ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছে!

9

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা টিসিবি বিক্রি কার্যক্রম শুরু করার পর কেজিতে পাঁচ টাকা কমেছে পেঁয়াজের দাম। প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ ৫৫-৬০ এবং এবং আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর খুচরা বাজারে। তবে নগরীর স্বল্প আয়ের মানুষ সস্তায় পেঁয়াজ কিনতে খুব সকাল থেকে ভিড় করছেন টিসিবি’র খোলা ট্রাকের সামনে। ভোক্তারা দীর্ঘলাইন ধরে পেঁয়াজ কিনছেন। এদিকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের রফতানি বন্ধের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। রফতানি কার্যক্রম চালু রাখতে আলোচনা করা হবে। এর পাশাপাশি বিকল্প উৎস থেকে পেঁয়াজ আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, সোমবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে কোন পেঁয়াজ ঢোকেনি। এতে বাংলাদেশী পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ বাড়ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, পেঁয়াজের প্রধান উৎস ভারতের বাজার বন্ধ হলে অভ্যন্তরীণ মার্কেটে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ কারণে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশ্বের আরও তিন দেশ থেকে পেঁয়াজ আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিকল্প উৎস হিসেবে বিশ্বের তিন দেশ (তুরস্ক, মিয়ানমার ও নেদারল্যান্ডস) থেকে পেঁয়াজ আনার চেষ্টা করছে সরকার। এর পাশাপাশি মিসর, চীন ও থাইল্যান্ডের বাজার পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের আওতায় এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হতে পারে।
এদিকে, বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে এবার ভারতের কয়েকটি প্রদেশে পেঁয়াজের উৎপাদন কমে গেছে। দেশটির অভ্যন্তরীণ মার্কেটে এখন পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ অবস্থায় ভারত যেকোন মুহূর্তে পেঁয়াজের রফতানি বন্ধ করে দিতে পারে এ ধরনের আশঙ্কা আগেই করা হয়েছিল। এসব দিক বিবেচনায় পেঁয়াজ আমদানি উৎসাহিত করতে পাঁচ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়ার উদ্যোগসহ এলসি ঋণ সহজ করা হয়েছে। এখন মিয়ানমার থেকে জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আনছেন আমদানিকারকরা। এছাড়া তুরস্ক থেকে এক লাখ টন পেঁয়াজ আনার লক্ষ্যে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। কিন্তু তুরস্কের পেঁয়াজ দেশে আসতে সময় লাগবে। এ কারণে দ্রুত সঙ্কট দূর করতে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন বলেন, বন্যা ও অতি বৃষ্টির কারণে ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানেই এখন দাম বেশি। এ কারণে বিকল্প উৎস থেকে পেঁয়াজ আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির কয়েকজন অফিসারকে দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর ও পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে টিসিবি তুরস্কের সঙ্গে এক লাখ টন পেঁয়াজ আনার টেন্ডার দিয়েছে। এসব পেঁয়াজ দ্রুত দেশে নিয়ে আসা হবে। এছাড়া মিয়ানমারের পেঁয়াজের প্রথম চালান দেশে এসেছে। পাশাপাশি নেদারল্যান্ডের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে। এ কারণে পেঁয়াজ নিয়ে উদ্বেগের কোন কারণ নেই। গতবারের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে না। দেশে এখনও পর্যাপ্ত পেঁয়াজের মজুদ রয়েছে। তিনি বলেন, ভারতের রফতানি বন্ধের সরকারী কোন ঘোষণা পাওয়া যায়নি। তবে পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।
এদিকে, ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের এ সংক্রান্ত সরকারী প্রজ্ঞাপন এখনও জারি হয়নি। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও কিছু বলছে না। তবে গত কয়েকদিন ধরে আমদানিকারকরা বেশি দামে পেঁয়াজ কেনার জন্য এলসি বা ঋণপত্র খুলেছেন। কিন্তু রফতানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইতোপূর্বে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে এমন সব চালানের পেঁয়াজ ঢুকতে পারবে কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। হিলি স্থলবন্দরের কয়েকজন পেঁয়াজ আমদানিকারক জানিয়েছেন, বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খোলা রয়েছে। কিন্তু এখন বিপাকে পড়ে গেছে ব্যবসায়ীরা। তবে এলসি খোলা রয়েছে এমন সব পেঁয়াজ রফতানির জন্য তাদের বলা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত রফতানি মূল্য দ্বিগুণ করে প্রতি টন ৮৫০ ডলার করার পর হুট করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। ওই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রফতানি বন্ধ করে দিলে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে হু হু করে। তবে উৎপাদন বাড়ায় চলতি বছরের মার্চের ১৫ তারিখ থেকে নিশ্চিতভাবে পেঁয়াজ রফতানি শুরু করে ভারত।
টিসিবির পেঁয়াজের জন্য দীর্ঘলাইন : টিসিবির ৩০ টাকা দামের পেঁয়াজ কিনতে সারাদেশে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। বাজার মূল্যের প্রায় অর্ধেক দামের এই পেঁয়াজ কিনতে টিসিবির ট্রাকের সামনে দীর্ঘলাইন ধরতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ৪০টি ট্রাকে করে পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি। কমদামের এই পেঁয়াজের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে। একজন ক্রেতা টিসিবি ট্রাক থেকে দুই কেজি পেঁয়াজ ৬০ টাকা দিয়ে কিনতে পারছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, টিসিবির প্রস্তুতি ভাল। তাদের পেঁয়াজের কোন সঙ্কট নেই। টিসিবি জানায়, প্রতিটি ট্রাকের জন্য দৈনিক ২০০ থেকে ৪০০ কেজি পেঁয়াজ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। করোনা ও বন্যা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে শুক্র ও শনিবার ছাড়া প্রতিদিন ভ্রাম্যমান ২৭৫টি ট্রাকে পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টিসিবি।
ভারতের সঙ্গে আলোচনা করা হবে : ভারত যাতে পেঁয়াজ রফতানি অব্যাহত রাখে সেজন্য ভারতের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি জানান, এখনও রফতানি বন্ধের আনুষ্ঠানিক কোন খবর পাওয়া যায়নি। এ কারণে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে তারা পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিলেও গতবারের মতো খারাপ অবস্থা তৈরি হবে না। কারণ এবার গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বেশ আগে ভাগে প্রস্তুতি গ্রহণ করে সরকার।
হিলিতে পেঁয়াজ আসছে না : স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর থেকে জানান, অতিবৃষ্টি আর বন্যায় সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়ায় নিজ দেশের বাজারে দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি রুখতে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ভারত সরকার হিলি কাস্টমসকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
সে মোতাবেক কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছে, সোমবার থেকে সব ধরনের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ থাকবে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত। এ সংক্রান্ত সরকারী প্রজ্ঞাপন এখনও জারি হয়নি, তবে অচিরেই জারি হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে পেঁয়াজ আমদানির জন্য যেসব এলসি খোলা রয়েছে এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সেগুলোর বিপরীতেও কোন পেঁয়াজ রফতানি হবে না।
বেনাপোল বন্দরেও পেঁয়াজ আসছে না : স্টাফ রিপোর্টার, বেনাপোল থেকে জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে হটাৎই বন্ধ হয়ে গেল পেঁয়াজ আমদানি। সোমবার বিকেলে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারত। ফলে বেনাপোলের ওপারের পেট্রাপোলে আটকা পড়েছে পেঁয়াজ ভর্তি প্রায় দেড় শ’ ট্রাক। এদিন সকালে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৫০ টন পেঁয়াজ ঢোকার পরপরই দেশের সবগুলো বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারতের পেঁয়াজ রফতানিকারকদের সংগঠন।
বেনাপোলের ওপারে পেট্রাপোল রফতানিকারক সমিতির পক্ষে ব্যবসায়ী কার্তিক ঘোষ বলেন, আমদানি বাণিজ্য শুরুর পর থেকে ২৫০ ডলারে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়ে আসছে। কিন্তু বন্যার কারণে ভারতের নাসিকে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ রফতানিকারকরা স্থানীয় বাজারদর হিসাবে ৭৫০ ডলারের নিচে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি করবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর আটকে দেয়া হয় বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় থাকা পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকগুলো।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান বলেন, ভারত কোন ঘোষণা ছাড়াই মূল্যবৃদ্ধির দাবিতে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। পারস্পরিক বাণিজ্যে সমঝোতার বিকল্প নেই। তারা রফতানি বন্ধ না করে পেঁয়াজের আমাদানিকারকদের সময় বেধে দিতে পারতেন। হঠাৎ নেয়া এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন এপারের আমদানিকারকরা।