রহিমের জীবন

8

মোহাম্মদ বুলবুল হোসেন
কয়েকদিন যাবৎ টানা বৃষ্টি পড়ছে। ঘর থেকে বাহির হওয়া যায় না। বিলের পানি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে রাস্তায় পানি উঠে গেল। আমাদের গ্রামটা একটু নিচু এলাকা। এখানে নিচু এলাকা হলেও পানি সহজে উঠে না। ৮৮ বন্যার পর এত পানি আমাদের গ্রামে আর হয়নি। আমাদের গ্রামের উত্তর দিকে পাহাড়ি অঞ্চল। বৃষ্টির পানি নেমে গ্রামের দিকে আসে। গ্রামের মূল বাড়ি থেকে রাস্তার পাশে অনেকগুলো নতুন বাড়ি হয়েছে। পানিতে বাড়িগুলো তলিয়ে গেছে। মানুষগুলোর দুর্ভোগে দেখে চোখে পানি চলে আসে। ঘরে ধান গরু বাছুর নিয়ে কোথায় যাবে? আমাদের গ্রামের রাস্তার পাশের রহিম মিয়া নতুন বাড়ি করছে। রহিম মিয়া গরিব মানুষ কোন রকম সংসার চলে। ধান কাটার সময় সারা বছরের খাওয়ার জন্য অনেক কষ্টে ধান ক্রয় করছে। পাঁচটি গরু আছে। রহিমের সংসারে ৫ জন ছেলে-মেয়ে রয়েছে। ছেলেমেয়ে গুলো কান্নাকাটি করছে। গরু গুলো পানির মধ্যে বাঁধা আছে।
আমাদের গ্রামে শতকরা ৮০ ভাগ বাড়িতে পানি উঠেছে। সবাই বিপদের মধ্যে আছে? মানুষগুলো দুর্ভোগে দেখে চোখে পানি চলে আসে। দিনে এক বেলা খেতেও পারে আবার নাও পারে। আমাদের গ্রামে মিজান সেও মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। সে নতুন একটি নৌকা তৈরি করেছে। মিজানের বাড়িতে পানি ওঠে নাই কারণ মিজান পুরাতন বাড়িতে থাকে। সেটা একটু উঁচু জায়গা। মিজানের বাড়িতে একটি দোচালা ঘর ও একটি রান্নাঘর ছোট একটি গরুর ঘর করছে। কোন রকম দিন চলে মিজানের। মিজানের এক ছেলে মিজানের বউ ভালো মানুষ। গ্রামে কেউ বিপদে পড়লে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করার চেষ্টা করে।
এদিকে রহিম মিয়া মনের দুঃখে বলতে থাকে।
ছোট্ট ঘরে সুখে-দুখে
করতো সবাই খেলা,
আজ দেখি চোখের জলে
শেষ হয় বেলা।
এই কপালে সুখ নাই
দুঃখে জীবন ভরা,
কোথায় যাব এখন আমি
ঘরে জলে ভরা।
গোলক ধাঁধায় পড়ে আমি
বসে আছি নীড়ে,
প্রভু আমাকে রক্ষা করো
সব যেন পাই ফিরে।
এদিকে মিজানের বউ মিজানকে বলতেছে, রহিম ভাইকে তুমি নিয়ে আসো। আমাদের যা আছে তাই দিয়েই কষ্ট করে, দুটি সংসার চালিয়ে নেব। মিজান ঠিক আছে তুমি বলতেছো আমি এগিয়ে যাই দেখি ওদের কি অবস্থা? রহিম তার বউ ভাবতেছে। কি করা যায় এই অবস্থা। হঠাৎ পিছন থেকে রহিমের ছেলে বলে উঠল বাবা দেখো মিজান কাকা এদিকে আসছে । নতুন নৌকা নিয়ে। রহিম বলল, না রে বাবা এই গরিবের কেউ নেই। মিজান হয়তো অন্য কোথাও যাবে। আস্তে আস্তে মিজান যখন তার বাড়ির মধ্যে এসে পড়েছিল। তখন ও রহিম বিশ্বাস করতে পারতেছিনা। মিজান বলল রহিম ভাই তুমি চলো আমার বাড়িতে।
মিজানের কথা শুনে রহিম হাউমাউ করে কেঁদে মিজানকে জড়িয়ে ধরে। ভাই তুই আমাকে অনেক বড় উপকার করলি এই বউ-বাচ্চা নিয়ে আমি কোথায় যেতাম কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মিজান রহিম এর সাথে কেঁদে ফেলল কোন রকম মিজান সামলে নিল। মিজান বলল রহিম ভাই এখন কান্নাকাটির সময় নয় চলো এবার বাড়ি আমার নৌকাতে সবকিছু ওঠাও।
রহিম মিয়া আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করল।এরপর মিজান তার নৌকা দিয়ে সারাদিন রহিমের বাড়ি থেকে সবকিছু নিয়ে আসে মিজানের বাড়িতে। সত্যিই মিজানের মতো ভালো মানুষ আছে বলে, এই জগতে খুব সুন্দর ময়।