জগন্নাথপুর পৌরসভার উপ-নির্বাচন কাল, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন

37

মো. শাহজাহান মিয়া জগন্নাথপুর থেকে :
আগামী ১০ অক্টোবর শনিবার সুনামগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথপুর পৌরসভার মেয়র পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনে নিজেদের বিজয় নিশ্চিতের লক্ষ্যে মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে শুরু হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। কে হচ্ছেন আগামী পৌর পিতা এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ।
নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন সরকার দল আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া (নৌকা)। আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত মেয়র প্রার্থী সাবেক মেয়র আবদুল মনাফের ছেলে আবুল হোসেন সেলিম (জগ)। বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী রাজু আহমদ (ধানের শীষ)। বিএনপির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আবিবুল বারী আয়হান (মোবাইল)।
এর মধ্যে হেভিওয়েট মেয়র প্রার্থী মিজানুর রশীদ ভূঁইয়ার নৌকা প্রতীকের সমর্থনে মিছিল-সমাবেশ ও প্রচার-প্রচারণায় সরব হয়ে উঠেছে পৌর শহর। তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে মেয়র প্রার্থী রাজু আহমদের ধানের শীষের প্রচারণা। সেই সাথে চলছে মেয়র প্রার্থী আবিবুল বারী আয়হানের মোবাইল প্রতীকের প্রচারণা। শুধু মেয়র প্রার্থী আবুল হোসেন সেলিমের জগ প্রতীকের সমর্থনে প্রচারণা থাকলেও মিছিল-সমাবেশে পিছিয়ে রয়েছে। তবে নিরব জনপ্রিয়তা রয়েছে ব্যাপক। তাদের মধ্যে মিজানুর রশীদ ভূইয়া, আবুল হোসেন সেলিম ও রাজু আহমদের মধ্যে ত্রিমুখি লড়াই হতে পারে বলে ভোটারদের মধ্যে অনেকে নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতেও পারেন আবিবুল বারী আয়হান।
কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন, জগন্নাথপুর পৌর শহরের ইকড়ছই গ্রামের বাসিন্দা ও জগন্নাথপুর পৌরসভার প্রথম সফল চেয়ারম্যান ও ৫ বারের ইউপি চেয়ারম্যান প্রয়াত হারুনুর রশীদ হিরন মিয়ার ছেলে হচ্ছেন মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া। জগন্নাথপুর পৌর এলাকার উন্নয়নে হারুনুর রশীদ হিরণ মিয়ার অনেক অবদান রয়েছে। নির্বাচনে হারুনুর রশীদ হিরন মিয়ার প্রিয়জনরা তাঁর ছেলের জন্য কাজ করছেন। সেই সাথে রয়েছে পারিবারিক ইমেজ-প্রভাব, মাঠে রয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা, আত্মীয়স্বজন ও সমর্থকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা। সব মিলিয়ে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া।
জগন্নাথপুর শহরের হবিবপুর গ্রামের বাসিন্দা সাবেক কয়েক বারের সফল মেয়র ছিলেন আলহাজ আবদুল মনাফ। পৌর এলাকার উন্নয়নে মেয়র আবদুল মনাফের রয়েছে অবদান ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা। নির্বাচনে প্রয়াত মেয়র আবদুল মনাফের ব্যক্তি ইমেজ ও জনপ্রিয়তার প্রভাব পড়তে পারে। তাই সাবেক মেয়র আবদুল মনাফের ছেলে আবুল হোসেন সেলিমকে আবেগের বসে অনেকে ভোট দিতে পারেন। সেই সুবাদে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন আবুল হোসেন সেলিম।
জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজু আহমদ বিগত নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে পরাজিত হয়েছেন। যে কারণে রাজু আহমদের জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে পারিবারিক ও ব্যক্তি ইমেজে এগিয়ে রয়েছেন আবিবুল বারী আয়হান। যদিও নির্বাচনে প্রার্থীদের পক্ষে পারিবারিক ও ব্যক্তি ইমেজ, গোষ্ঠীর প্রভাব, দলীয় পরিচয় ও আঞ্চলিকতার প্রভাব পড়ে থাকে। সাথে রয়েছে কমবেশি টাকার খেলা। কিছু ভোটার আছেন টাকার বিনিময়ে ভোট দিয়ে থাকেন।
জানা গেছে, গত ১২ জানুয়ারি জগন্নাথপুর পৌরসভার মেয়র আবদুল মনাফের মৃত্যু হলে মেয়র পদ শুন্য হয়ে যায়। শূন্য পদে গত ২৯ মার্চ জগন্নাথপুর পৌরসভার উপ-নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তখন এ ৪ প্রার্থী অংশ নিয়েছিলেন। এ সময় করোনার কারণে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। তাই আগামী ১০ অক্টোবর আবারো সেই উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যদিও আগামী ডিসেম্বরে ৫ বছরের জন্য পূর্ণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসেবে এ নির্বাচনে বিজয়ী মেয়র প্রায় মাত্র ২ মাস সময় পাবেন। এ অল্প সময়ের মধ্যে একজন মেয়র পৌরসভার উন্নয়নে কতটুকু কাজ করতে পারবেন। এ নিয়েও চলছে আলোচনা। তবে অল্প সময়ের জন্য মেয়র হলেও খুবই গুরুত্ব পাচ্ছে নির্বাচনী মাঠে।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, জগন্নাথপুর পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৫৫৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪ হাজার ৩৩৮ ও নারী ভোটার ১৪ হাজার ২২১ জন। ১০ অক্টোবর শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ১১টি কেন্দ্রের ৭২টি বুথে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনটি শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে সব ধরণের প্রস্ততি নেয়া হয়েছে বলে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান জানান।