মহানগরীর বেশীর ভাগ রাস্তা ছোট-বড় গর্ত আর ভাঙাচোরা, চলাচলের অনুপোযোগী

13
নগরীর ভাঙ্গাচোরা সড়ক।

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
সিলেট মহানগরীতে ছোট-বড় গর্ত ও ভাঙাচোরা রাস্তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নগরীর প্রতিটি সড়কে খোড়াখুড়ি, গর্ত আর ভাঙাচোরার কারণে দীর্ঘদিন যাবত রাস্তাগুলো সংস্কার কাজ না হওয়ায় এটি চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। বিভাগীয় নগরীর পুরো রাস্তাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। কিন্তু রাস্তাটি মেরামতে সংশ্লি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছেন উদাসীনতায়।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন যাবত কোনো সংস্কার কাজ না হওয়া এবং চলতি বছরের অতি বৃষ্টিতে মহানগরী ও এর বাহিরের বেশ কিছু সড়কে চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপোযোগী হয়ে গেছে। এ রাস্তা দিয়ে বর্তমানে যানচলা করছে ঝুঁকি নিয়ে। এছাড়া নগরীতে সিসিকের উয়ন্নয়ন কাজের কুঁড়াকুঁড়িও থেমে নেই।
সরেজমিনে দেখে গেছে, নগরীর বন্দরবাজার এলাকা, সুরমা মার্কেট পয়েন্ট, জেলা প্রশাসকের সামন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সামন, ধোপাদীঘিরপাড়স্থ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসার সামন ও পাশ্ববর্তী দক্ষিণ রাস্তা, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানার আশপাশ এলাকা, কীন ব্রীজের উপর, শাহজালাল (১) ব্রীজের উপর, হুমায়ুন রশীদ চত্তর এলাকা, তালতলা ভিআইপি সড়ক, মিরের ময়দান হয়ে সুবিদবাজার, পাঠানটুলা, আখালিয়া বাস স্ট্যান্ড এলাকা, শিবগঞ্জ মিরাবাজার সড়ক, দক্ষিণ কীন ব্রীজ হয়ে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সড়ক, কদমতলী মুক্তিযোদ্ধা হয়ে হুমায়ুন রশীদ সড়ক ও কদমতলী হয়ে জকিগঞ্জ সড়কে রাস্তাজুড়ে শুধু ছোট-বড় অসংখ্যক গর্ত আর ভাঙাচোরা। এসব সড়ক দিয়ে যাতায়াতকালে মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। এছাড়াও প্রতিনিয়ত গর্তে গাড়ি উল্টে গিয়ে ছোটঘাট দুঘর্টনা ঘটেই চলেছে। বৃষ্টি হলেই গর্তগুলো ভরে গিয়ে আরো বিপদের সৃষ্টি করছে। ফলে কদমতলী পয়েন্ট এলাকায় বড় ধরণের দুর্ঘটনার সম্ভবনা রয়েছে বলে ভুক্তভোগিরা মনে করছেন।
দক্ষিণ সুরমা এলাকার মাহবুর রহমান জানালেন, কদমতলী থেকে হুমায়ুন রশীদ চত্তর সড়ক ও কীন ব্রীজ হয়ে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সড়ক দু’টি বড় বড় গর্ত হয়ে এমন অবস্থা হয়েছে গাড়ীটি একটু গর্তে পড়লেই উল্টে গিয়ে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটবে। এ সড়ক দিয়ে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক থেকে শুরু করে ছোট-বড় সব ধরণে গাড়ী ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করছে। তিনি জানান, দুই লেন রাস্তার কাজ শেষ হলেও রাস্তার কার্পেটিংয়ের সময় ‘ছেব দিয়ে লেপ’ দেয়ার কারনে বৃষ্টির পানি পড়ে ছোট গর্তগুলো এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ রাস্তা সংস্কার কাজে উদাসীনতা দেখার ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট ছোট দুঘর্টনা।
সিলেট তামাবিল সড়কের সিএনজি অটোরিক্সা চালক একরামুল করিম জানান, বন্দরবাজার থেকে ধোপাদীঘিরপার পয়েন্ট ও হাফিজ কমপ্লেক্স থেকে সোবহানীঘাট ইবনে সিনা পয়েন্ট হয়ে শাহজালাল ব্রীজ হয়ে হুমায়ুন রশীদ চত্তর পর্যন্ত রাস্তায় ছোট-বড় গর্ত ও ভাঙাচোরা হয়ে যাওয়া গাড়ী নষ্টের পাশাপাশি যাত্রীদের গালমন্দ শুনতে হয়। প্রায় প্রতিটি সড়কের বেহাল অবস্থা। এছাড়া ধোপাদীঘির পূর্বপারের হাফিজ কমপ্লেক্সে মন্ত্রীর বাসার সামনে বড়-বড় গর্ত রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি প্রতিনিয়ত রিক্সা, অটোরিক্সা ও মোটর সাইকেল এই গর্তে পড়ে গিয়ে ঘটছে আরোহী ও যাত্রীদের দুঘর্টনা। এখন একেকটি রাস্তা হয়ে উঠেছে মরণ ফাঁদ। এসব রাস্তায় দিয়ে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নগরবাসী ও গাড়ী চালকরা।
