শাবিতে টিলা কেটে হল নির্মাণ, মানতে নারাজ প্রশাসন

11
শাবিতে টিলা কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে হল।

শাবি থেকে সংবাদদাতা :
সবুজে ঘেরা নয়নাভিরাম টিলার অংশ কেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য আবাসিক হল নির্মাণ করা হচ্ছে। টিলা কাটার আগে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হলেও এ সংক্রান্ত কোনো প্রকার অনুমোদন পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে নেয়া হয়নি বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
টিলা কেটে হল নির্মাণ করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনা করছেন শিক্ষার্থীরা। চাইলে টিলার অংশ না কেটেও হলের নির্মাণ কাজ করা যেতো বলে জানিয়েছেন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া নকশা অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে টিলা কাটতে হচ্ছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা। ২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা বাজেটের এই হলের নির্মাণ কাজ পরিচালনা করছেন মেসার্স সিএফ কর্পোরেশন, যারা এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এম ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের কাজ করেছিল।
বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হল ও শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হলের মধ্যবর্তী টিলা সংলগ্ন জমিতে নির্মিত হচ্ছে আরেকটি ছাত্রী হল। সেখানে টিলার একাংশ বুলডোজার মেশিন দিয়ে কেটে পাশের জমিতে ফেলা হচ্ছে। ওই মাটি দিয়ে ছাত্রী হলের জন্য নির্ধারিত অংশের নিচু জায়গা সমান করছেন শ্রমিকেরা।
বৃহস্পতিবার (২৩ই জুলাই) সরেজমিনে দেখতে গেলে প্রথমে প্রতিষ্ঠানের ইনচার্জ হেদায়াতুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বাধা দিয়ে বলেন, ‘ভিসি স্যারের অনুমতি ছাড়া এখানে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।’ পরে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “হল তৈরীর জন্য নির্ধারিত লে-আউটেই উক্ত টিলার পাদদেশের কিছু অংশ আছে। শুধুমাত্র টিলার পাদদেশের সম্মুখভাগ কেটে ফেলা হচ্ছে, স¤পূর্ণ টিলা কাটা হচ্ছে না। তাছাড়া বৃষ্টির পানিতে এমনিতেই টিলা ধসে পড়ে যায়, টিলার ওই অংশ কেটে সিমেন্টের বাউন্ডারী দিলে টিলা ধস কমে যাবে।”
টিলার অংশ কাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা বিশ^বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অংশ, আর পুরো অংশ কাটা হচ্ছে না বলে আমরা কোন অনুমতি নেইনি।’
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (২০০০ সালে সংশোধিত) অনুসারে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া পাহাড় কাটা অবৈধ।
পরিবেশ অধিদপ্তর, সিলেট এর পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, ‘শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয় থেকে পাহাড় বা টিলা কাটার কোন অনুমতি নেওয়া হয় নি, কিন্তু আমি বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রারের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি সেখানে টিলা কাটা হচ্ছে না, আগে থেকে জমাকৃত মাটি সরানো হচ্ছে। তবুও আমি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি, কিন্তু তার ফোন বন্ধ।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জিয়োগ্রাফী এন্ড এনভাইরনমেন্ট’ বিভাগের প্রধান মো: ম্যুয়িদ হাসান বলেন ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অবকাঠোমো তৈরীতে অবশ্যই তারা পরিমাপ করে তৈরী করছে, যেহেতু আমরা বিষয়টি দেখি নাই তাই মন্তব্য করতে পারছি না।’
টিলা কাটার বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে। মায়া বিশ্বাস নামের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এটাই বাকি ছিলো, পরিবেশ প্রকৃতি সংরক্ষণে যাদের ভূমিকা রাখার কথা ছিলো তারাই চলছে এখন উল্টোপথে।’
আমিনুল ইসলাম তানিম নামের একজন লিখছেন, ‘ইশ!!মানুষের বিবেকবুদ্ধি কোন লেভেলে গেলে এমন করে! যা দেখলাম জায়গার অভাব নাই আমাদের সাস্টে। বি বিল্ডিং এর টংগুলার পিছনে বা সেন্ট্রাল মসজিদের পিছনে এত খালি জায়গা রাইখা টিলা কাটা শুরু করছে উন্নয়নের নাম দিয়ে! … ক্যা¤পাস বন্ধের ফায়দা সুদে আসলে লুটে নিচ্ছেন আপনারা’
এই বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিষ্টার, প্রধান প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল)’র সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে কেউ ফোন ধরেন নি।
তবে সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যে স্থানটি কাটা হচ্ছে সেটি আদৌ টিলা নয়, সেটা একটা মাটির ডিবি। টিলা বলতে যা বোঝায় তার মধ্যে সেই স্থানটি পড়ে না। ওই স্থান থেকে টিলা অনেক দূরে অবস্থিত। আমরা বরাবরই পরিবেশ রক্ষায় রক্ষায় সচেতন। একটি অসাধু চক্র এই বিষয়টাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। টিলা কেটে পরিবেশ বিপন্ন করার মত কোন কাজই আমরা করবো না। ইতিমধ্যে আমি জায়গাটির ছবি ও ভিডিও তুলে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি এবং তাদেরকে এই জায়গাটি স¤পর্কে বলেছি। আমরা আশা করছি এই মাটির স্তুপ কাটার ফলে পরিবেশের উপর বিরূপ কোন প্রভাব পড়বে না।’