রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জরুরী উদ্যোগ

9

তিন বছর পার হলেও বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ঝুলে গেছে বলেই প্রতীয়মান হয়। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ নিয়ে বর্তমানে আর সাড়াশব্দ নেই বললেই চলে। বরং সারাবিশ্ব যেন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে করোনা মোকাবেলাসহ ভ্যাকসিন আবিষ্কার নিয়ে। যে কারণে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য-সহায়তা-অনুদানের পরিমাণও কমছে, যা স্বভাবতই বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর। পাশাপাশি গত তিন বছরে অন্তত দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির থেকে পালিয়ে গেছে। যে কারণে সেনাবাহিনীর সহায়তায় দেয়া হচ্ছে কাঁটাতারের বেড়া। অবশ্য আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়া কর্তৃক মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও শুনানির বিষয়টি ইতিবাচক অগ্রগতি।
অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের স্মার্টকার্ডসহ বাংলাদেশী পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার বিষয়টিও উঠে এসেছে গণমাধ্যমে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত এগারো লক্ষাধিক রোহিঙ্গার অন্তত কয়েক হাজারকে এনআইডিসহ আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট দেয়ার। এবার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। গত ১ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় রোহিঙ্গা ডাকাত নূর মোহাম্মদ। তার কাছে পাওয়া যায় বাংলাদেশী স্মার্টকার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র। এরপর ২২ আগস্ট স্মার্টকার্ড তুলতে গিয়ে আটক হয় লাকী আক্তার নামের এক রোহিঙ্গা নারী। গোমর ফাঁস হয় এর পরই। চট্টগ্রামের ইসি অফিস থেকে অন্তত পাঁচটি ল্যাপটপ খোয়া যাওয়ার অভিযোগ আছে, যেগুলো হাতিয়ে নিয়েছে ইসিতে চাকরিরত ও চাকরিচ্যুত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের কয়েকজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও। টেকনাফ-কক্সবাজার উপকূলবর্তী বাংলাদেশে দীর্ঘদিন থেকে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে বলেও প্রমাণিত। রোহিঙ্গা শিবিরগুলো প্রাচীরবেষ্টিত ও সুরক্ষিত নয় বলে সীমিত পুলিশী নজরদারির সুবাদে তারা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের সর্বত্র। শিশু চুরি, ইয়াবা পাচারসহ জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। এভাবে চলতে থাকলে রোহিঙ্গা বিশেষ করে তরুণদের জঙ্গী ও সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। সে অবস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আরও জরুরী উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে।