গোয়াইনঘাটে তৃতীয় দফা বন্যা, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

20
গোয়াইনঘাটে বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

কে.এম লিমন গোয়াইনঘাট থেকে :
ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গোয়াইনঘাটে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। নদ-নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দফায় দফায় বন্যার কবলে পড়ে উপজেলাবাসীর মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। বসত বাড়ি, রাস্তাঘাটে পানি উঠে জনসাধারণের অনেক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।
চতুর্থ বারের মতো পানি বৃদ্ধি পেয়ে মানুষের বসত বাড়িসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠায় এক ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
এছাড়াও বসত বাড়িতে পানি উঠায় পানিবন্দি হয়ে অনেকেই তাদের গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন। পানি বেড়ে যাওয়ায় গোয়াইনঘাটে আবারও বন্যার আশঙ্কায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন উপজেলার মানুষ। আর তৃতীয় দফা বন্যার ধকল এখনো কাটিয়ে না উঠতেই চতুর্থ দফা বন্যার আশঙ্কা তাদেরকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় অনেক মানুষ সকাল থেকে আবারও বাড়ি-ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটতে শুরু করেছেন।
উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যার ফলে সারী-গোয়াইনঘাট ও রাধানগর-গোয়াইনঘাট এবং সালুটিকর গোয়াইনঘাট সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে ডাউকি নদীর প্রবল স্রোতে নদীর তীরবর্তী এলাকার কয়েক জায়গায় ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে।
পাহাড়ে বৃষ্টিপাত হলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদি পরিস্থিতি আরও অবনতি হয় তাহলে মানুষের জান মাল রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্লাবিত এলাকার ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে, দফায় দফায় আকস্মিক বন্যায় জাফলং ও বিছনাকান্দি কোয়ারি সংশ্লিষ্ট কয়েক সহস্রধিক পাথর ও বালু শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে পড়েছেন চরম বিরম্বনায়।
জানা যায়, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে থাকে। সারী, গোয়াইন, ডাউকী ও পিয়াইন নদীতে পানি হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। উপজেলা সদরের প্রধান তিনটি সড়কসহ তলিয়ে যায় গ্রামীণ জনপদের অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েন প্রায় সহস্রধিক পরিবার। বসত বাড়ি প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি কৃষকের আউশ ধান, বোনা আমন, আমন ধানের বীজ তলা এবং সবজি ক্ষেতসহ প্রায় ৩ হাজার ৯’শ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে ফসলি জমি নিমজ্জিত হওয়ার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সুলতান আলী জানান, পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দেয়ায় উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে আউশ ধান, বোনা আমন ও আমন ধানের বীজতলা এবং সবজি ক্ষেতসহ সব মিলিয়ে প্রায় ৩হাজার ৯শ’ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হওয়ার খবর পেয়েছি। একই সাথে ৩০ হেক্টর বীজতলা পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে।
তবে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে এর পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি। বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে কথা হলে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুস সাকিব বলেন, দফায় দফায় ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে ডাউকি, গোয়াইন এবং সারী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সবকটি ইউনিয়নের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। পাশাপাশি পানিবন্দি মানুষজনের জন্য ত্রাণ সহায়তার জন্য প্রত্যেকটি ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়া অব্যাহত রয়েছে।