মানব পাচারে কঠোর আইন চাই

16

বৈশ্বিক করোনা মহামারীর সমূহ মৃত্যুঝুঁকিসহ নানা সঙ্কট সত্ত্বেও ঘৃণ্য মানব পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য থামছে না কিছুতেই। কিছুদিন আগে ড্যান্সপার্টির আড়ালে তথাকথিত নৃত্যশিল্পী পাচারের এক সচিত্র প্রতিবেদন উঠে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইউএইর দুবাইয়ের নামী-দামী হোটেলে। সেখানে তাদের ক্যাবারে নাচের কথা বলে নিয়ে মূলত বাধ্য করা হতো যৌনবৃত্তিতে। এই ঘটনায় সেদেশে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। পরে টনক নড়ে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। অভিযোগ পাওয়ার পর মানবপাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে গ্রেফতারে সক্ষম হয়েছে পুলিশ, যাদের মধ্যে রয়েছে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন পুরুষ নৃত্যশিল্পী। এবার ইউরোপের দেশ ইতালিতে পাচারের উদ্দেশ্যে কয়েক শ’ বাংলাদেশী যুবা ও কিশোরের সন্ধান পাওয়া গেছে বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়া এবং স্লোভেনিয়া-ক্রোয়েশিয়া সীমান্তের গভীর জঙ্গলে। মানবপাচারকারী চক্রের নিকট ইউরোপে পাচারের এটি হয়ে উঠেছে নতুন রুট। গত দু’বছর ধরেই চলছে এই ধরনের অপরাধ ও অপকর্ম। কয়েক হাজার বাংলাদেশী মাথাপিছু কয়েক লাখ টাকা খরচ করে করোনাকালেও জীবন ও অর্থের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দিয়েছে এই বিপদসঙ্কুল পথে। একদিকে প্রচন্ড শীত, অন্যদিকে না আছে খাবার ও আশ্রয়, তদুপরি খরস্রোতা সীমান্ত নদী পাড়ি দিয়ে ইতালিতে ঢোকার অনিশ্চয়তা।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে লিবিয়া হয়ে উত্তাল ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিস ও ইতালিতে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় কয়েক শ’ বাংলাদেশীর নৌকাডুবিতে মর্মান্তিক মৃত্যুতে খবরও আছে। সর্বশেষ মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে অন্তত ৩৮ বাংলাদেশীর লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে ২৬ জনের নির্মম হত্যাকান্ডের মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক খবরও আছে। এসব পথে জীবনের সমূহ ঝুঁকিসহ পথে পথে আছে আটকানো, জিম্মিদশা, মুক্তিপণ আদায়সহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম, নির্যাতন ইত্যাদি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তখন এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, মানব পাচারকারীদের কঠোর শাস্তি দেয়া না হলে এটা বন্ধ হবে না। উল্লেখ্য, ২০১৫ সাল থেকে লিবিয়ায় কর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে বর্তমানে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী অভিবাসী হিসেবে বিশ্বের ১৬০টি দেশে কর্মরত আছেন। তবে এই সংখ্যা এক কোটি ২০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। প্রবাসী অভিবাসী শ্রমিক-কর্মচারীদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানসহ সামাজিক সুরক্ষার জন্য তেমন নীতিমালা ও আইন নেই।
অভিবাসী শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানসহ যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নিরাপদ অভিবাসন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এতে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা করলে ৫ বছরের জেল-জরিমানাসহ মানবপাচারের ক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হলে প্রবাসীদের দুর্ভোগ কমার পাশাপাশি নিরাপত্তা অনেকটা নিশ্চিত হবে বলে আশা করা যায়।