বিনিয়োগ পরিবেশ আরও আকর্ষণীয় করতে হবে – প্রধানমন্ত্রী

6
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিআইডিএ) এর গভর্ণি বোর্ডের সভায় “Bangladesh Investment Handbook A Guide For Investors” শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস মহামারী সঙ্কটের মধ্যেও বিদেশী বিনিয়োগ আনতে প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোকে কাজে লাগাতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, করোনার সমস্যার মধ্যেও আমাদের বসে থাকলে চলবে না। পর্যাপ্ত বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে সবাইকে কাজ করতে হবে। দেশের অর্থনীতি যাতে আরও এগিয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের বিনিয়োগ পরিবেশ আরও আকর্ষণীয় করতে হবে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)’র গভর্ণিং বোর্ডের সভায় প্রারম্ভিক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিডার এই গভর্ণিং বোর্ডের সভায় যোগ দেন। করোনা সঙ্কটের মধ্যেও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসে একটা ধাক্কা এসেছে এটা ঠিক। আবার সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। কাজেই কারা বিনিয়োগ করতে চায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে সেই বিনিয়োগ যাতে আমাদের দেশে আসে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, আজকে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ থাকলেও করোনা ভাইরাসের কারণে সবদেশেরই সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু এই সমস্যার মধ্যে দিয়েই কিভাবে আমাদের দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের কাজ করতে হবে। করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বিনিয়োগের সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের বসে থাকলে চলবে না। সীমিতভাবে হলেও আমাদের কাজ করতে হবে। বাংলাদেশে বিনিয়োগে সুবিধা ও সম্ভাবনার কথাও সভায় তুলে ধরেন সরকার প্রধান।
প্রধানমন্ত্রী দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে সবাই কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের আরও ইনভেস্টমেন্টটা আনতে হবে, এটা সুযোগ আছে। অনেক দেশে এখন ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ। আমাদের জনসংখ্যা আছে, জমি তৈরি আছে, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আছে। এই সুযোগটায় আমরা কিন্তু ইনভেস্টমেন্ট আরও আকর্ষণীয় করতে পারি এবং আনতে পারি; আমাদের সেই সুযোগটা রয়েছে। সেই সুযোগটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে। আমাদের বিনিয়োগ পরিবেশটাকে আকর্ষণীয় করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতিসংঘ নির্ধারিত এমডিজি খুব দক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছি। এখন এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। যে কারণে, ইতোমধ্যে আমরা কতগুলো বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। যার মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন অন্যতম। অবকাঠামো উন্নয়ন না হলে দেশে কখনও বিনিয়োগ আসতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে নৌপথ, রেলপথ, আকাশপথে যোগাযোগ উন্নত করার জন্য তার সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাত উল্লেখ করে দেশে এক সময় বিদ্যুৎ খাতে অব্যবস্থাপনা এবং সীমিত উৎপাদনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা আমাদের ছিল, কিন্তু আজকে বিদ্যুৎ আমাদের উদ্বৃত্ত আছে। গ্যাসের সমস্যা সমাধানে নিজেদের গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থার পাশাপাশি সরকার এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিনিয়োগের জন্য যেসব পদক্ষেপ তার সরকার নিয়েছে তার সুফল মানুষ পেতে শুরু করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা কর অবকাশের সুবিধা দিয়েছি, সমগ্র বাংলাদেশে এক শ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, উন্নয়নটা যাতে একটা জায়গায় না হয়ে সমগ্র বাংলাদেশে হয় সে ব্যবস্থা তার সরকার নিয়েছে। যেখানে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ সহজে করা যাবে এবং শ্রমিকও খুব সহজে পাওয়া যাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করতে কর রেয়াত দেয়া হচ্ছে, মূলধনী সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ আমরা দিচ্ছি। তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে দেশে ইতোমধ্যে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে আসা সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ ২ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, সবকিছু সহজ করার জন্য আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ব। সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ করতে পেরেছি বলেই আজকে আমরা এই রকম একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও এখানে বসে বিডার গভর্ণিং বোর্ডের সভা করতে পারছি। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের একটা ধাক্কা আমাদের এসেছে এটা ঠিক কিন্তু আবার একটা সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। সেটা কিন্তু মাথায় রাখতে হবে।
মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিনিয়োগকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য ‘বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজনের যে পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে পরিবর্তিত করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটা ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে করার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি প্রাপ্ত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলায় আত্মনিবেদনের জন্যও সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভর্ণিং বোর্ডের সভায় গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে বিডার গভর্ণিং বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ফজলে কবির, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন এবং সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব মোঃ শহিদুজ্জামান, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ উমেন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট বেগম সেলিমা আহমাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।