প্রধানমন্ত্রীর উপহার ॥ গোয়াইনঘাটে মাথা গোজার ঠাঁই পেলো ৪০১টি অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবার

76
প্রধানমন্ত্রীর উপহারে গোয়াইনঘাটে মাথা গোজার ঠাঁই পেলো ৪০১টি অসহায় পরিবার। হতদরিদ্র একটি পরিবারকে ঘরের চাবি হস্তান্তর করছেন অতিথিরা।

কে.এম লিমন গোয়াইনঘাট থেকে :
গেল কয়েক দিন আগেও জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরে ছিল যাদের বসবাস। আকাশে মেঘে গর্জন করলেই তাদের পিলে চমকে যেতো। এই বুঝি ঝড়ো হাওয়া এসে উড়িয়ে নিয়ে যাবে সব। মাথা গোজার ঠাঁইটুকু লন্ডভন্ড করে দিয়ে যাবে। আর যদি ঝড়ো হাওয়া নাও আসে তবুও নির্ঘুম কাটাতে হবে সারারাত। কারণ মেঘের জল জমিনে পড়ার আগেই ঘরের চালার ফুটো দিয়ে ঝড়তে থাকবে। এমনি করে কতো দিন, কতো বছর যে কেটেছে তার হিসেব মেলানোও দায়। অবশেষে মাথা গোজার ঠাঁই পেলো গোয়াইনঘাট উপজেলার এমনই চার শতাধিক হত-দরিদ্র পরিবার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে জমি আছে ঘর নেই গোয়াইনঘাটের এমন হতদরিদ্র ৪০১টি পরিবার পেয়েছে টিনশেড ঘর। স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা, প্রতিবন্ধী, অসহায় ও হতদরিদ্র এবং বয়োবৃদ্ধসহ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করা এসব পরিবার প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার হিসেবে নতুন ঘরে পেয়ে এখন মহাখুশি। নতুন ঘর পেয়ে সুবিধাভোগী এসব পরিবারের সদস্যরা দুই হাত তুলে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করছেন। তারা বলছেন, দেশ পরিচালনার ভার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাতে রয়েছে বলেই আজ আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাসের জন্য নতুন ঘর পেয়েছি।
গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে সারাদেশে যাদের জমি আছে, ঘর নেই এমন পরিবারগুলোকে টিনশেড ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৪০১টি পরিবার পেয়েছে নতুন ঘর। যার মধ্যে উপজেলার রুস্তমপুরে ৪৭টি, পশ্চিম জাফলংয়ে ৪৩টি, পূর্ব জাফলংয়ে ৫১টি, লেঙ্গুড়ায় ৫৮টি, পূর্ব আলীরগাঁও ৩০টি, ফতেহপুর ৩৮টি, নন্দীরগাঁও ৪০টি, তোয়াকুল ৩৭টি, ডৌবাড়ী ৩৫টি এবং পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নের ২২টি পরিবারকে এই ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি পরিবারকে বসতঘর নির্মাণ করে দেয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তত্ত্বাবধানে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভুক্ত আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে এসব কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
উপকারভোগী পরিবারের সদস্যদের সাথে আলাপকালে তারা অনেকেই জানান, এই ঘর পাওয়ার পেছনে জনপ্রতিনিধি বা সরকারি কোনো কর্মকর্তাকে এক টাকাও উৎকোচ দিতে হয়নি।
নন্দীরগাঁও ইউনিয়নের আঙ্গাজুর গ্রামের ষাট বছর বয়সী আসাদুল মিয়া। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। দিন মজুরি করে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলে মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন তিনি। কিন্তু ছেলে বিয়ের পর আলাদা সংসার পাতায় জীবন সায়াহ্নে এসে পড়েছেন বড় বিপদে। কোন রকম একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস ছিল তার। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর পেয়ে মাথা গোজার ঠাঁই পেয়েছেন তিনি।
তার মতো আরেক বয়োবৃদ্ধ আব্দুর রহিম মিয়ারও প্রায় একই পরিস্থিতি। তিনি বলেন, ‘পৈতৃক ভিটে-বাড়ির সিংহভাগই এখন চলে গেছে তার ছেলেদের দখলে। অবশিষ্ট এক শতাংশ জমির ওপর কুড়ে ঘর বানিয়ে স্ত্রী আয়মন বিবিকে নিয়ে থাকতেন কষ্টেসৃষ্টে। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া টিনশেডের একটি ঘরই যেন তাদের জীবনের পট পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে ওই ঘরে সুখেই দিন কাটছে তার।
শুধু আসাদুল আর রহিম মিয়াই নন তাদের মতো ঘর পেয়েছেন স্বামী পরিত্যক্তা সইফা বিবি, বিধাব সমই বেগমসহ আরও চারশো পরিবার। তাদের সবারই এখন একটাই চাওয়া আর তা হলো, আল্লাহ যেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দীর্ঘজীবি করেন।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলায় যেসব পরিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়েছেন তারা সকলেই একেবারে হতদরিদ্র। তাই সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি উক্ত বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ দলীয় নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। যাতে করে কোনো দুষ্টচক্র ঘর দেওয়ার কথা বলে দরিদ্র এসব পরিবারের কাছ থেকে অবৈধভাবে কোনো অর্থ হাতিয়ে নিতে না পারেন তা কঠোরভাবে নজরদারি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ নাজমুস সাকিব বলেন, যাদের জমি আছে ঘর নেই, এমন পরিবারগুলোকে যাচাই-বাছাই করে তালিকাভুক্ত করার পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের ৪০১টি পরিবারকে টিনশেড ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৩৭৭ টি ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকী ঘরগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। নির্মাণ কাজ হলে সেগুলোও তালিকাভুক্ত পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করা হবে।