নগরীতে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই, সবখানেই মানুষের উপচেপড়া ভিড়

25
বাজারের চিত্র দেখে বুঝার উপায় নেই দেশে করোনা মহামারি চলছে। ছবি- মামুন হোসেন

সিন্টু রঞ্জন চন্দ  :
সিলেটে দিন দিন বেড়েই চলেছে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। স্বাস্থ্যাবিধি না মেনে প্রতিদিন ফুটপাত-বাজার, শপিংমহল, পর্যটনস্থান ও রাস্তা-ঘাটে তীব্র যানজটসহ মানুষ জনের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
সচেতনমহল মনে করছেন, প্রথম দিকে যেভাবে লোকজন যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছে তার চার ভাগের একভাগও এখন মানছে না। এ যেন এখন করোনা ভাইরাস এখন যেন ডাল-ভাতের মতো হয়ে গেছে। সরকার যদি আসন্ন ঈদের আগে এই পরিস্থিতির উত্তরণ না ঘটায় তাহলে দেশে বর্তমান মৃত্যুর হার আরোও বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন-চলতি মাসে দেশে আগের চেয়ে করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণের সংখ্যা বেড়ে গেছে। আগে প্রতিদিন গড়ে সব শ্রেণী পেশার লোকজন তিন থেকে চারবার সাবান দিয়ে হাত ধৌত করতো এখন আর হাত ধৌত করছে না। এমনকি এখন বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে মানুষজন মাস্ক পড়ছেন না। দু’জন তিনজন করে একসাথে রাস্তা চলছেন একে অন্য জনের সাথে কথা বলছেন মাস্ক না পড়ে। ফলে রোগ বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোট কথা ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা ছাড়া কোনোভাবেই করোনা ভাইরাস মোকাবেলা সম্ভব নয়।
জানা গেছে, সিলেট পর্যটন এলাকা হওয়ায় লোকজন এ জেলায় ছুটে আসছেন। এছাড়া সিলেট নগরীর কীন-ব্রীজ, কাজিরবাজার ব্রীজে আগের মতোই বিকেলে ভিড় হচ্ছে। সেখানে নেই কোন স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম। প্রশাসনও নিরব ভূমিকা পালন করছে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় চোখে পড়ছে উদাসীনতা। এছাড়া বাজার, চায়ের দোকান, সেলুন, গণপরিবহনে অনেকেই সামাজিক দূরত্ব মানছেন না, পরছেন না মাস্ক ও হাতে গ্ল্যাভস। এমনকি হাসপাতালেও মিলেছে এমন চিত্র।
নগরীর দক্ষিণ সুরমা হুমায়ুন রশীদ চত্ত্বরে সিএনজি অটোরিক্সার এক যাত্রী জানান, যেভাবে উঠছি সেটা কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। কাজে যেতে হলে এটা আমাকে করতেই হচ্ছে।
নগরীর কালিঘাট পাইকারি ও বন্দরবাজার খুচরা বিক্রির বাজার শত শত মানুষের ভিড়। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই মানছেন না সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধি। বাজারগুলোর দৃশ্য দেখে কেউ বলবে না সেই এলাকায় করোনা সংক্রমণ রোগী নেই। এ ছাড়া নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় ফুটপাতেও একই অবস্থা।
এদিকে, আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকলেও অনেকেই যাচ্ছেন এলাকার সেলুনে। সেখানেও বসার আসন আর সরঞ্জামাদি জীবাণুমুক্ত না করেই চলে চুল-দাড়ি কাটা। একই অবস্থা পাড়ার-মহল্লার চায়ের দোকানেও। পাশাপাশি বসে আড্ডা, নামকাওয়াস্তে পানিতে ধুয়ে অন্যের চুমুক দেয়া কাপেই তুলে চারদিকে করোনা ভাইরাসের থাবা। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে একটু সুযোগ পেয়েই বেরিয়ে পড়েছেন অনেকেই। এরা কেউই সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না। এমন চিত্র সিলেট মহানগরীর বাজার, ফুটপাতের বাজার, শপিংমহল ও রাস্তা-ঘাট এমনকি যানবাহনে।
বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মাস্কও পরতে দেখা যায়নি বেশিরভাগ ক্রেতাদের। কারও কারও থাকলেও তা হাতে কিংবা গলায় ঝোলানো দেখা গেছে। আবার কেউ কেউ জানিয়েছেন, মাস্ক বাসায় রেখে এসেছেন। অথচ সামাজিক দূরত্ব না মেনে কাছাকাছি ও ভিড় টেলে বাজার করছেন লোকজন।
কাজিরবাজার ব্রীজে সরেজমিনে দেখা গেছে, মানুষের ভিড়, সামাজিক দূরত্ব মানার বালাই নেই। এখানে আগত নারী-পুরুষ-যুবক-যুবতীরা নিজেদের ইচ্ছে মতো চলাফেরা করছেন। উন্মুক্ত ও খোলা বাতাস উপভোগ করতে আবার কেউ কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছেন। কেউ কেউ এসেছেন ব্যক্তিগত গাড়ি বা মোটরসাইকেল নিয়ে। যারা একটু দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছেন আবার কেউ কেউ বিরক্তি প্রকাশ করছেন।
এ ব্যাপারে ঘুরতে আসা মো: লিমন মিয়া বলেন, এই ব্রীজের উপর মুক্ত হাওয়া। এই হাওয়া খেতে এখানে আসা। এত দিনতো ঘরেই বসে থাকলাম।
মুখে মাস্ক ও হ্যান্ড গ্ল্যাভস পরে ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, নদীর ওপরে ব্রীজ হওয়ায় এখানকার দৃশ্য অপরূপ লাগে। তাই প্রায় সময় এখানে ঘুরতে আসি। অনেক ভালো লাগে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে গত কয়েকদিন আসিনি। কিন্তু মানুষের মাঝে সচেতনতা না দেখে হতাশ হয়েছি।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে এ ব্যাপারে সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মন্ডলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসে মাস্ক ও হ্যান্ড গ্ল্যাভস ছাড়া আপনারা ঘরের বাহিরে বের হবেন না। তা না হলে নিজের, পরিবার ও আশাপাশের মানুষের মরণ ডেকে আনার সামিল। অবশ্যই বাহিরে বের হতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কারণ করোনাভাইরাসে গণসচেতনতার কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যবিধি যারা মানছেন না তারাই করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছে। তাই আমার অনুরোধ থাকবে প্রতিটি মানুষের প্রতি করোনা ভাইরাসে অবহেলা ও অসচেতনতা না থেকে ভিড়কে এড়িয়ে চলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। আর বার বার সাবান দিয়ে হাত ধৌত করুন ও পরিস্কার পরিরচ্ছিন্ন থাকুন। তবেই এই করোনা ভাইরাস রোধ করা সম্ভব হবে।