গ্রীসে নবীগঞ্জের দুই রেমিটেন্স যোদ্ধাকে গুলি করে হত্যা ॥ লাশ দেশে আনতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা

12

ছনি চৌধুরী হবিগঞ্জে থেকে :
পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে ও পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে গত ১৪ বছর পূর্বে প্রবাসে যান হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বড় ভাকৈর ইউনিয়নের কামড়াখাই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আব্দুল মমিন (৪০)। ৭ বছর পূর্বে প্রবাসে যান একই গ্রামের নূর হোসেনের ছেলে শাহীন মিয়া (২৫)। ইরান থেকে তুরস্ক হয়ে গ্রীসে ১০ বছর ধরে বসবাস করছেন আব্দুল মমিন ও ২ বছর ধরে গ্রীসে বসবাস করছেন শাহীন মিয়া।
মঙ্গলবার ভোর রাতে কোনো এক সময় ইউরোপের দেশ গ্রীসে দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হয়েছেন নবীগঞ্জের এই দুই রেমিটেন্স যোদ্ধা। গ্রীসের রাজধানী এথেন্সের আসপোগিরগো এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে। গত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে গুলিবিদ্ধ মরদেহগুলো উদ্ধার করে গ্রীস পুলিশ। নিহত দু’জনই নবীগঞ্জ উপজেলার এক গ্রামের বাসিন্দা।
এই হত্যাকান্ডের খবরে নিহতের বাড়িতে চলছে স্বজনদের শোকের মাতম। ছেলের শোকে নিহতের পিতা মাতা অচেতনপ্রায়। অশ্র“সিক্ত নয়নে অপেক্ষায় আছেন কখন ছেলের লাশ বাড়ি ফিরবে।
সরেজমিনে নবীগঞ্জ উপজেলার কামড়াখাই গ্রামে গিয়ে জানা যায়, ওই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আব্দুল মমিন (৪০) ও একই গ্রামের নূর হোসেনের ছেলে শাহীন মিয়া (২৫) পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে গ্রীসের আসপোগিরগো এলাকায় একটি কন্টেইনার কোম্পানিতে পাহাড়াদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন আব্দুল মমিন। আব্দুল মমিন প্রায় ১৪ বছর ধরে প্রবাসে বসবাস করছেন। ইরান, তুরস্ক হয়ে প্রায় ২ বছর পূর্বে গ্রীসে যান শাহীন। মমিনের সেখানে কাজে যোগ দেন শাহীনও। মঙ্গলবার রাতের কোন এক সময় দুর্বৃত্তরা একজনের মাথায় এবং অন্যজনের গলায় গুলি করে হত্যা করে। পরদিন সকালে স্থানীয়রা দুই মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন।
সেখানে বসবাসরত প্রবাসীরা জানান, দু’টি কন্টেইনারে ডাকাতির প্রস্তুতি নেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় মমিন ও শাহীন বাধা দিলে তাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ নিয়ে পুলিশ তদন্তে নেমেছে এবং মরদেহগুলো বাংলাদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান বলেও জানিয়েছেন।
এদিকে নিহত দুইজনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তাদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তারা বাড়িতে টাকা পাঠানোর জন্য টাকা জমা করেছিল। তাদেরকে খুন করে তাদের টাকা পয়সা লুট করেছে ডাকাতদল।
নিহত আব্দুল মমিনের ২ ছেলে ১ মেয়ে। বাবা হত্যার বিচার দাবী করে তারা দেশে লাশ আনার ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
নিহত আব্দুল মমিনের মা গোলেছা বিবি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন – আমার ছেলেকে যারা নির্মম ভাবে হত্যা করেছে আমি এর বিচার চাই, সরকারের কাছে আমার একটাই দাবী ‘আমি আমার ছেলেরে শেষ দেখা দেখতাম চাই’।
নিহত আব্দুল মমিনের চাচাতো ভাই মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রফিক জানান- দীর্ঘ ১৪বছর ধরে মমিন প্রবাসে বসবাস করে আসছে, সে প্রথমে ১ বছর ইরান, তুরষ্ক ২বছর ও গত ১০ বছর ধরে গ্রীসে বসবাস করে আসছে, হঠাৎ করে এমর ঘটনায় আমরা শোকে কাতর, এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচারের দাবী জানাই একই সাথে নিহতদের দেশে আনতে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করছি।’
নিহত আব্দুল মমিনের ভাতিজা- মিজানুর রহমান জানান- ‘আমার চাচা দেশে থাকতে অনেক ভালো মানুষ ছিলেন, অনেক ভদ্র ছিলেন, প্রবাসে গিয়ে এমন হত্যাকাণ্ডের শিকার হবেন আমরা চিন্তাও করতে পারি নাই, এ ঘটনায় আমাদের পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে, আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানাই।’
অপরদিকে নিহত শাহীন মিয়া পিতা নুর হোসেন জানান- ‘অবিবাহিত শাহিন পরিবারের কথা চিন্তা করে বিগত ৭ বছর পূর্বে প্রবাসে যায়, সেখানে ইরান ৪ বছর, তুরস্ক ১ বছর ও ২ বছর ধরে গ্রীস বসবাস করে আসছে, এ দুর্ঘটনার আগের আমাদের সাথে কথা হয়েছে শাহীনের এমন ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ- আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই, এবং আমার ছেলেকে শেষ দেখা দেখতে চাই। লাশ দেশে ফেরাতে সরকারের সহযোগিতাও চান নিহত শাহীনের পরিবার।’
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহি উদ্দিন জানান- খবরটি শুনে তিনিও শোকাহত। লাশ দেশে ফেরাতে সরকারীভাবে যা কিছু করতে হয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।