চার লেনের সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার উপরে ॥ সড়ক নির্মাণ শেষ হলে স্থাপিত হবে সড়ক নেটওয়ার্ক

23

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সম্প্রসারণের ধারাবাহিকতায় উপ-আঞ্চলিক সংযোগ সড়ক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন নতুন বেশ কয়েকটি সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে। আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা হবে নতুন নতুন সব সড়কের ক্ষেত্রে। যার একটি সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক। সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে ছয় দেশের মধ্যে স্থাপিত হবে সড়ক নেটওয়ার্ক।
নতুন ৫৬ কিলোমিটার এই সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ধীরে চলা যানবাহনের জন্য থাকছে পৃথক লেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সড়ক নির্মাণের পর বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ভারত, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার ও চীনের ক্রস বর্ডার সংযোগ স্থাপনসহ উপ-আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে। একইসঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আমদানি-রফতানি ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করার পথ সুগম হবে। ২০২৫ সালে শেষ হবে প্রকল্পের কাজ। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, এ লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উদ্যোগে ৩ হাজার ৫৮৬ কোটি ৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক পৃথক এসএমভিটি লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গত এক সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, প্রকল্পটি শুধু দেশীয় চাহিদাই নয়, আন্তর্জাতিক চাহিদাও পূরণ করবে। এটি হলে উপ-আঞ্চলিক সড়ক সংযোগ স্থাপন সহজ হবে। পাশাপাশি স্থলবন্দর, অর্থনৈতিক অঞ্চল, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে যাতায়াত সহজ হবে। সর্বোপরি এ অঞ্চলের পর্যটন বিকাশে সুযোগ সৃষ্টি করবে, যা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।
পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেয়া প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সিলেট থেকে তামাবিল পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ চার লেনে উন্নীত করা হবে। ঢাকা-সিলেট-তামাবিল করিডরের মাধ্যমে উপ-আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপন করা হবে। স্থলবন্দর, অর্থনৈতিক অঞ্চল, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে যাতায়াত সহজ করা হবে। এই সড়ক পর্যটন বিকাশে সুযোগ সৃষ্টি করাসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সিলেট জেলার সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলাজুড়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। চলতি বছরের এপ্রিলে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৫ সালের ৩০ জুন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয়ের ৩ হাজার ৫৮৬ কোটি ৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকার মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়া হবে ৬১৫ কোটি ৪৮ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এছাড়া প্রকল্প ঋণ (এআইআইবি) পাওয়া যাবে ২ হাজার ৯৭০ কোটি ৫৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। প্রকল্পটি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় সড়ক পেভমেন্ট নির্মাণ করা হবে ৫৬ দশমিক ১৬ কিলোমিটার। এসফল্ট প্লান্ট ও ইমালসন প্লান্টসহ রক্ষণাবেক্ষণ ওয়ার্কশপ তৈরি করা হবে একটি, কালভার্ট নির্মাণ করা হবে ৪৯টি। যার দৈর্ঘ্য ৬২৫ দশমিক ৫ মিটার। ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে ১০টি। টোল প্লাজা নির্মাণ করা হবে একটি। এক্সেল লোড নির্মাণ করা হবে একটি।
সিলেট থেকে তামাবিল সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ভারতের ক্রস বর্ডার সংযোগ স্থাপিত হবে এবং উপ-আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে। এ প্রেক্ষিতেই সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন, ৫৯ দশমিক ৬৮ লাখ ঘনমিটার মাটির কাজ, ৫৬ দশমিক ১৬ কিলোমিটার পেভমেন্ট নির্মাণ, ২১টি সেতু নির্মাণ (১৬৩৯ দশমিক ৮৪৯ মিটার), ৫৪টি কালভার্ট নির্মাণ, ১০টি পদচারী সেতু নির্মাণ, ২৬৩১ দশমিক ১০৯ মিটার স্ট্রাকচার ফাউন্ডেশন, ৫৬ দশমিক ১৬ কিলোমিটার সড়কের কনস্ট্রাকশন সাইট ফ্যাসিটিলিজ, টোল প্লাজা, এক্সেল লোড স্টেশন, মোটরযান ও যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রভৃতি কাজ করা হবে।
সম্প্রতি সড়ক পরিবহনমন্ত্রী সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এতে অংশ নিয়ে সিলেট জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তুষার কান্তি সাহা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বলেন, সিলেট জোনে বর্তমানে সওজের ১২টি প্রকল্প পুরোদমে চলমান রয়েছে। এর মধ্যে চারটি উচ্চ অগ্রাধিকার, চারটি মধ্য অগ্রাধিকার এবং চারটি নিম্ন অগ্রাধিকার প্রকল্প। এ অর্থবছরে একটি প্রকল্প শেষ হবে। ২০২০-২১ অর্থবছরে সিলেট জোনে ১ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীত করার লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য।