াই তাদের লক্ষ্য ছিলো। মামুন ও তার দুই সহযোগী মিলে গত ফেব্র“য়ারী মাস থেকে এ পর্যন্ত প্রতি মাসে দেড় থেকে ২ লক্ষ টাকা ইনকাম করতো বলে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়। সাইবার প্রতারকচক্রের এই ৩ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।