তিন দলের ক্রিকেটে ডি ভিলিয়ার্স ঝড়, দলকে জেতালেন স্বর্ণপদক

6

স্পোর্টস ডেস্ক :
জাতীয় দলের জার্সি তুলে রেখেছেন অনেক আগেই। কিন্তু করোনাকালে দক্ষিণ আফ্রিকার আবিষ্কৃত নতুন ক্রিকেট ফরম্যাট ‘তিন দলের ক্রিকেট’ দিয়ে সেই এবি ডি ভিলিয়ার্সকে দেখা গেল জাতীয় দলের খুব কাছে। এমন ফেরার দিনে ব্যাট হাতে বেশ চমকই দিলেন সাবেক প্রোটিয়া অধিনায়ক। ব্যাট হাতে তুললেন ঝড় আর দলকে স্বর্ণপদক জয়ে দিলেন নেতৃত্বও। কে বলবে এতদিন পর ব্যাট হাতে নিয়েছেন এই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান!
করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্যে তিন দলের ক্রিকেট নামে এক ‘নতুন সন্তান’ জন্ম দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ‘সলিডারিটি কাপ’ নামের এই টুর্নামেন্টের একমাত্র ম্যাচটি এরইমধ্যে শনিবার (১৮ জুলাই) সেঞ্চুরিয়ন পার্কে গড়িয়েছে। ম্যাচের শুরুতে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের সমর্থনে সবাই হাঁটু গেড়ে বসেন, যাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রোটিয়া অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ, সাবেক ফাস্ট বোলার মাখায়া এনটিনিও।
‘অদ্ভুত’ এই ম্যাচটি ৩৬ ওভারের, যেখানে তিন দল দুই ভাগে ৬ ওভার করে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছে। প্রতি দল একবার করে ব্যাট করার পর যে দল নিজেদের প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করেছে তারা আবার শুরুতে ব্যাট করেছে। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দল ব্যাট করার পর দুই ইনিংস মিলিয়ে সর্বোচ্চ রান করা দল জিতেছে স্বর্ণপদক।
ম্যাচের নিয়ম অনুযায়ী, খেলা শুরুর আগে ড্র’র মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয় কোন দল ব্যাট করবে, কোন দল ফিল্ডিং করবে আর কোন দল গ্যালারিতে বসে খেলা দেখবে। করোনা সংক্রমণের কথা চিন্তা করে খেলায় কোনো দর্শক রাখা হয়নি।
প্রতি ইনিংসে ৬ জন করে ফিল্ডার ফিল্ডিংয়ে নামতে পেরেছেন। পুরো মাঠ ৬ জোনে ভাগ করা হয়। প্রতি জোনে একজন করে ফিল্ডার। সবাই বাউন্ডারি লাইনে প্রতি দলের একজন বোলার সর্বোচ্চ ৩ ওভার বল করার সুযোগ পেয়েছেন।
প্রতি দলে খেলেছেন ৮ জন করে ক্রিকেটার। শেষ ব্যাটসম্যান ক্রিজে থেকে গেছেন এবং আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যাট করে গেছেন। যদি প্রথম ইনিংস শেষে কোনো দলের সপ্তম উইকেট পড়ে যায়, তাহলে শেষ ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় ইনিংসে শুরু থেকে ব্যাট করবেন।
শনিবারের ম্যাচে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৬৬ রান করা ঈগলস দ্বিতীয় ইনিংসের ৬ ওভারে আরও ৯৪ রান যোগ করেছে, দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৬০ রান করা ঈগলস জিতেছে স্বর্ণপদক। ১৩৮ রান করা কাইটস রৌপ্য এবং ১১৩ রান করা কিংফিশার জিতেছে ব্রোঞ্জ।
শুরুতে নতুন নিয়মের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে কিছুটা অসুবিধা হলেও একবার খাপ খাওয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স, এইডেন মার্করাম, প্রিটোরিয়াস এবং স্মাটস। বিশেষ করে মার্করাম ও ডি ভিলিয়ার্স ছিলেন সবচেয়ে বিধ্বংসী। একই দলের দুই ব্যাটসম্যান প্রতিপক্ষের বোলারদের নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলা করেছেন।
৩৩ বলে ৭০ রান করেছেন মার্করাম। ২৪ বল মোকাবিলা করে ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাট থেকে এসেছে ৬৪ রান। এর মধ্যে তিনি ২১ বলে ছুঁয়েছেন ফিফটি। তার এমন দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ভর করেই ১২ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৬০ রানের পাহাড় গড়ে ঈগলস। ১১তম ওভারে এনরিক নোর্তজের বলে আউট হওয়ার আগে ক্রিজের চারদিকেই শট খেলেছেন তিন দলের এই ম্যাচ থেকে প্রাপ্ত আয় করোনায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ক্রিকেটারদের জন্য ব্যয় করা হবে। এর আগে গত ২৭ জুন ম্যাচটি আয়োজনের দিন-তারিখ ঠিক করা হলেও খেলোয়াড়দের অনুশীলন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা চিন্তা করে সে সময় অনুমতি দেয়নি দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার।
তবে সব সংশয় পেছনে ফেলে গত সোমবার অনুশীলনে নামে তিন দল। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন মেন্ডেলার ১০২তম জন্মবার্ষিকীতে অনুষ্ঠিত হয় ম্যাচটি। দক্ষিণ আফ্রিকার শীর্ষ ২৪ জন ক্রিকেটার অংশ নেন এতে।
ম্যাচের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। দীর্ঘ বিরতির পর ফিরেই নিজের পুরনো রূপে দেখা দিলেন তিনি। এই ম্যাচে ঈগলসের নেতৃত্বে ছিলেন দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরির মালিক। রিজা হ্যানড্রিকস ছিলেন কিংফিশারের নেতৃত্বে এবং কাইটসের অধিনায়ক ছিলেন টেম্বা বাভুমা। যদিও শুরুতে শেষ দুই দলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল কাগিসো রাবাদা ও কুইন্টন ডি ককের। কিন্তু স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে দুজনেই শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ান।