ভুক্তভোগিদের দাবী, সবকটি রাস্তার বেহাল দশায় দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর নিরুপায় হয়ে এবার সড়ক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছেন তারা। ভাঙাচোরা রাস্তাগুলো দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে রাস্তায় আন্দোলনে নামতে হবেন তারা।
হুমায়ুন রশীদ চত্তর সিএনজি অটোরিক্সা স্ট্যান্ডের চালক সাদেক আহমদ জানান, আমরা মহানগরীতে গাড়ী বেশী চালিয়ে আসছি। প্রতিটি রাস্তা ছোট-বড় গর্ত হয়ে রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে দু’দিন পরপর গাড়ী বেয়ারিং পাল্টাতে হয়। এছাড়া গাড়ী চালাতে গিয়ে যাত্রীদের অসংখ্য ঝাঁকুনি খেতে হচ্ছে। অনেক রোগী যাত্রীদের নিয়ে গাড়ী চালাতে হিমশিম খেতে হয়। ফলে সংশ্লিষ্টরা নগরীর যত সম্ভব দ্রুত রাস্তাগুলোর সংস্কার করা জরুরী বরে তিনি মনে করছেন।
সিলেট নগর এক্সপ্রেসের চালক ইয়াকুব আলী জানান, রাস্তা ভাঙ্গা থাকায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হচ্ছে গাড়ীর। যাত্রীদের ঝাঁকুনিতে কষ্ট হয়। অনেকেই গাড়ীর ভেতরে গালিগালাজ করেন। কোর্ট পয়েন্ট টু বটেশ্বর যাওয়া-আসার পথে রাস্তায় অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত ও ভাঙাচোরা থাকায় গাড়ী চালাতেও কষ্ট হয়। একটু অসচেতন হলে গাড়ী উল্টে যাওয়া উপক্রম হয়। তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব রাস্তাগুলো সংস্কার হওয়া দরকার।
কোর্ট পয়েন্টের সিলেট নগর এক্সপ্রেসের ম্যানেজার তাপস রঞ্জন তালুকদার দৈনিক কাজিরবাজারকে জানান, নগরীতে ১৬টি নগর এক্সপ্রেস গাড়ী চলে। এ গাড়ীগুলো, কোর্ট পয়েন্ট থেকে টুকেরবাজার, বটেশ্বর, দক্ষিণ সুরমার হেতিমগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা কদমতলী হয়ে মোগলাবাজার ও সালুটিকর সড়কে চলছে। এসব রাস্তায় গর্ত ও ভাঙ্গাচোরা থাকায় চালকরা আমার কাছে অনেক সময় অভিযোগ করে থাকেন। তাই দ্রুত এসব রাস্তা সংস্কার করা প্রয়োজন।
জিন্দাবাজার মুক্তিযোদ্ধা শাখার কোর্ট পয়েন্ট-সুরামা পয়েন্ট সিএনজি অটোরিক্সা স্ট্যান্ডের ম্যানেজার জাহেদ আহমদ, নানু মিয়া ও বাহার উদ্দিনরা জানালেন, ২৬০০ সিএনজি অটোরিক্সার মধ্যে বর্তমানে সর্বমোট প্রতিদিন এই শাখার ২০০ গাড়ী সিলেট-সুনামগঞ্জ রোডের সুবিদবাজার, পাঠারটুলা ও টুকেরবাজার রাস্তায় চলে। এসব রাস্তার অবস্থা বেহাল। পাঠানটুলা এলাকার সমস্ত রাস্তাটিই ভাঙা। আর এই ভাঙা সড়ক দিয়ে প্রতিদিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য গাড়ী। তাই কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০টি গাড়ী প্রতিদিন গ্যারেজে যেতে হয়। এর ফলে গাড়ী না পাওয়ায় স্ট্যান্ডে যাত্রীরা ভিড় করেন। তখন আমরা ৪ জন ম্যানেজার থাকা সত্ত্বেও এসব যাত্রীদের কন্ট্রোল করা সম্ভব হয় না। তাই দ্রুত এসব রাস্তার মেরামত করা জরুরী।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের চীফ ইঞ্জিনিয়ার মো: নূর আজিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করে নগরীতে কবে নাগাদ খোড়াখুড়ি বন্ধ হবে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, পানির লাইন লিক হয়ে যাওয়ায় রাস্তা খোড়া হচ্ছে। এটা কবে নাগাদ শেষ হবে তা এ মুহূর্তে নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আর নগরীর সড়কের ছোট-বড় গর্ত ও ভাঙাচোরা রাস্তা রয়েছে এটা বৃষ্টি না কমলে সংস্কার কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া নগরীর বড় বড় রাস্তাগুলোর কাছ সড়ক ও জনপদ (সওজ) করে থাকে। তিনি দৈনিক কাজিরবাজারকে বলেন, নগরীর যতস্থানে সিসিকের আওতাধীন গর্ত ও ভাঙাচোরা রাস্তা আছে আমরা সেসব রাস্তাগুলো পরিদর্শন করা হবে এবং রাস্তা চলাচলের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।