তাহিরপুর হাওরাঞ্চলের কর্মহীন শ্রমিকরা দিশেহারা

7

তাহিরপুর থেকে সংবাদদাতা :
সুনামগঞ্জ তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ভারতের মেঘালয় সীমান্ত তীরবর্তী এলাকায় অবস্থিত বড়ছড়া, বাগলী, ছাড়াগাঁও সহ তিনটি শুল্ক বন্দর। পূর্বে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শুল্ক স্টেশনে কর্মব্যস্ততা থাকলেও বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানি সহ বিভিন্ন কাজকর্ম বন্ধ থাকায়, জীবিকার তাগিদে প্রত্যন্ত হাওর এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষ দিশেহারা হয়ে দলেদলে শহরমুখী হচ্ছে। কেউ বা আবার কাজকর্ম না পেয়ে শহর থেকে ঘুরে এসে বাড়িতেই অনাহারে অর্ধহারে কর্মহীন হয়ে দিনাতিপাত করছেন।
জানাযায় তিন দফা বন্যায় এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে,নষ্ট হয়েছে রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। বন্যার পানি সরে গেলেও হাওরবাসীর বুকে রেখে গেছে গভীর ক্ষত চিহ্ন।
তারি মধ্যে রয়েছে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ, যেন মরার উপর কারার ঘাঁ। এত লোকসানের মুখে পড়েছেন কয়লা ও চুনাপাথর আমদানিকারকরা, এবং এর সাথে জড়িত প্রায় ত্রিশ হাজার দিনমজুর শ্রমিক কর্মহীন হয়ে, তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
অন্য বছর এমন দিনে হাওর এলাকার হাজার হাজার শ্রমিক উপজেলার তিনটি শুল্ক বন্দরে কয়লা ও চুনাপাথর পরিবহন সহ বিভিন্ন কাজ করে আয়-রোজগার করতেন, বর্তমানে এই তিনটি শুল্ক স্টেশন বন্ধ রয়েছে ।
এছাড়াও এ অঞ্চলের হাওরগুলো এখনও পানিতে ভরপুর থাকায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না পর্যাপ্ত মাছ। এখানকার শ্রমজীবী মানুষদের কয়লা চুনাপাথর পরিবহন সহ কৃষি ও মাছ ধরা ছাড়া বিকল্প কর্মসংস্থানের উৎস না থাকায় দরিদ্র হাওরবাসী পড়েছে জীবন ও জীবিকার গভীর সংকটে।
উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের জয়পুর গ্রামের মৎস্যজীবী নুর উদ্দিন মিয়া বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পেটের ক্ষুধায় সারা দিনরাত হাওরে নদীতে জাল ফেলে ৩০০ টাকার মাছও ধরা যায় না। প্রতিটি নৌকায় মাছ ধরতে দুজন জেলে লাগে। এরকম আয়-রোজগার দিয়ে সংসার চলে, তাই জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে ছেলে সন্তান নিয়ে কাজের খুঁজে শহরে যেতে বাধ্য হলাম।
একই গ্রামের ঢাকায় অবস্থানরত সাইকুল মিয়ার ছোট ভাইয়ের সাথে আলাপচারিতার একপর্যায়ে সাইকুল মিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে উনি বলেন ভাইয়ের অবস্থা খুবই খারাপ ঋণের চাপ সইতে না পেরে শহরে গিয়াছে কাজের খুঁজে, সেখানেও নেই কাজকর্ম, বাচ্চাকাচ্চা নিয়া মহা বিপদে আছেন।
একই ইউনিয়নের তরং গ্রামের কয়লা চুনাপাথর পরিবহন শ্রমিক জানে আলম,বলেন কয়লা ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ থাকায় দিশেহারা হয়ে কাজের খুঁজে শহরে গিয়েছিলাম, সেখানেও কাজ নেই, যে পরিমাণ কাজ আছে তার চেয়ে দ্বিগুণ মানুষ গ্রাম হতে শহরে গিয়েছে।ঋণ করে কাজের উদ্দেশ্যে শহরে গিয়েছিলাম কাজ না পেয়ে বাড়িতে ফিরে এসে একদিকে ঋণের চাপ অন্যদিকে পেটের ক্ষুধা, বর্তমানে আমি দিশেহারা।